সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব আইনের খসড়া অনুমোদন

সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব বা পিপিপি কর্তৃপক্ষের সাংগঠনিক কাঠামো এবং প্রস্তাবিত চাকরি প্রবিধানমালায় বিভিন্ন পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিধান রেখে বাংলাদেশ সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (সংশোধন) আইন ২০১৯ এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদের নিয়মিত বৈঠকে এটি অনুমোদন দেয়া হয়। সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, আইনে পিপিপি কর্তৃপক্ষের সাংগঠনিক কাঠামো এবং প্রস্তাবিত চাকরি প্রবিধানমালায় বিভিন্ন পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে। পিপিপি কর্তৃপক্ষের সরাসরি নিয়োগ দেয়া কর্মচারীদের চাকরির শর্তাবলী প্রবিধান দিয়ে নির্ধারিত হলেও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের আলাদা বিধানের কথা বলা হয়েছে। ফলে পিপিপি কর্তৃপক্ষ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে পারবে। আইনে অন্তর্ভুক্তির ফলে পিপিপিতে সব সময়ই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হবে। দক্ষ জনবল তৈরি না করে খসড়া আইনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে।

সচিব বলেন, জনগণের জীবনমান উন্নয়ন, আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি তরান্বিত করা এবং অবকাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার মধ্য দিয়ে বেসরকারি খাতের সাথে অংশীদারিত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব আইন, ২০১৫ তথা পিপিপি আইন প্রণয়ন করা হয়। পিপিপি আইনের বাস্তবায়ন পর্যায়ে লব্ধ অভিজ্ঞতার আলোকে উক্ত আইনে কতিপয় সংশোধন আবশ্যক মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় সে অনুযায়ী সংশোধন করা হয়েছে।

‘আইনে যা সংশোধন করা হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ‌্য হচ্ছে- পিপিপি আইন, ২০১৫’-এর ৮(২) উপ-ধারায় বোর্ড অব গভর্নরস-এর সভা বছরে অন্তত ছয়টি অনুষ্ঠিত হবে মর্মে উল্লেখ আছে। বছরে ছয়টি সভা আয়োজন সময় সাপেক্ষ এবং সভাপতিসহ সদস্যদের সার্বক্ষণিক ব্যস্ততার নিরিখে তা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। এই প্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত আইনে বোর্ড অব গভর্নরস-এর সভার সংখ্যা বছরে ৬টির স্থলে ১টি করার প্রস্তাব করা হয়েছে [প্রস্তাবিত আইনের ৩ ধারা) বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

তিনি আরেও বলেন, পিপিপি কর্তৃপক্ষের বোর্ড অব গভর্নরস-এর প্রথম সভায় উক্ত কর্তৃপক্ষের নির্বাহী বোর্ড গঠন করা হয়েছে। উপযুক্ত নির্বাহী বোর্ড-এর গঠন, দায়িত্ব ও সভা অনুষ্ঠান সংক্রান্ত বিষয়াদি বিদ্যমান আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে (প্রস্তাবিত আইনের ধারা-৪)।

উল্লেখ্য, পিপিপি আইনের ৯ ধারায় পিপিপি কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা ও কার্যাবলিতে ‘পিপিপি সম্পর্কিত নীতিমালা/প্রবিধি/নির্দেশনা/গাইডলাইন প্রণয়ন, অনুমোদন, গেজেটে প্রকাশ ও জারিকরণের বিষয় উল্লেখ আছে। উক্ত ধারায় নীতিমালা/প্রবিধি/নির্দেশনা ও গাইডলাইন-এর সঙ্গে কার্যপ্রণালী’ শব্দটি সংযুক্ত করা হয়েছে (প্রস্তাবিত আইনের ধারা-৫)।

পিপিপি কর্তৃপক্ষের সাংগঠনিক কাঠামোতে কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিধান রয়েছে। বিদ্যমান আইনের ১১ ধারায় পিপিপি কর্তৃপক্ষে সরাসরি নিয়োগকৃত কর্মচারীদের চাকরির শর্তাবলী প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত হবে মর্মে উল্লেখ আছে। কর্তৃপক্ষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে পৃথক বিধানাবলি সংযোজনের লক্ষ্যে এ পর্যায়ে বিদ্যমান আইনের ১১ ধারা সংশোধন করে শর্তাংশ হিসাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়াগের ক্ষেত্রে বোর্ড অব গভর্নরস কর্তৃক অনুমোদিত গাইডলাইন বা বিধান প্রযোজ্য হওয়ার বিষয় সন্নিবেশ করা হয়েছে (প্রস্তাবিত আইনের ধারা-৬]।

পিপিপি আইনের ১২ ধারায় চুক্তিকারী কর্তৃপক্ষ যে-সকল ক্ষেত্রে পিপিপি কর্তৃপক্ষের সহায়তা ও মতামত গ্রহণ করবে তা বর্ণিত আছে। উক্ত ধারায় পিপিপি প্রকল্প গ্রহণ হতে শুরু করে চুক্তি স্বাক্ষর পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপ ও চুক্তি সংশোধনের ক্ষেত্রে সহায়তার বিষয় উল্লেখ আছে। তবে অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা যায় যে চুক্তি স্বাক্ষরের পর তা বাস্তবায়ন ও সেবা প্রদান কার্যক্রম পরিবীক্ষণ (post contract monitoring) পর্যায়েও পিপিপি কর্তৃপক্ষের সহায়তা প্রয়োজন হয় যার উল্লেখ বিদ্যমান আইনে নেই। এ কারণে বিদ্যমান আইনে ১২(ছ) উপ-ধারা হিসাবে অংশীদারিত্ব চুক্তি সম্পাদনের পর চুক্তির আওতাধীন কার্যক্রমের পরিবীক্ষণ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পিপিপি কর্তৃপক্ষের মতামত ও সহায়তা গ্রহণের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে [প্রস্তাবিত আইনের ৭(খ) উপ-ধারা]।

‘পিপিপি আইন, ২০১৫’-তে জি-টু-জি প্রকল্পের বিষয়ে কোন বিধান ছিল না। কিন্তু ‘পিপিপি আইন, ২০১৫’ প্রবর্তিত হওয়ার পর সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে পিপিপি প্রকল্প (জি- টু-জি পিপিপি) বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ইতিমধ্যে ‘Policy for Implementing PPP Projects through Government to Government (G2G) Partnership, 2017′.45 আওতায় জাপান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া ও দুবাই-এর সঙ্গে সমঝোতা/সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। অন্যান্য দেশও এই প্রক্রিয়ায় প্রকল্প গ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জি-টু-জি প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের বিষয় অন্তর্ভুক্তকরণের লক্ষ্যে বিদ্যমান আইনে ২(ক), ১৩(৩) এবং ১৩(৪) উপ-ধারা সংযোজন করা হয়েছে (প্রস্তাবিত আইনের ধারা-৮)।

পিপিপি চুক্তি স্বাক্ষরের পর প্রকল্প বাস্তবায়ন ও সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারি সংস্থাসমূহের সার্বিক সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। এ কারণে পিপিপি চুক্তি সম্পাদনের পরে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকে প্রকল্প বাস্তবায়নে বেসরকারি অংশীদারকে সহায়তা প্রদান করার লক্ষ্যে বিদ্যমান আইনে ২৩(২) উপ-ধারা সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে (প্রস্তাবিত আইনের ধারা-৯)।

মন্ত্রিসভার বৈঠকে জাসদ নেতা সংসদ সদস্য মইন উদ্দীন খান বাদলের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়।

আজকের বাজার/এমএইচ