সাতরাস্তা-কারওয়ান বাজার সড়কের নাম ‘আনিসুল হক সড়ক’

সাতরাস্তা-কারওয়ান বাজার সড়কের নাম ‘আনিসুল হক সড়ক’

প্রয়াত মেয়র আনিসুল হককে সম্মান জানাতে সাতরাস্তার মোড় থেকে তেজগাঁও রেলক্রসিং পর্যন্ত সড়কটি মেয়র আনিসুল হকের নামে নামকরণ করা হচ্ছে।

শনিবার বিকেল ৩টায় তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ডের পাশে সড়কটির নামফলক উন্মোচন ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা এ এস এম মামুন তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।

২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর করপোরেশনের ২১তম বোর্ড সভায় প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলর এবং কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সর্বসম্মতিক্রমে সড়কটির নাম মেয়র আনিসুল হকের নামে নামকরণ করা হয়।

সাতরাস্তার মোড় থেকে তেজগাঁও রেলক্রসিং পর্যন্ত সড়কটিতে গড়ে উঠেছিল ট্রাকস্ট্যান্ড। বহু বছর ধরে প্রশাসন এ রাস্তা উদ্ধার করতে পারেনি। মেয়র আনিসুল হক সেই রাস্তা নগরবাসীর ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করেন। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সড়কটি দখলমুক্ত করতে গিয়ে বিক্ষুব্ধ চালক ও শ্রমিকদের প্রচণ্ড ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন। উদ্ধারের পর সংস্কার করে তিনি রাস্তাটির চেহারা বদলে দেন।

প্রায় ১০০ ফুট চওড়া এই সড়ক ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজার এলাকাকে তেজগাঁও মহাখালী এবং বনানী-গুলশান-নিকেতনের সঙ্গে যুক্ত করেছে। ফার্মগেট ও তেজগাঁও এলাকার অন্তত ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, জাতীয় নাক-কান-গলা ইনস্টিটিউট এবং কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রধান কার্যালয়সহ বহু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও সাধারণ মানুষ সড়কটি ব্যবহার করেন।

আনিসুল হক ঢাকাকে জীর্ণ দশা থেকে তুলে আনতে মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত কাজ করেছিলেন। নগরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে তিনি হাতে নেন পাঁচ হাজার ডাস্টবিন বসানোর কাজ। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নে ৭২টি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) নির্মাণে তাঁর নেতৃত্বে উদ্যোগ নেয় ডিএনসিসি। ডিএনসিসির বহু এলাকায় পুরোদমে ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণের কাজ চালু করেন তিনি। জেট অ্যান্ড সাকার মেশিনের মতো সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তিনি নগরের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় উন্নতি ঘটান। নগরের আকাশকে দখলমুক্ত করতে ডিএনসিসি এলাকা থেকে ২২ হাজার বিলবোর্ড অপসারণ করান। তার নির্দেশনায় পথচারীবান্ধব ঢাকা গড়তে ফুটপাত, রাস্তা আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয় নগরের সর্বত্র। পাল্টাতে থাকে নগরের দৃশ্যপট। নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ডিএনসিসির বিভিন্ন এলাকার প্রতিটি হোল্ডিংকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। গাবতলী-সদরঘাট সংযোগকারী সড়কের দু’পাশে প্রায় ৩৭ একর জমি অবৈধ দখল থেকে উদ্ধার করেন।

এছাড়া তিনি ২৬টি খেলার মাঠ ও পার্কের আধুনিকায়ন ও উন্নয়ন, ২৩টি পাবলিক টয়লেটের উন্নয়ন ও ৫০টি নতুন পাবলিক টয়লেট নির্মাণ, ৪টি কবরস্থানের উন্নয়ন, ১৫টি ফুটওভার ব্রিজের উন্নয়ন এবং ৩টি জবাইখানা উন্নয়ন ও ১টি নতুন জবাইখানা নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে আনিসুল হক ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন ২০১৫ সালের এপ্রিলে। নিজের নির্বাচনী ইশতেহারে রাজধানীকে পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ ও ‘স্মার্ট’ নগরী হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সে অনুসারে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তিনি কাজ করে আসছিলেন।

মেয়র আনিসুল হক ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর লন্ডনে মস্তিষ্কের রক্তনালীতে প্রদাহজনিত সেরিব্রাল ভাসকুলাইটিসের কারণে লন্ডনের একটি হাসপাতালে মৃত্যু বর করেন।