সেই চিঠিতে ১৩ ভুল!

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে গত সোমবার থেকেই একটি চিঠি ঘুরপাক খাচ্ছে। অনেক মূলধারার সংবাদমাধ্যমেও এসেছে চিঠিটির ছবি ও খবর। সেটি প্রথম প্রকাশ করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি।

যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বহাল থাকা না থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি জানান, তার কাছে প্রমাণ রয়েছে যে, তারেক রহমান তার বাংলাদেশি নাগরিকত্ব সারেন্ডার করে সবুজ পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের হোম অফিসে।

আর হোম অফিস থেকে সে পাসপোর্টের কপি এরইমধ্যে লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশনের কাছে পাঠানো হয়েছে। চিঠি পাঠানোর সময় হোম অফিস থেকে একটি কাভার লেটার পাঠানো হয়। যাতে স্বাক্ষর করেন পাসপোর্ট ব্যাংক ম্যানেজার।

২০১৪ সালের ২ জুন তারিখে পাঠানো চিঠিটির কপি ও পাসপোর্টের প্রথম পাতাগুলো পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তার ফেসবুক পাতায় দেওয়ার পর সেটি ভাইরাল হয়। তখনই প্রশ্ন ওঠে একটি বিষয় নিয়ে। হোম অফিস বাংলাদেশ হাই কমিশনে পাঠানো চিঠিতে হাই কমিশন না লিখে এম্বাসি লিখেছে। এমনটা হবার কথা নয়।

বিএনপির পক্ষ থেকে আজ মঙ্গলবার দুপরে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যে চিঠিটি তার ফেসবুক এবং গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন, সেটি অন্তত ১৩টি ভুল পাওয়া গেছে, যা ব্রিটিশ গভর্মেন্টের পক্ষে এ ধরনের ভুল করা খুব অস্বাভাবিক। যেমন, প্রথমেই লিখেছেন ডিপার্টমেন্টের নাম, ‘Immigration and Enforcement’ কিন্তু এটির আসল নাম হচ্ছে ‘Immigration Compliance and Enforcement’.

`58 যে ঠিকানা দিয়েছে— এখানে কমা নেই, `Hounslow Middlesex’ যে ঠিকানাটা দিয়েছে, সেখানে ফুলস্টফ নেই। এর পরে `Bangladesh Embassy’ সুডনট বাংলাদেশ এম্বাসি। এখানে হাইকমিশন হবার কথা। কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্রকে সব সময় হাই কমিশন বলা হয়’— বলেন ফখরুল।

মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের জনগণ ক্ষোভের সাথে লক্ষ্য করছে, তাদের কষ্টার্জিত বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে লন্ডন সফরকারী বিশাল বহরের একমাত্র অর্জন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সংগ্রহ করা জনাব তারেক রহমানের ২০০৮ সালে ইস্যু করা পাসপোর্টের ৩টি পাতা এবং ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র বিভাগের অসংখ্য ভুলে ভরা এক লাইনের রহস্যজনক একটি চিঠির ফটোকপি।

