সব আন্তর্জাতিক বিরোধ নিষ্পত্তি ও সংঘাত রোধ করুন: প্রধানমন্ত্রী

বিফল হতে থাকা বিশ্বশান্তি নিশ্চিত করার জন্য সব আন্তর্জাতিক বিরোধ নিষ্পত্তি ও সংঘাত রোধে বিশ্বনেতাদের অবশ্যই অঙ্গীকার করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, সন্ত্রাসীদের অর্থায়নের প্রবাহ এবং অস্ত্র ও সরঞ্জাম সরবরাহের উৎস বন্ধের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদের মতো উঠতি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জও বিশ্বনেতাদের মোকাবেলা করতে হবে।

বর্ণবাদবিরোধী সংগ্রামী নেলসন ম্যান্ডেলার ১০০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার জাতিসংঘ সদরদপ্তরের সাধারণ অধিবেশন হলে আয়োজিত নেলসন ম্যান্ডেলা শান্তি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্র অর্জন, সহনশীলতার প্রসার, বৈচিত্র্যতা রক্ষা এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের বৈষম্য ও শোষণ থেকে রক্ষার জন্য সহযোগিতা জোরদার করার আহ্বান জানান।

এছাড়া তিনি বিশ্বনেতাদের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, যেকোনো পরিস্থিতিতে মানবাধিকার রক্ষা ও প্রসার এবং শান্তি ও অহিংসার সংস্কৃতি লালন করার আহ্বান জানান।

‘শান্তি এখনো আমাদের অধরা। সংঘাত সমাধানের পথ থেকে অনেক দূরে। নেলসন ম্যান্ডেলার মতো নেতারা যার জন্য লড়াই করেছিলেন সেই মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা এখনো নিশ্চিত হয়নি। বিশ্বের অনেক অঞ্চলের মানুষ ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে ভুগছে,’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

বর্ণবাদ, লোকরঞ্জনবাদ ও অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সমাজ তাদের জাতিগত ও ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে বৈষম্য, বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত, নির্যাতন এবং এমনকি গণহত্যার শিকার হচ্ছে।

মিয়ানমারে জাতিগত নির্মূলের হাত থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১০ লাখের অধিক রোহিঙ্গার দুরবস্থার বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ বিশ্বশান্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা বিশ্বের অনেক জায়গায় জীবন রক্ষায় কাজ করছে।

বাংলাদেশ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে শান্তির সংস্কৃতি রেজ্যুলেশন চালু করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

নেলসন ম্যান্ডেলা সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নেতা হিসেবে তিনি রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন। পরে জনগণের জন্য তার ত্যাগ, নিষ্ঠা ও সমবেদনা দিয়ে তিনি মানবতার অবিসংবাদিত নেতা হয়ে উঠেন। শান্তি, স্বাধীনতা ও ঐক্য ছিল তার আজীবনের মন্ত্র।

নেলসন ম্যান্ডেলার মতো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও বাঙালিদের অত্যাচারের হাত থেকে মুক্ত করে স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। তারা উভয়ে তাদের জীবনের দীর্ঘ সময় কারাগারে কাটিয়েছেন এবং নিজেদের জনগণের জন্য লড়াই করেছেন, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি জানান, বঙ্গবন্ধুকে ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ সালে বারবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কারাগারে থাকাকালে তিনি ডায়েরি ও কয়েকটি বই লিখেছেন। নেলসন ম্যান্ডেলার ‘লং ওয়াক টু ফ্রিডমের’ মতো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থে শান্তি এবং জনগণের ন্যায্য অধিকারের জন্য তার লড়াই লিপিবদ্ধ আছে।

নেলসন ম্যান্ডেলার স্বপ্ন পূরণে সবাইকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তথ্য-ইউএনবি।

আজকের বাজার/এমএইচ