সরকারের পলিসির ওপর নির্ভর পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা

শামসুল হুদা : বর্তমান মার্কেট পরিস্থিতি ভালো। তার কারণটা দেখেন, স্টক মার্কেটটা যখন ভালো থাকে তখন সবাই ভালো বলে। সব শেয়ারের দাম একদম বেড়ে যাবে সেটা কিন্তু ভালো না। এখন মার্কেট কী হচ্ছে? একদিকে গড়তেছে আরেকদিকে পড়তেছে। এটাই পুঁজি বাজারের আসল চেহারা। সঞ্চয়পত্রের হার উচ্চ অবশ্য। এখানে সরকার স্ট্যান্ড নিচ্ছে যে সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য বা আমাদের এমপ্লয়িদের যে বেনিফিটেড অলটারনেটিভ আছে, রিটায়ারমেন্ট বেনিফিট। আমাদের এখানে কোনো পলিসি নাই। কিন্তু সরকার চাচ্ছে যে বন্ডগুলো আছে, সেগুলো দিয়ে আমরা ম্যানেজ করবো। দ্যাটস ফাইন। ম্যানেজ করার জন্য আমাদের প্রোপার পলিসি দরকার। সেটা করতে পারে সরকার।

এখন প্রোপার পলিসিটা কী? প্রোপার পলিসিটা হলো গভর্মেন্ট বেধে দেয় একজন চাকুরীজীবী একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ বা তার বেতনের কত পারসেন্ট সে গভর্মেন্ট সঞ্চয়পত্রে ইনভেস্ট করতে পারবে। সেখানে তাকে যদি উচ্চ হারে সুদ দেওয়া হয়, সেখানে যদি বাধা না দেওয়া হয় তাহলে কী হবে? আপনার অন্য ফান্ডে তা ঢুকে যাবে। যেটা আলটিমেটলি গভর্মেন্টের যে উদ্দেশ্য সেটা সিটিজেন বেনিফিট বা এমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট বা রিটায়ারমেন্ট বেনিফিট যা-ই বলেন তা কিন্তু কার্যকর হচ্ছে না। সেখানে তা অন্যান্য ফান্ডে ঢুকে যাবে। যেখানে সঞ্চয়পত্রে উচ্চ হারে সুদ দিচ্ছে পনের পারসেন্ট যেটা অবশ্য গভর্মেন্ট দিতে পারে।  সিটিজেনশীপ এমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট বা আমাদের এখানে যেহেতু রিটায়ারমেন্ট বেনিফিট নাই শুধু গভর্মেন্টে আছে, প্রাইভেটে নাই। ইনডিভিজুয়ালি আমরা যদি রিটায়ারমেন্ট বেনিফিটের কথা চিন্তা করি, যেমন পেনশন সেখানে যদি উচ্চ হার সুদে পারটিসিপেন্ট হতে পারে। কিন্তু সেখানে তাদের স্যালারির একটা অংশ যাবে। তাহলে যেটা হবে, ওই উচ্চ হারের সুদে গভর্মেন্টের যে ইন্টারেস্ট সেটা সাকসেস হবে। কিন্তু সেটা যদি না ঘটে তাহলে অন্যান্য ফান্ড এখানে ঢুকে যাবে। তাহলে আমরা যে সিঙ্গেল ডিজিটের ইন্টারেস্টে নামিয়ে আনতে চাচ্ছি সেটা ব্যাহত হবে। সেটা বন্ড মার্কেটে একটা ইমপ্যাক্ট করবে। সিঙ্গেল ডিজিটের ইন্টারেস্ট এবং পারস্পেকটিভলি যেটা ব্যাংক ইন্টারেস্ট।

ব্যাংকে আপনি বাড়িয়ে দিবেন। কিন্তু ওই পনের শতাংশ, যেটা আপনার সঞ্চয়পত্র সেটাকেও  আপনার রেগুলেশনের আওতায় আনতে হবে। আল্টিমেটলি পনের শতাংশ সঞ্চয়পত্র নিয়ে সরকারকে একটা বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হবে। পরে যখন প্রচুর পরিমানে টাকা ওখানে ঢুকে যাবে তখন সরকারের পে অব বাজেট অনেক হারে বেড়ে যাবে।  এখন এটাকে বড় কোন প্রভাব বলা যায়না, তবে অনেক বছর পর এটাই অনেক বড় প্রভাব হয়ে দাড়াবে।  সেজন্য সরকারের উচিত এটাকে একটা নীতিমালার মধ্যে আনা।

