সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বাংলাদেশ বিশ্বে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে : প্রধানমন্ত্রী

সকল ধর্মের লোকজনকে ধর্ম-কর্ম পালনের সমান সুযোগ প্রদানে বাংলাদেশ একটি দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এর ফলে কেউ আর নিজেদের অবহেলার শিকার ভাবতে পারে না ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে কোন সম্প্রদায়ই নিজেকে কখনও অবহেলিত যেন মনে না করে, সেদিকে আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখি। আর সেদিক থেকে আমি বলবো, বাংলাদেশ আজ সমগ্র বিশ্বেই একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সমর্থ হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে গণভবনে বৌদ্ধ পুুর্ণিমা উদযাপন উপলক্ষ্যে সারাদেশ থেকে আগত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী, বৌদ্ধ ভিক্ষু, সংঘ সদস্য, সংঘ প্রধানদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি বাংলাদেশের মাটিতে যারা যারা বসবাস করেন সবাই যার যার ধর্ম সম্মানের সাথে, নিষ্ঠার সাথে শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে পারবে, সেটাই আমরা চাই এবং এই সহনশীলতা এবং ভ্রাতৃত্ববোধ সকলের মাঝে থাকবে, এটাই আমাদের লক্ষ্য।
সরকার প্রধান বলেন, ‘রাষ্ট্রের দায়িত্ব আমি মনে করি সকল ধর্ম সকলে যেন শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্মানের সাথে স্বাধীনভাবে পালন করতে পারে সেটা নিশ্চিত করা। সেটাই হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা বা অসাম্প্রদায়িক চেতনা।’
শেখ হাসিনা এ সময় সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদকে একটি বৈশ্বিক সমস্যা আখ্যায়িত করে এথেকে বাংলাদেশকে মুক্ত রেখে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলাই তাঁর সরকারের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্য হলো সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এখন সমগ্র বিশ্বব্যাপীই একটা সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। আসলে জঙ্গিবাদের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তারা জঙ্গি। তাদের কোন ধর্মও নাই, কোন দেশ নাই, তাদের কোন সীমানা নাই। এটা হলো বাস্তবতা।’
‘কাজেই সেই জায়গা থেকে বাংলাদেশকে এখন মুক্ত রেখে আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়নটা করতে চাই, ’যোগ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি নিজে আমার নিজের ধর্ম পালন করি তাই অন্য ধর্মের প্রতি আামি সম্মান জানাই। আর কোন ঠিক কোনটা ভুল সেটার সিদ্ধান্ততো আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নেবেন। সে সিদ্ধান্তের দায়িত্ব তিনি কিন্তু কোন মানুষকে দেন নাই। তিনি এ সম্পর্কে কোনরূপ মন্তব্য করার ক্ষমতা তিনি মানুষকে প্রদান করেন নাই।’
বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত করায় তাঁর সরকারের লক্ষ্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে এখনও ২১ ভাগ জনগণ দরিদ্রসীমায় এবং ১১ ভাগ হতদরিদ্র রয়ে গেছে। আমরা চাই, বাংলাদেশ সম্পূর্ণ হতদরিদ্র মুক্ত হবে। আর বাংলাদেশকে আমরা দারিদ্র মুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। ধর্ম, বর্ণ,দল, মত নির্বিশেষে সকল মানুষের জীবন মান উন্নত হোক সেটাই আমরা চাই। সেলক্ষ্য নিয়েই আমাদের কাজ, আমাদের রাজনৈতিক আদর্শও সেটা।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের দেশ স্বাধীন করে যে সংবিধান দিয়ে গেছেন সেখানেও এই কথাটাই বলে গেছেন। সকলের ধর্ম পালনের স্বাধীনতা তিনিই নিশ্চিত করে গেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার পদাংক অনুসরণ করেই আমরা চলছি। যার ফলে বাংলাদেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে, ইনশাল্লাহ এগিয়ে যাবে।’
বৌদ্ধ পুর্ণিমা উপলক্ষ্যে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গৌতম বুদ্ধের যে বাণী সেটা মানুষের শান্তির জন্য। আর সকল ধর্মের মর্মবাণীই হচ্ছে শান্তি। আর আমরা সেটাই বিশ্বাস করি। আর বাংলাদেশে আমরা সাম্প্রদায়িত সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করি, ধর্ম যার যার উৎসব সবার।’
তিনি বলেন, ‘এটা কিন্তু বাংলাদেশে খুব সুন্দরভাবেই পালন করা হয়। যে ধর্মেরই উৎসব হোক সকলে মিলেই সেটা উদযাপন করে।’
তিনি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের গণভবনে আগমন প্রসঙ্গে বলেন, আপনাদের আগমনে গণভবনের মাটি ধন্য হয়েছে।
তিনি এ সময় জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় ঁতার সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার পুণর্ব্যক্ত করেন।

এ সময় ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত সময়টিকে মুজিব বর্ষ হিসেবে ঘোষনায় সরকারের কর্মসূচি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন,‘ ২০২০ সালে আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করবো। আর তখন দেশের কোন দরিদ্র থাকবে না।’
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশে সিং, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ,দীপংকর তালুকদার এমপি, বান্দরবন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কৈশ হ্লা, রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ধুমকেতু চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজুরী মারমা, বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি শুদ্ধানন্দ মহাথের, আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ ধর্মমিত্র মহাথের, শাক্যমুনি বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ প্রজ্ঞানন্দ মহাথের, বাংলাদেশ বুদ্ধিষ্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শ্রীমৎ সুনন্দ প্রিয় ভিক্ষু, বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সিনিয়র সহসভাপতি শ্রীমৎ বুদ্ধিপ্রিয় মহাথের, ঢাকা বৌদ্ধ সমিতির সহ-সভাপতি কর্ণেল সুমন বড়–য়া, সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়–য়া, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়–য়া, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়–য়া উপস্থিত ছিলেন।