সুন্দবনে বাঘের সংখ্যা বেড়ে ১১৪

জাতিসংঘ আগামী ৫০ বছরের মধ্যে ‘রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার’ বিলুপ্ত হওয়ার সতর্ক বার্তা দিলেও বাংলাদেশের সুন্দরবন অংশে বাঘের সংখ্যা বাড়ছে। গত তিন বছরে বেড়েছে ৮টি। সর্বশেষ ২০১৫ সালের বাঘশুমারিতে ১০৬টি বাঘ থাকার কথা বলা হয়েছিল। বর্তমানে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৪টি।

Bengal Tiger Conservation Activity (Bagh) প্রকল্পে বাঘ গণনার কার্যক্রম (দ্বিতীয় পর্যায়) শেষে বুধবার এ খবর দিয়েছে বাংলাদেশ বন বিভাগ।

‘Second Phase Status of Tiger in Bangladesh Sundarbans 2018’ শিরোনামের একটি জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে মঙ্গলবার বন বিভাগ একটি বিশস্ত সূত্র এ সংখ্যা নিশ্চিত করেছে।

বন বিভাগের একজন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০০৪ সালে বাঘের সংখ্যা ছিল ৪০৪টি। ২০১৫ সালে তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ১০৬টিতে। ওই শুমারিটি করা হয়েছিল ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে।

বন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৬ সালে ইউএসএইড বাংলাদেশ প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ গণনা কার্যক্রম শুরু করা হয়।

১ ডিসেম্বর ২০১৬ থেকে ১৪ মার্চ ২০১৭ পর্যন্ত সাতক্ষীরা রেঞ্জের ১২০৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় দুইটি সেশনে ২৫৩ গ্রীডে ক্যামেরা বসিয়ে জরিপ পরিচালনা করা হয়। পুনরায় ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ থেকে ২৪ এপ্রিল ২০১৮ পর্যন্ত খুলনা রেঞ্জের ১৬৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় একটি সেশনে ৯৬টি ক্যামেরা বসিয়ে জরিপ পরিচালনা করা হয়। একইভাবে ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ থেকে ১০ মে ২০১৮ পর্যন্ত শরণখোলা রেঞ্জের ২৮৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় দুইটি সেশনে ১৮৭ গ্রীডে ক্যামেরা বসিয়ে জরিপ করা হয়।

সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে মোট চারটি ধাপে তিনটি ব্লকে ১ হাজার ৬৫৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ক্যামেরা বসিয়ে ২৪৯ দিন ধরে পরিচালিত ওই জরিপে ৬৩টি পূর্ণ বয়স্ক বাঘ, ৪টি জুভেনাইল বাঘ (১২-১৪ মাস বয়সী) এবং ৫টি বাঘের বাচ্চার (০-১২ মাস বয়সী) ২ হাজার ৪৬৬টি ছবি পাওয়া যায়। যেহেতু সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের বিচরণক্ষেত্র ৪ হাজার ৪৬৪ বর্গ কিলোমিটার সে ক্ষেত্রে বাঘ গবেষণা ও জরিপে সর্বাধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি এসইসিআর মডেলে তথ্য বিশ্লেষণ হয়। তাতে দেখা যায়, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১১৪টি।

জানা যায়, বন অধিদফতরের সঙ্গে চলতি বাঘ শুমারিতে অংশ গ্রহণ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের স্মিথসনিয়ান কনজারভেশন ইন্সটিটিউটের ওয়াইল্ড টিম। আর গবেষণায় তথ্য বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবারের বাঘ জরিপ কার্যক্রমে প্রাপ্ত তথ্য আরো নিশ্চিত হতে জরিপের একটি খসড়া Wildlife Institute of India -তে পাঠানো হয়। পরে বাংলাদেশের তৈরি বাঘ বিষয়ক প্রতিবেদন সঠিক বলে মতামত দেয় ভারতীয় প্রতিষ্ঠানটি।

সুন্দরবনই হচ্ছে এশিয়ার মধ্যে বন্য প্রাণীর বৃহত্তম আবাসভূমি। বর্তমানে সুন্দরবনে ৩৭৫ প্রজাতির বন্য প্রাণী রয়েছে। বন বিভাগের দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২০০০ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সুন্দরবন অঞ্চলে ৪৪টি বাঘ হত্যার ঘটনা ঘটে।

সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে জানা গেছে, ২০৭০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে বাঘের জন্য কোনো উপযুক্ত জায়গা থাকবে না। কেননা, বিশ্বের তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধিসহ চোরাশিকারি ও খাদ্যাভাবের কারণে সুন্দরবনে এই প্রাণীর আবাসস্থল এখন চরম হুমকির মুখে।

আজকের বাজার/এমএইচ