তিনি বলেন, কি বিচিত্র এই সরকার! কি দুর্বল তাদের অপকৌশল!! আমরা দৃঢ়তার সাথে স্পষ্ট ভাষায় দেশবাসীকে জানাতে চাই যে,তারেক রহমান জন্মসূত্রে বাংলাদেশের একজন গর্বিত নাগরিক। তিনি তার এই প্রিয় দেশের নাগরিক ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন ইনশাআল্লাহ।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের কড়া সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, কি কি কারণে একজন নাগরিক জন্মসূত্রে প্রাপ্ত নাগরিকত্ব হারাতে পারেন- এটাও যিনি (পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী) জানেন না, তেমন একজন ব্যক্তির শুধু এ ধরনের অনির্বাচিত সরকারের মন্ত্রী পদে থাকা সম্ভব এবং তা জাতির জন্য লজ্জাজনক।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, জন্মসূত্রে বাংলাদেশী নাগরিক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পাসপোর্ট যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের মাধ্যমে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে জমা দেয়ার একটি নথি দেখিয়ে বিনা ভোটে ক্ষমতা দখলকারী বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তারেক রহমানের নাগরিকত্ব বিষয়ে যে অদ্ভুত, যুক্তিহীন ও বেআইনি মন্তব্য করেছেন, আমরা তার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, দেশবাসী জানেন, বর্তমান সরকারের তথাকথিত আন্দোলনের ফসল অবৈধ ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিন সরকারের নৃশংস রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে পঙ্গু অবস্থায় সুচিকিৎসার জন্য আদালতের অনুমতিক্রমে জনাব তারেক রহমান ২০০৮ সালে লন্ডনে যান এবং পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ায় এখনও সেখানে তার চিকিৎসা চলছে। ইতোমধ্যে তার অনুপস্থিতিতে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ না দিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকারের শীর্ষ ব্যক্তি থেকে শুরু করে মন্ত্রী, নেতা-পাতি নেতারা প্রতিনিয়ত তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করলেও দেশের জনগণ যাতে তারেক রহমানের জবাব শুনতে না পারে সেজন্য দেশের সকল প্রচার মাধ্যমে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রকাশ ও প্রচার নিষিদ্ধ করে বাক স্বাধীনতার মতো মৌলিক মানবাধিকার থেকে তাঁকে বঞ্চিত করে বিশ্বের এক নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার ও সরকারী দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বক্তৃতা-বিবৃতিতে এটা স্পষ্টতই প্রমাণিত, দেশে তারেক রহমানের জীবন নিরাপদ নয়। এমতাবস্থায় তারেক রহমান বিশ্বের অসংখ্য বরেণ্য রাজনীতিবিদ, সরকার বিরোধী বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতোই সাময়িকভাবে বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন এবং সঙ্গত কারণেই তা পেয়েছেন। এই প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক অংশ হিসেবেই তিনি যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র বিভাগে তার পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, সে দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার পাসপোর্ট জমা রেখে তাকে ট্রাভেল পারমিট দেওয়া হয়েছে। কাজেই এই মুহূর্তে বাংলাদেশের পাসপোর্ট তার কোনো কাজে লাগছে না। যখনই তিনি দেশে ফেরার মতো সুস্থ হবেন তখনই তিনি দেশের অন্যান্য নাগরিকের মতোই পাসপোর্টের জন্য আবেদন জানাতে এবং তা অর্জন করতে পারবেন। কাজেই ‘retention’ অর্থাৎ জমা রাখার জন্য ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র বিভাগ থেকে তার পাসপোর্ট লন্ডন হাইকমিশনে পাঠানোর যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে তার দ্বারাও কোনো আইন কিংবা যুক্তিতে প্রমাণ হয় না যে, তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করেছেন।

এ ধরনের উদ্ভট ধারণাকে তত্ত্ব কিংবা তথ্য হিসেবে সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন কিংবা ফেসবুকে প্রচার রাজনৈতিক মূর্খতা এবং উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার ছাড়া আর কিছু হতে পারে না বলেন বিএনপি মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল বলেন, তারেক রহমান মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং দেশের সাবেক নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র শুধু নন, তিনি বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির অন্যতম সর্বোচ্চ একজন জনপ্রিয় নেতা। বাংলাদেশের এই গর্বিত নাগরিকের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রলাপ বকা এবং অপপ্রচার চালানো অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য আমরা সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে যে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে- দেশের জনগণ তার জানার জন্য অপেক্ষা করছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের জনগণ যখন দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ও অব্যাহত উর্দ্ধগতিতে বিপর্যস্ত, গুম-খুন-চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ, শেয়ার বাজার ও ব্যাংক লুটেরাদের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং দেশনেত্রীর মুক্তি আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ- ঠিক সেই সময় এসব অপরাজনীতি দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা জনগণের ক্ষোভের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস-চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ।

এস/