সুনামগঞ্জে বেড়িবাঁধই হুমকির মুখে!

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার কাংলার হাওরের ডুবন্ত বেড়িবাঁধ প্রতি বছরই পাহাড়ি ঢলে ভেঙে যায়। পাউবোর লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও হাওরে ফসলহানি ঠেকানো কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। পিআইসি গঠন করে ভাঙাচুরা ভরাটসহ সড়ক সংস্কার কাজ করা হয় ঠিকই, কিন্তু এতে কাজের কাজ কিছুই হয় না। ঢলের তোড়ে সরকারের লাখ লাখ টাকার প্রকল্প ভেসে যায়।

এটি কেবল ফসল রক্ষা বাঁধই নয়, উপজেলার মুহিবুর রহমান মানিক সোনালীনূর উচ্চ বিদ্যালয় ও হাওরপাড়ের কয়েকটি গ্রামের সংযোগ সড়কও। বছর বছর মাটি কাটা হলেও বর্ষা শুরু হলেই ভেঙে গিয়ে ফসলহানি ঘটে কৃষকের কপাল পুড়ে যায় এই হাওরে। বর্ষা কিংবা শুষ্ক মৌসুমে হাওরপাড়ের একমাত্র ওই সড়কটিও চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। উপজেলার সোনাপুর, নুরপুর, ভূজনা গ্রাম হতে প্রতিনিয়ত স্কুলের শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়।

স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছর ডুবন্ত ওই বেড়িবাঁধে দায়সারা মাটি ভরাট ও মেরামত কাজ না করে আবুড়া বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হলে এবং পেটফুলায় হোল্ডার-২ এ একটি স্লুইসগেট নির্মাণ করা হলে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ কাম চলাচল ওই সড়কটি বাঁচানো সম্ভব হবে। চলতি মৌসুমে ডুবন্ত এই বেড়িবাঁধে পিআইসি নং ২৯ ও ৩০ এ মোট দুটি প্রকল্পে ৩৫ লাখ ৪৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে কাংলার হাওরের হোল্ডার নাম্বার-২এ ৩০ নং পিআইসিতে মোট ৪ শত মিটার ডুবন্ত বাঁধের ভাঙা বন্ধকরণ ও পুনরাবৃত্তিকরণ কাজে ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

এ প্রকল্পের কাজ বর্তমানে চলমান রয়েছে। একইভাবে কাংলার হাওর হোল্ডার নাম্বার-২এ ২৯ নং পিআইসির ডুবন্ত বাঁধের ২২ শত মিটার কাজে ২৪ লাখ ৬৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের কাজও বর্তমানে চলমান রয়েছে। এ বছর দুটি প্রকল্পই একটি ডুবন্ত বেড়িবাঁধে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। নুরপুর থেকে আলীপুর মুহিবুর রহমান মানিক সোনালীনূর উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত আবুড়া বেড়িবাঁধ কাম সড়ক নির্মাণ এবং স্লুইসগেট নির্মাণে দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছেন এই এলাকার কৃষক ও জনসাধারণ। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

সরেজমিনে ইউএনবি প্রতিনিধি দেখেন, কাংলার হাওরের পিআইসি নং ৩০ হোল্ডার-২ এ ডুবন্ত বেড়িবাঁধের চলমান কাজ চলছে অনেকটা দায়সারাভাবে। পাউবোর নিয়ম অনুযায়ী যে মাপের ভিত্তিতে কাজ করার কথা সেভাবে করা হচ্ছে না। বাঁধের একেবারে নিকট থেকে বড় বড় গর্ত করে এস্কেভেটর দিয়ে মাটি তুলে বাঁধ ভরাট করা হচ্ছে, যা খোদ বাঁধের জন্যই হুমকি স্বরূপ। সংশ্লিষ্ট পিআইসি ওই প্রকল্পের ৮০ ভাগ মাটি কাটার কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি করলেও বাস্তবে ২০-২৫ ভাগ কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি। তাছাড়া পূর্বের সড়ক কেটে অগোছালোভাবেই নতুন করে মাটি ফেলা হচ্ছে। মাটি ভরাট ব্যতিত পূর্বের সড়কে ৩-৪ ইঞ্চি পানি মিশ্রিত কাদা মাটি ফেলেই দায়সারা পুনরাবৃত্তির কাজ সম্পন্ন করার অভিযোগ ওঠেছে।

স্থানীয় নূরপুর গ্রামের বাসিন্দা হাফিজ আবুবকর বলেন, এটি কেবল বেড়িবাঁধই নয় হাওরপাড়ের কয়েকটি গ্রামের চলাচল একমাত্র রাস্তাও বটে। বর্তমানে যেভাবে পূর্বের সড়কের নিকট থেকে বড় বড় গর্ত করে মাটি কেটে সড়কে ফেলা হচ্ছে এতে বেড়িবাঁধের কোনো কাজে আসবে না। তাছাড়া বৃষ্টি হলেই কাদা মাটিগুলো সরে গিয়ে পুরো বাঁধটিই হুমকির মুখে পড়বে। প্রকল্পের পিআইসি আব্দুর রহিম জানান, এ পর্যন্ত ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করেছেন। তিনিই একমাত্র পিআইসি যিনি প্রতি বছর সবার চেয়ে ভালো কাজ করেন এবং কাজ সম্পন্ন করেই বিল উত্তোলন করেন। আর এ কারণে প্রতি বছরই তিনি পিআইসির সভাপতি নিযুক্ত হন।

এ দিকে একই বাঁধের ২৯ নং পিআইসির কাজও চলমান রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এটি ফসল রক্ষা বাঁধ এবং তাদের চলাচলের একমাত্র সড়ক। প্রতি বছর এভাবে দায়সারা ডুবন্ত বাঁধের কাজ না করে আবুড়া বেড়িবাঁধ ও পেটফুলায় স্লুইসগেট নির্মাণ করা হলে কৃষকরা হাওরের ফসলহানি থেকে রক্ষা পাবে এবং তাদের দুর্ভোগও কমে আসবে। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের পিআইসি ইউপি সদস্য আলী নুর বলেন, এখানকার বাসিন্দাদের দাবি ডুবন্ত না হয়ে আবুড়া বেড়িবাঁধ হবে। ‘কিন্তু পাউবো ডুবন্ত বেড়িবাঁধের প্রকল্প দিয়েছে, আমরা কিভাবে আবুড়া বেড়িবাঁধ নির্মাণ করব,’ বলেন তিনি।

তিনি জানান, পাউবোর নিয়ম অনুযায়ী মাটি ভরাট ও পুনরাবৃত্তির কাজ করছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তিনি কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন বলেও জানান। এ ব্যাপারে দোয়ারাবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী শমসের আলী মন্টু বলেন, ‘প্রতিটি প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তা আমরা খতিয়ে দেখবো। কোথাও কোনো অনিয়ম হলে তাদের বিল আটকে দেয়া হবে।’
সূত্র-ইউএনবি

আজকের বাজার/আখনূর রহমান