সহজেই ঘুরে আসুন কাশ্মীর

কাশ্মীরকে বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর স্বর্গ। ভ্রমণপ্রিয় সব মানুষের কাছেই কাশ্মীর এক আকর্ষণ। কাশ্মীর নিয়ে রয়েছে নানা রকম গল্প। চলুন জেনে নিই কত সহজে, কোন কোন উপায়ে কাশ্মীর যাওয়া যায়, সেই গল্প।

আকাশপথে
অনেকেই বিমানে কাশ্মীর যাওয়ার কথা শুনলে বা জানলে খরচের কথা মনে করে। হয়তো ঘাবড়ে যেতে পারেন। কিন্তু ব্যাপারটা মোটেই তেমন নয়। আপনি যদি যাওয়ার দিন-তারিখ ঠিক রাখতে পারেন, তবে রেলে বা বাসে চেয়ে সামান্য বেশি খরচে, অল্প সময়ে আর জার্নির যন্ত্রণা ছাড়াই ঘুরে আসতে পারেন ভূস্বর্গ কাশ্মীরে।

কলকাতা থেকে দিল্লি হয়ে শ্রীনগর যাওয়ার ইকোনমি ক্লাসের প্লেনের টিকেট পাবেন ৬০০০-৭০০০ টাকায়, যদি দুই থেকে তিন মাস আগে টিকেট কেটে রাখেন। যেটা প্রায় ট্রেনের টিকেটের সমতুল্য। এবং ফেরার টিকেট এই একই দামে। এতে করে সময় বাচবে, জার্নির ক্লান্তি থাকবে না। আর খরচের ব্যাপারটাও থাকবে সাধ্যের মধ্যে।

আবার ঢাকা থেকে কলকাতা হয়ে দিল্লি থেকে শ্রীনগর যেতে পারেন প্লেনে। সে ক্ষেত্রে ঢাকা-কলকাতা প্লেন ভাড়া ৪০০০-৫০০০ টাকা। কলকাতা থেকে দিল্লি হয়ে শ্রীনগর আগের ভাড়া। বা ঢাকা থেকে সরাসরি দিল্লি প্লেনে ৮০০০-১০০০০ টাকা। তারপর দিল্লি থেকে ৩৫০০-৫০০০ টাকা শ্রীনগর প্লেন ভাড়া। ফিরতেও পারেন একইভাবে।

রেলপথে
ঢাকা থেকে কলকাতা হয়ে, দিল্লি বা জম্মু গিয়ে আবার জম্মু থেকে একই পথে ঢাকায় ফিরে আসতে পারেন ট্রেনে করেই। এটাই সবচেয়ে মজার জার্নি বলে আপনার মনে হতে পারে। যদিও সময়টা একটু বেশি লাগে, কিন্তু যদি সময় থাকে আর থাকে একটা ভালো ভ্রমণ গ্রুপ, তবে এটাই কাশ্মীর যাওয়ার বেস্ট উপায়। এই ক্ষেত্রে যে রুট হবে সেটা এমন

ঢাকা থেকে মৈত্রী এক্সপ্রেসে কলকাতা, ভাড়া নেবে ১০০০-২৫০০ শ্রেণি অনুযায়ী, ট্র্যাভেল ট্যাক্সসহ। কলকাতা থেকে সরাসরি জম্মু যাওয়ার ট্রেনের টিকেট নিতে পারেন হিমগিরি বা জম্মু তাওয়াই এক্সপ্রেসের। ভাড়া পড়বে ১২০০ থেকে ৫০০০ পর্যন্ত স্লিপার, থ্রি/টু টায়ার আর বাথের। সময় লাগবে ৩২-৩৬ ঘণ্টা। জম্মু নেমে শ্রীনগর যেতে হবে বাস বা রিজার্ভ কারে করে। বাসের ভাড়া পড়বে ৮০০-১৫০০ টাকা। আর গাড়ি ভাড়া পড়বে ৫০০০-৮০০০ পর্যন্ত। গ্রুপের সদস্য সংখ্যার ওপরে নির্ভর করবে কোন গাড়ি নেবেন। জম্মু থেকে শ্রীনগর যেতে সময় লাগবে ৭-১২ ঘণ্টা।

