সাধারণ সদস্যরাই এফবিসিসিআই’র নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অধিকার রাখে

আগামী ১৪ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন। এ নির্বাচনে পরিচালক পদে নির্বাচন করছেন বাংলাদেশ রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহা. ইসহাকুল হোসেন সুইট। নির্বাচনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আজাকের বাজারের সঙ্গে আলাপ করেছেন তিনি। আলাপের মূল অংশ তারই ভাষায় প্রকাশ করা হলো।

এফবিসিসিআই নির্বাচনে ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের প্যানেলকে  যে কারণে ভোট দিবেন
এইবার এফবিসিসিআই নির্বাচনে ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের প্যানেলকে  কেন আপনারা ভোট দিবেন এর কারণগুলো আমি আপনাদের কাছে ব্যাখ্যা করছি। প্রথমত আপনারা জানেন, এবার আমাদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ভাই ও আমাদের সাবেক কয়েকজন সভাপতি যেমন, সালমান রহমান, একে আজাদ, মোহাম্মদ আলী, জসিম ঊদ্দীন ভাই, সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন উনারা যে ১৮ জনকে সিলেক্ট করে দিবেন আমাদের জিবি মেম্বাররা তাদেরকেই  ভোট দিবেন। আমি ও আমার কয়েকজন বন্ধু মিলে এর বিরোধিতা করে বলি যে, না আমরা দুটি প্যানেলে নির্বাচন করব। আমরা ৪২ জন মনোনয়নপত্র কিনেছি, কয়েকজন নানা কারণে নির্বাচন করতে পারবেন না বলে আমাদের জানানোর পর সাবেক সভাপতিদের আমরা বলি দুটি প্যানেলে নির্বাচন করব। এভাবে আমরা ব্যবসায়িক ঐক্য  ফোরাম, জিবি মেম্বারদের  ভোট  দেওয়ার গণতান্ত্রিক অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। আমরা যদি এই নির্বাচনে প্রার্থী না দিতাম, প্রার্থী না হতাম তাহলে এবারকার নির্বাচন হতো না; আপনারা জানেন চেম্বারে কিন্তু এই অবস্থাটা হয়েছে।  তারা সমঝোতা করে প্রার্থীতা  থেকে সরে দাঁড়িয়েছে, এটা ব্যবসায়ীদের জন্য মারাত্মক ধরনের অশুভ লক্ষণ।

ব্যবসায়ীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছে ব্যকসায়িক ঐক্য  ফোরাম
আমরা মনে করি জিবি মেম্বারদের প্রাথমিক রাইটস রয়েছে  তাদের প্রার্থীদের ভোট  দেওয়ার। অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছে ব্যকসায়িক ঐক্য  ফোরাম।  আমি মনে করি আরো একটা কারণে আমাদের ভোট দেওয়া দরকার, তা হলো আমাদের এখানে আমি যেমন নবীন প্রার্থী  তেমনি রয়েছেন একাধিকবার পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন এমন প্রার্থীরা। রয়েছেন জনসংখ্যার অর্ধেক প্রতিনিধিত্বকারী এ দেশের নারী সমাজের সম্মানিত সদস্য প্রার্থী। আর রয়েছেন  দেশের অন্যতম ব্যবসায়িক শহর চট্টগ্রাম  থেকে অংশ  নেওয়া প্রার্থী। মহিউদ্দিন ভাইয়ের প্যানেলে চট্টগ্রামের  কেউ  নেইঅ এতে তাদের খুব মন খারাপ হয়েছিল, তাদের  দেশের অন্যতম প্রধান ব্যবসা  কেন্দ্র চট্টগ্রামের  কেউ এফবিসিসিআইয়ে থাকবেন না এটা কেমন করে হয়? আমি নিজে  দেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী সিলেটের প্রতিনিধিত্ব করছি  অর্থাৎ ঐক্য পষিদের প্রার্থীতায় বৈচিত্র আছে। গণতান্ত্রিক পরিষদে এটা নেই।

তা ছাড়া এফবিসিসিআইয়ের মালিক হচ্ছেন, এর জিবি মেম্বাররা। গণতান্ত্রিক পরিষদের নেতারা যদি এটা মনে করতেন তবে তারা  ভোট করতে চাইতেন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্যতম শর্ত ভোটাধিকারের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান নিতেন না।। তাই আমি মনে করি, ব্যবসায়িক ঐক্য ফোরাম ভোট ব্যবস্থাকে সচল করেছে, গণতান্ত্রিক অধিকারকে সচল করেছে সুতরাং ভোট চাইবার একমাত্র অধিকার ব্যবসায়িক ঐক্য ফোরমের আর কারো নয়।  সুতরাং ব্যবসায়িক ঐক্য ফোরামের সব প্রার্থীকে ভোট  দিয়ে নির্বাচিত করা  উচিত।
ব্যবসায়ীদের বড় সহায়তার জায়গা এফবিসিসিআই
এফবিসিসিআই ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় সহায়তার জায়গা। আমরা দেখেছি ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবে এবং ব্যবসায় সংক্রান্ত সরকারের যে নীতিমালা বা আইন-কানুন রয়েছে এর সমন্বয়কারি বা  এ নিয়ে কথা বলার মাধ্যম হচ্ছে এফবিসিসিআই। তাই এই সংগঠনের কাছে ব্যবসায়ীদের চাওয়া অনেক বেশি। সবাই জানে, ব্যবসায়ীদের যে সকল সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় এগুলো নিয়ে সরকারের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করবে এফবিসিসিআই। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আমরা এখন দেখতে পাই এফবিসিসিআই ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণ না করে এর নেতারা সরকারের স্বার্থ রক্ষার ভূমিকা পালন করেন। সঙ্গত কারণেই ব্যবসায়ীরা এ সংগঠনের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন।

