সিরিজ জয়ের বিশ্বরেকর্ড গড়লো ভারত

পুনে টেস্ট জিতে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজ জয় নিশ্চিত করলো স্বাগতিক ভারত। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে আজ প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ইনিংস ও ১৩৭ রানে জয় পেয়েছে টিম ইন্ডিয়া। এর মাধ্যমে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে সিরিজ নিশ্চিতের পাশাপাশি দেশের মাটিতে টানা ১১ টেস্ট সিরিজ জয়ের বিশ্ব রেকর্ডও গড়েছে বিরাট কোহলির দল। একই সাথে ভেঙ্গে গেলো দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার টানা ১০টি টেস্ট সিরিজ জয়ের বিশ্বরেকর্ডটি।

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এখন অবধি দেশের মাটিতে টানা ১১টি টেস্ট সিরিজ জিতলো ভারত। আর ১৯৯৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০০১ সালের জানুয়ারী এবং ২০০৪ সালের জুলাই থেকে ২০০৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দু’বার দেশের মাটিতে টানা ১০টি টেস্ট সিরিজ জিতেছিলো অস্ট্রেলিয়া।

অধিনায়ক বিরাট কোহলির অপরাজিত ২৫৪ ও মায়াঙ্ক আগারওয়ালের ১০৮ রানের সুবাদে প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেটে ৬০১ রানের পাহাড় গড়ে ভারত। জবাবে গতকাল, ম্যাচের তৃতীয় দিন প্রথম ইনিংসে ২৭৫ রানেই অলআউট হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ফলে ফলো-অনে পড়ে প্রোটিয়ারা।

ফলো-অনে পড়ে আজ, চতুর্থ দিন সকালে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিতীয় বলেই ভারতের পেসার ইশান্ত শর্মার বলে লেগ বিফোর ফাঁেদ পড়েন কোন রান না করা দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনার আইডেন মার্করাম। এরপর ২১ রানের জুটি গড়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন আরেক ওপেনার ডিন এলগার ও তিউনিস ডি ব্রুইন। তবে ব্রুইনকে ৮ রানে থামিয়ে ভারতকে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন ভারতের আরেক পেসার উমেশ যাদব। অবশ্য এই শিকারের পুরো কৃতিত্ব ভারতের উইকেটরক্ষক ঋদ্ধিমান সাহার। বাঁ-দিকে ঝাপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত একটি ক্যাচ নেন সাহা।

২১ রানে ২ উইকেট পতনের পর ভারতের বোলারদের বিপক্ষে ঘুড়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন এলগার ও অধিনায়ক ফাফ ডু-প্লেসিস। উইকেট টিকে থাকাতেই বেশি মনোযোগি হয়ে উঠেন তারা। তাই অপরাজিত থেকেই প্রথম সেশন শেষ করার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন এলগার-ডু প্লেসিস। কিন্তু মধ্যাহ্ন-বিরতির আগ মূর্হুতেই বিদায় ঘটে দু’জনের। ভারতের স্পিনার রবীচন্দ্রন অশ্বিনের শিকার হন তারা। এলগার ৪৮ ও ডু-প্লেসিস ৫ রানে ফিরেন। এই জুটি থেকে এসেছিলো ৪৯ রান। ফলে ৪ উইকেটে ৭৪ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

বিরতি থেকে ফিরে আবারো উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ভারতের বাঁ-হাতি স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজার উপর চড়াও হতে গিয়ে বোল্ড হন প্রোটিয়া উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি কক। ৫ রান করেন তিনি। তাই ৭৯ রানে উপরের সারির পাঁচ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ম্যাচ হারের পথ দেখে ফেলে দক্ষিণ আফ্রিকা।

তারপরও লড়াই করার চেষ্টা করেছিলেন স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের একজন তেম্বা বাভুমা। সেনুরান মুথুসামিকে নিয়ে বড় জুটি গড়ার চেষ্টা করেন তিনি। দলের স্কোর শতরানও অতিক্রম করে বাভুমা-মুথুসামির ব্যাটিং নৈপুন্যে। তবে এই জুটিকেও বেশি দূর যেতে দেননি জাদেজা। ৩৮ রান করা বাভুমাকে আউট করেন তিনি। এই জুটির কাছ থেকে দল পায় ৪৬ রান।
বাভুমার পর মুথুসামির বিদায় ঘটে। ৯ রান করে ভারতের পেসার মোহাম্মদ সামির বলে স্লিপে ক্যাচ দেন মুথুসামি। দলীয় ১২৯ রানে সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে প্যাভিলিয়নে ফিরেন মুথুসামি। এ অবস্থায় প্রথম ইনিংসের মত আবারো ব্যাট হাতে লড়াইয়ে চেষ্টা করেন দুই টেল-এন্ডার ভারনন ফিলান্ডার ও কেশব মহারাজ। প্রথম ইনিংসে নবম উইকেটে ১০৯ রান যোগ করেছিলেন তারা। এবার অস্টম উইকেট জুটিতে লড়াই শুরু করেন ফিলান্ডার-মহারাজ। তাই চা-বিরতির আগ পর্যন্ত আর কোন উইকেট হারাতে দেননি তারা। ৭ উইকেটে ১৭২ রান নিয়ে চা-বিরতিতে যান এই দুই টেল-এন্ডার।

তবে চা-বিরতি থেকে ফিরেই বিচ্ছিন্ন হন ফিলান্ডার-মহারাজ। ৩৭ রান করা ফিলান্ডারকে তুলে নিয়ে ভারতকে জয়ের কাছে নিয়ে যান পেসার উমেশ। এবার জুটিতে আসে ৫৬ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে এটিই সর্বোচ্চ রানের জুটি।

৬৭তম ওভারের প্রথম বলে ফিলান্ডরাকে শিকারের পর ষষ্ঠ বলে কাগিসো রাবাদাকেও বিদায় দেন উমেশ। ফলে নবম উইকেটের পতন ঘটে দক্ষিণ আফ্রিকার। আর পরের ওভারে ২২ রান করা মাহরাজকে বিদায় করার পাশাপাশি প্রতিপক্ষকে অলআউট করে ভারতের জয় নিশ্চিত করে জাদেজা। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৮৯ রানেই অলআউট হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। ভারতের উমেশ-জাদেজা ৩টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন ভারতের অধিনায়ক কোহলি।

রাঁচিতে আগামী ১৯ অক্টোবর থেকে শুরু হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টেস্ট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :

ভারত : ৬০১/৫ ডি, ১৫৬.৩ ওভার (কোহলি ২৫৪*, আগারওয়াল ১০৮, রাবাদা ৩/৯৩)।
দক্ষিণ আফ্রিকা : ২৭৫ ও ১৮৯/১০, ৬৭.২ ওভার (এলগার ৪৮, বাভুমা ৩৮, উমেশ ৩/২২)।
ফল : ভারত ইনিংস ও ১৩৭ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : বিরাট কোহলি (ভারত)।

সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে ভারত।

আজকের বাজার/লুৎফর রহমান