বাস ও রেলের সমন্বয়
এ ক্ষেত্রে ঢাকা থেকে কলকাতা যেতে পারেন বাসে বা ট্রেনে। ভাড়া ১০০০ থেকে ২৫০০-এর মধ্যে। কলকাতা থেকে দিল্লি যেতে পারেন বেশ আয়েশ করে রাজধানী এক্সপ্রেসে। ভাড়া পড়বে ৩০০০-৫৫০০ টাকা শ্রেণিভেদে। তবে সব খাবার এই টিকেট ভাড়ার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে। দিল্লিতে সারা দিন ঘুরে রাতের রাজধানী এক্সপ্রেসে যেতে পারেন দিল্লি থেকে জম্মু পর্যন্ত। রাতে ছেড়ে সকালে পৌঁছায়। জম্মু থেকে শ্রীনগর পর্যন্ত আগের মতো বাস বা গাড়ি রিজার্ভ করে।

কাশ্মীরের হোটেল খরচ
এভাবে আপনার সাধ, সাধ্য আর সময় অনুযায়ী পৌঁছে গেলেন ঢাকা থেকে কাশ্মীরের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শ্রীনগরে। এবার কাশ্মীর ঘুরে দেখার পালা আর ভাড়া আর খাওয়া-দাওয়া। ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যে বেশ ভালো মানের রুম পাবেন পুরো কাশ্মীরজুড়েই। শ্রীনগর, ডাললেক, হাইজ বোট, গুলমার্গ, সোনমার্গ, পেহেলগাম, সব জায়গাতেই। যেখানে একটি ছোট পরিবার আরামে আর তিনজনের একটি গ্রুপ অনায়াসে থাকতে পারবে।

খাওয়া
কাশ্মীরে ভারতের অন্যান্য ট্যুরিস্ট স্পটের চেয়ে খাবার খরচটা একটু বেশি। কারণ, এখানে তেমন কোনো শস্য বা সবজি হয় না। সব রকম খাবারের জোগান দূরের অন্যান্য প্রদেশ থেকে আসে বলে খাবারের খরচটা একটু বেশি। জনপ্রতি ১৫০ থেকে ২০০ রুপির কমে ভালো খাবার পাওয়া একটু মুশকিল। আর সকালের নাশতায়ও গুনতে হবে অন্তত ১০০ রুপি। একটু আরাম করে খেতে চাইলে।

গাড়ি ভাড়া
শ্রীনগর থেকে অন্যান্য স্পটের যেখানেই যেতে চান, আপনি যদি সময়ের ভাবনা না ভাবেন, তবে লোকাল ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে খুবই কমে নানা জায়গায় যাওয়া-আসা করতে পারবেন। কিন্তু এত সময় তো আমাদের নেই আর ওটা হলো সিঙ্গেল ট্রাভেলারদের জন্য। গ্রুপ করে বা পরিবার নিয়ে গেলে গাড়ি ভাড়া করে নেওয়াই ভালো। সে ক্ষেত্রে খুব বেশি দামাদামি করার সুযোগ নেই। নানা রকম গাড়ির রেট নির্ধারণ করাই আছে, সারা দিনের জন্য। যেমন—চারজনের জন্য ২৪০০ রুপি, ৬-৮ জনের জন্য ২৮০০ রুপি আর ৯-১৪ জনের জন্য ৩৩০০ রুপির বড় গাড়ি। দেখে শুনে-বুঝে গাড়ি আর ড্রাইভার নির্বাচন করুন। কোনো হোটেল বা দালালের দরকার নেই। ডাল লেকের পাশে দাঁড়ালেই শত শত গাড়ি পেয়ে যাবেন।

আজকের বাজার: আরআর/ ০৩ ডিসেম্বর ২০১৭