এবারের নির্বাচনে ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরাম শুরু থেকে বলে আসছে- নেতা কারা নির্বাচিত হবেন সে দায়িত্ব জিবি মেম্বারদের। কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম এবার যিনি সভাপতি নির্বাচিত হবেন; মহিউদ্দিন ভাইয়ের প্রতি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহ রয়েছে। এটাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। কারণ, যিনি ব্যবসায়ীদের নেতা হবেন তার অবশ্যই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। অবশ্যই যোগ্য নেতৃত্ব প্রয়োজন। সে জায়গায় মহিউদ্দিন ভাই পুরোপুরি ফিট।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এটাও বলেছিলেন, অন্য পদগুলোতে নির্বাচন হোক। কিন্তু কিছু ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন ভাইকে ভুল বুঝিয়ে নির্বাচন না হোক এমন সংশয় তৈরি করেছে।

ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরাম বলে আসছে, আমরা যে কোনো মূল্যে জিপি মেম্বারদের পছন্দের প্রার্থীদের নির্বাচনের সুযোগ করে দেব। আজ আনন্দের সঙ্গে বলছি, আমরা সেই সুযোগ তৈরি করতে পেরেছি। অনেকেই ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামকে বলছে বিরোধী দল। বিষয়টি মোটেও তা নয়। এটিও সরকারি দল। আমরাও চাই সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের যোগসূত্র ঘটিয়ে সরকারি নীতিমালা বাস্তবায়ন করে একটি সেতুবন্ধন তৈরি করতে।

আমরা নির্বাচিত হলে মহিউদ্দিন ভাইয়ের হাতই শক্তিশালী হবে
আমি মনে করি, আগামি ১৪ মে আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলে মহিউদ্দিন ভাইয়ের হাতই শক্তিশালী হবে। আমরা তার হাত শক্তিশালী করে প্রধানমন্ত্রীর হাত আরো শক্তিশালী করে সামনের দিনগুলোতে ব্যবসায়ীদের সকল সমস্যা সমাধানে কাজ করবো।

২০১২ সালে পাশ হওয়া ভ্যাট আইন নিয়ে  সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের যে ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে; এখানে প্রশ্ন থেকে যায়, ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই পাঁচ বছর এফবিসিসিআই কি ছিল না? এই পাঁচ বছর নেতারা কেন সরকারের সঙ্গে সু-সম্পর্ক বজায় রেখে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে পারলো না? আমরা জিবি মেম্বারদের কাছে অনুরোধ জানাই; এই নির্বাচনে তারা যেন আমাদের  ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন। তাহলে আমরা সরকারের সঙ্গে বসে এটি নিয়ে সমাধানের দিকে অগ্রসর হতে পারবো। ইতিপূর্বে আমরা একাধিকবার অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছি। আশা করছি, তিনি এ বিষয়ে সদয় হবেন।

তারুণ্যের এগিয়ে আসার সময় এখন

এই অনুষ্ঠান যারা দেখছেন তাদের প্রতিও অনুরোধ জানাই আগামি নির্বাচনে আমাকে নির্বাচিত করুন। এই নির্বাচন সরকারের সঙ্গে সেতুবন্ধন করে যে কোনো সমস্যা সমাধানের বড় সুযোগ। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবমতে,  এ  দেশে ৩০ এর বেশি বয়সী তরুণের সংখ্যা ৬০শতাংশের অধিক। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, প্রতি ৬০ বছর পর একটি জাতি এ ধরনের জেনারেশন পায়।

ইউরোপের যে রেনেসাঁর কথা আমরা জানি, পশ্চিমা বিশ্বের যে অগ্রসরের কথা জানি, এর পেছনের কারণ ত্রিশোর্ধ্ব তরুণের সংখ্যা ৬০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়া।  বাংলাদেশ এখন সেই অবস্থানে রয়েছে। এর ফল- ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আইএমএফ-এর মতো সংস্থাগুলোর আগাম বাণী বিফল প্রমাণ করে সরকারের নীতির কারণে আমাদের দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। আমি মনে করি, তারুণ্যের এগিয়ে আসার সময় এখনই। তাই আমি এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি।  ‘২৪ ঘণ্টায় এক দিন, ১৪ মে সারাদিন, ২৪ নম্বর ব্যালটে ভোট দিন’