সাকিবের তদন্তে সম্মতি দিয়েছিল ভারতীয় বোর্ড

বাংলাদেশের ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে আইসিসির তদন্তে তাদের কোনও ভূমিকা ছিল না বলে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) আজ দাবি করেছে। তবে আইসিসিকে তারা এই তদন্ত চালানোর ‘সম্মতি’ দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে বিসিসিআই।

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের দুর্নীতি দমন ইউনিটের (এসিইউ) প্রধান অজিত সিং শেখাওয়াত আজ বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, এখানে (সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে তদন্তে) আমরা কিছুই করিনি। বস্তুত আইসিসি-ই একটি ব্যাপার নিয়ে তদন্ত করছিল, যাতে কিছু আন্তর্জাতিক ইস্যু জড়িত ছিল–আর সেখানে আইপিএলের নামও এসেছিল। সুতরাং (আইপিএলের আয়োজক সংস্থা হিসেবে) বিসিসিআই এই তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আইসিসিকে সায় দিয়েছিল, এটুকুই শুধু বলতে পারি।

সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে আইসিসির দীর্ঘ রায়ে আইপিএলের যে ম্যাচটির প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে, সেটি খেলা হয়েছিল ২০১৮ সালের ২৬শে এপ্রিল। ওই ম্যাচটিতে সাকিবের টিম সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে ১৩ রানে জেতে।

ভারতীয় বোর্ড সূত্রে আরও বলা হচ্ছে, সেই আইপিএল মৌশুমে দুর্নীতি-দমন সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় তদারকির দায়িত্বে ছিল আইসিসি নিজেই, সুতরাং সেখানে বিসিসিআইয়ের প্রত্যক্ষ কোনও ভূমিকা থাকার কথাও নয়।

ওই আইপিএল মৌশুম চলাকালীনই অজিত সিং শেখাওয়াত ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে দুর্নীতি দমন ইউনিটের দায়িত্ব নেন।

তবে তার কথা থেকে এটা স্পষ্ট, নির্দিষ্ট অভিযোগে সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করার পরই আইসিসি বিষয়টি ভারতীয় বোর্ডকে জানিয়েছিল এবং আইপিএলের একটি ম্যাচকে কেন্দ্র করে সাকিবের বিরুদ্ধে যে তদন্ত চলছে – বিসিসিআই সে বিষয়ে অবহিত ছিল।

যে সন্দেহভাজন ক্রিকেট বুকির সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জেরে সাকিব আল হাসান অন্তত এক বছরের জন্য সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত হলেন, সেই দীপক আগরওয়ালের পরিচয় নিয়ে অবশ্য এখনও খুব বেশি কিছু জানা যাচ্ছে না।

তবে ভারতে ক্রিকেটকে ঘিরে যে বিরাট বেআইনি জুয়া ও বেটিংয়ের চক্র চালু আছে, তার খোঁজখবর রাখেন এমন অনেকেই বলেছেন দীপক আগরওয়াল এই সার্কিটে একজন ‘পরিচিত মুখ’।

ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও তাকে বর্ণনা করা হচ্ছে একজন ‘ব্ল্যাকলিস্টেড’ বা কালো তালিকাভুক্ত বুকি হিসেবে।

দীপক আগরওয়াল প্রসঙ্গে অজিত সিং শেখাওয়াত বিবিসিকে বলেন, তিনি ব্ল্যাকলিস্টেড কি না বলতে পারব না, মিডিয়া তো অনেক ধরনের শব্দই ব্যবহার করে। তবে আমাদের ভাষায় তিনি একজন ‘পার্সন অব ইন্টারেস্ট’। মানে কিছু লোকজন এই খেলাটাকে সাবভার্ট বা হেয় করার চেষ্টা করে থাকে, তিনি তাদেরই একজন।

তিনি বলেন, আমরা তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখার চেষ্টা করি, খেলোয়াড়রা যাতে এদের সঙ্গে না-মেশে সে ব্যাপারে সাবধান করে দিই। তবে শেষ পর্যন্ত আমরা তো আর পুলিশ নই, ফলে এর চেয়ে বেশি কিছু করার থাকে না,” বলেন মি শেখাওয়াত, যিনি কর্মজীবনে অবসর নিয়েছেন রাজস্থান পুলিশের মহাপরিচালক হিসেবে।

‘ক্রিকেট বুকি’ দীপক আগরওয়ালের সম্বন্ধে খোঁজখবর করতে গিয়ে বিবিসি অন্তত দুটি ঘটনার খোঁজ পেয়েছে–যার দুটিতেই অভিযুক্তের নাম দীপক আগরওয়াল।

প্রথম ঘটনায় ২০১১ সালে রাজস্থানের উদয়পুর শহরের ঘন্টাঘর এলাকায় বিজয় কুমার নামে এক উঠতি ক্রিকেটার ক্রিকেট বেটিং চক্রে জড়িয়ে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন।

নিজের সুইসাইড নোটে তিনি নিজের এই পরিণতির জন্য দায়ী করে গিয়েছিলেন দীপক আগরওয়ালকে। অভিযোগ করেছিলেন, দীপকই না কি তাকে ক্রিকেট জুয়ার চক্রে টেনে এনেছিলেন।

উদয়পুর শহরের পুলিশ কর্মকর্তাও তখন এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, দীপক আগরওয়ালের কাছ থেকে ৫ লক্ষ রুপি আদায় করে তার পরিবারকে দেওয়ার জন্য সুইসাইড নোটে অনুরোধ করে গেছেন নিহত ওই যুবক।

দ্বিতীয় ঘটনায় ২০১৭ সালে ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যের পুলিশ ক্রিকেটের স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে রায়গড় শহরে জনৈক দীপক আগরওয়ালকে গ্রেফতার করে।

সেই ঘটনায় দুই সঙ্গী সমেত দীপক আগরওয়ালকে জেলেও যেত হয়, তবে কিছুদিনের ভেতরই তিনি ছাড়া পেয়ে যান।

তবে এই দুটি ঘটনায় জড়িত দীপক আগরওয়াল আর সাকিব আল হাসানের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ এক্সচেঞ্জে জড়িয়ে পড়া দীপক আগরওয়াল একই ব্যক্তি কি না, তা নিশ্চিতভাবে এখনও বলা যাচ্ছে না। সূত্র- বিবিসি বাংলা।

আজকের বাজার/এমএইচ