সেবাখাতকে অনিরাপদ মনে করেন ৮৪ শতাংশ নারী

দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং সেবাখাত সমূহকে অনিরাপদ মনে করেন ৮৪ শতাংশ নারী। ক্রমাগত নগরায়নের ফলে শহরে জেন্ডার সংবেদনশীল জনসেবা নিশ্চিত করার চ্যালেঞ্জ দিন দিন বাড়ছে।  নগরে নারীরা সরকারি জনসেবা গ্রহনের ক্ষেত্রে একদিকে যেমন যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, অন্যদিকে নিরাপদ জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রে তাদের সুযোগ কমছে।

জনসেবা খাতের উপর একশনএইড বাংলাদেশ-এর “নারীর জন্য নিরাপদ নগরী” নামের একটি গবেষণায় এ চিত্র উঠে আসে। বুধবার ঢাকার ব্র্যাক সেন্টার ইন-এ আয়োজিত ‘জেন্ডার সংবেদনশীল জনসেবা ও অন্তর্ভূক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি’ বিষয়ক দু’দিন ব্যাপি একটি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গবেষণাটির এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়।

এতে বলা হচ্ছে, স্বাস্থ্য ও পরিবহনের মতো গুরুত্বপূর্ণ জনসেবা খাতগুলো জেন্ডার সংবেদনশীল না। ৪২ শতাংশ নারী হাসপাতালে গিয়ে খারাপ ব্যবহারের শিকার হন। ওই গবেষণায় অংশ নেয়া ৮৪ শতাংশ নারী মনে করেন শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং সেবাসমূহ অনিরাপদ। গবেষণায় উঠে এসেছে যে, নারীরা প্রতিনিয়ত হয়রানির (স্পর্শ, বাজে ও অগ্রহণযোগ্য মন্তব্য) শিকার হন।

সম্মেলনে বক্তারা বলেন, দেশের প্রায় সবকটি সেবাখাতে ধীরে ধীরে বিনিয়োগ কমছে। সরকারি জনসেবাসমূহ, বিশেষ করে স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ও নগরসেবায় বিনিয়োগ হ্রাস পাচ্ছে।

সরকারের বাজেট, উদ্যোগ, বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা পর্যালোচনা করে এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে একশনএইড বাংলাদেশ।

এতে বলা হয়, সরকারি জনসেবাসমূহ, বিশেষ করে স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ও নগরসেবায় বিনিয়োগ হ্রাস পাচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের চিত্র তুলে ধরা হয়। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৪.৭১ শতাংশ। যেখানে  ২০০৯-১০ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল ৬.০২ শতাংশ। এর সাথে যুক্ত হয়েছে দক্ষ ও পেশাজীবী সেবাদাতার অভাব। শিক্ষাক্ষেত্রে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ১৪.৩৯ শতাংশ। যেখানে ২০০৯-১০ অর্থ বছরে ছিল ১৪.৩০ শতাংশ।

আবার কেন্দ্রীভূত বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন ব্যবস্থার ফলে নাগরিকদের সঠিক চাহিদার প্রতিফলন বাজেটে হচ্ছে না একইসাথে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা এবং পরিবহন সেবার ক্ষেত্রে সরকারের দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে দিন দিন সেবা ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে বলেও দাবি করেন তারা।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ও একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, “সরকার নির্বাচিত হয় মানুষের সেবার জন্য। আর দেশের সকল নাগরিকের জন্য একই ধরনের সেবা নিশ্চিত করা উচিত। কিন্তু সেবা দেয়ার জন্য যেই পরিকল্পনা করা হয় তা আসলে সবার কথা চিন্তা করে করা হয় না। ১০ বছর আগের বাজেটে জনসেবা খাতে যে হারে বরাদ্দ ছিল বর্তমানে যে ঠিক সেই হারে বরাদ্দ দিতে হবে, তা ভাবা ঠিক না। বাস্তব চিত্র হলো, প্রয়োজন অনুসারে জনসেবা খাতে বরাদ্দ ও বাস্তবায়ন হয় না।”

তিনি বলেন, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি ও সেবা বেসরকারিকরনের ফলে সেবা নিতে খরচ বাড়ছে সাধারণ মানুষের। ইন্টারন্যাশনাল বাজেট পার্টনারশিপ ওপেন বাজেট সার্ভে ২০১৭ অনুযায়ী, অংশগ্রহণ সূচকে বাংলাদেশের অর্জন ১০০-তে মাত্র ১৩, স্বচ্ছতার সূচকে প্রাপ্তি ১০০-তে ৪১, যার অর্থ তথ্য সরবরাহে বাংলাদেশ এখনও অনেক দুর্বল।

মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের পরিচালক আতাউর রহমান বলেন,“বাংলাদেশে যারা সেবা দেন, তাদের মানসিকতায় সমস্যা আছে। যারা সেবা দেন তারা অনেক সময় নিজেদের প্রভু ভেবে আচরন করেন। এক্ষেত্রে সেবাদাতা ও গ্রহীতার মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। তবে তাদের মধ্যে যদি আন্তরিকতা বাড়ে তাহলে সেবার মান আরো ভাল হবে।”

অনুষ্ঠানের প্রবন্ধ উপস্থাপক নুজহাত জাবিন বলেন, “জনসেবার পরিকল্পনা এবং বিতরণ পর্যায়ে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং নাগরিকদের অংশগ্রহণ খুবই সীমিত। এ কারণেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেবা পান না বা সেবা পেতে বিড়ম্বনার শিকার হন সাধারণ মানুষ। তাই জনসেবাকে জনবান্ধব ও জেন্ডার সংবেদনশীল করার জন্য অন্তর্ভূক্তিমূলক বাজেট প্রণয়ন দরকার। একই সাথে জনসেবা খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি।”

সম্মেলনের ধারণাপত্রে জনসেবা খাতের উন্নতিতে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। যেখানে বলা হয় সঠিক জনসেবা নিশ্চিতের জন্য জনসেবা হতে হবে জেন্ডার সংবেদনশীল; জনসেবার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো জোরদার করার পাশাপাশি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা; স্থানীয় চাহিদার প্রতিফলন ঘটাতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা।

এমআর/