এক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের বেনিফিট দেওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট অংশ ব্যাতিত এই পনের শতাংশ ইনভেস্টের বন্ডে সে দিতে পারবে না। তাহলে আমাদের এখানে পপুলারিটি বাড়তেই থাকবে। যারা ব্যাংকে সঞ্চয় করতো তারাও বন্ড মার্কেটে আসবে। হয়তো ব্যাংকে পাঁচ শতাংশ দিচ্ছে সেখানে বন্ড মার্কেট ৬ বা ৭ বা ৮ শতাংশ দিবে। যা উন্নত দেশগুলোতে হচ্ছে। উন্নত দেশের ব্যাংকগুলো এফডিআর দেয়না।  সেখানে স্টেট বন্ড মার্কেটে ইনভেস্ট করতে হয়।  সেক্ষেত্রে আল্টিমেটলি বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো সার্ভিজ চার্জের দিকে এগিয়ে যাবে।

আমাদের দেশের বন্ড মাকের্টের জন্য সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন যে ‘অল্টারনেটিভ ট্রেডিং ব্যবস্থা’ চালু করতে চাচ্ছে, তা চালু হলে খুবই ভালো হতো। শুধু তাই নয় এ পদক্ষেপটা আরও অনেক আগে নেওয়া উচিত ছিলো। যত দূত সম্ভব এটাকে বাস্তবায়ন করা উচিত।  তাহলে হয়তো ওই সেক্টরে আমাদের ট্রেড বেড়ে যাবে। আমাদের দেশের মার্কেটে যে পরিমান ট্রেড হওয়ার কথা তা কিন্ত হচ্ছে না। যেমন- ওটিসি মার্কেট, ওটিসি মার্কেটে কোন বোর্ড নেই। ওটিসি মার্কেটের জন্য যদি কোন ইন্ডাস্টিজ বোর্ড থাকতো তবে শেয়ারগুলো লেনদেনটা অনেক বড় ও সচ্ছ হবে।

অন্যদিকে আমাদের দেশে অনেক প্রাইভেট শেয়ার লেনদেন হচ্ছে বা একজনের শেয়ার অন্যজনকে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে অথবা কিনে নিচ্ছে, এই শেয়ারগুলো অবশ্যই ওটিসি মার্কেটের মাধ্যমে আসা উচিত। কারণ, ‘অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে’ যে শেয়ারগুলো যাবে সেগুলো লো পেইড ধরনের শেয়ার। তাছাড়া সল্প সময়ে যে আমাদের এখানে যে সমস্ত ডিবেন্সার বা অপশন চালু করা উচিত। দেখবেন একটা খুবই ইম্পটেন্ট বিষয় যেটা ব্যাংক বা বরওয়ার ব্লক হয়ে যায়। বরওয়ার টাকাটা নিলো, সেখানে ব্যাংক আপনার ব্লক হয়ে গেল। তো ব্যাংক যদি তার লোন দেওয়া সেল করতে পারে, ডেট’টা যদি সেল করে ক্যাশ করে নিতে পারে অনেক শর্ট টাইম ডেট আছে সেগুলো ডিসকাউন্ট করে বিক্রি করে ক্যাশ করে নিতে পারে তাহলে আপনার ফান্ড ফ্লো বাড়বে। এগুলো আপনার স্টক এক্সেচেজ্ঞ কাজগুলোর ভিতরে বিশেষ কাজ।

আমরা তো শুধু এখন ইক্যুইটি মার্কেট নিয়ে আছি, কিন্তু এটা শুধু ইক্যুইটি মার্কেট নয়। ইক্যুইটি মার্কেট এ যে ফাংশনগুলা দেশের অর্থনীতিকে অনেক গতিশীল করবে যেমন আপনার রাস্তা ঘাট উন্নয়নে ব্যাংক শর্ট টাইম লোন দিয়ে বল্ক হয়ে গেলো। তার কাছে টাকা নাই কিন্তু সে যদি তার এই লোনটা ডিসকাউন্ট রেখে মার্কেটে বিক্রি করতে পারে তাহলে তো তার ক্যাশটা এ্যাভেলেবল হয়ে গেলো। সে ফারদার লেনদেনে যাইতে পারতাছে না, ফলে তার ফান্ডের পর্যাপ্ততা বা ক্যাশ ফ্লো যেটাই বলেন অনেক বেড়ে গেলো।

শামসুল হুদা

ব্যবস্থাপনা পরিচালক

এএনএফ ম্যানেজমেন্ট কোং লিমিটেড।