সৌরজগতের নতুন গ্রহ ‘হাইজিয়া’

মহাকাশের গোপন রহস্য উদঘাটনে বহুদিন ধরে মজে রয়েছেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। এবার সৌরজগতের মধ্যেই খোঁজ মিলল আরেকটি নতুন মহাকাশীয় শরীরের। মনে করা হচ্ছে, ইনি সৌরজগতের সবচেয়ে ছোট গ্রহ অর্থাৎ প্ল্যানেট। ইউরোপিয়ান সাউথ অবজারভেটরি বিজ্ঞানীরা এই ছোট্ট গ্রহের খোঁজ পেয়েছেন। যার নামকরণ করা হয়েছে ‘হাইজিয়া’। এই গ্রহের ব্যাস মাত্র ৪৩০ কিলোমিটার।

গ্রহ হিসেবে সংজ্ঞায়িত হতে গেলে কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের প্রয়োজন হয়। যথাযথ ভর ও গোলাকার আকৃতি রয়েছে এই ছোট্ট গ্রহের। এই গ্রহ আবিষ্কারের জন্য অবশ্যই স্পিয়ার যন্ত্রটিকে বাহবা দেওয়া উচিত। এই যন্ত্রটি হাইজিয়ার আকৃতি বলে দিতে সক্ষম হয়েছে। উল্লেখ্য, মহাকাশ বিজ্ঞানে অন্যতম শক্তিশালী ইমেজিং সিস্টেম এই যন্ত্রটি। সৌরজগতে হাইজিয়াকে বামন গ্রহ হিসেবে তালিকাবদ্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে।

জানা যাচ্ছে, হাইজিয়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে ছোট গ্রহের মর্যাদা দেওয়ার আগে, আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান ইউনিয়নের দ্বারা সমস্ত তথ্য পর্যালোচনা করে তাদের অনুমতি গ্রহণ করা দরকার। উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে প্লুটোর গ্রহত্ব বাতিল করে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বামন গ্রহের দলে, যদিও তার ব্যাস ২,৪০০ কিলোমিটার।

‘ডিজিটাল ট্রেন্ডস’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মহাকাশীয় কংগ্রেসে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা (NASA)-র পদস্থ কর্মকর্তা জিম ব্রিডেনস্টাইন বলেন যে প্লুটোর ভূমিপৃষ্ঠের নীচে রয়েছে একটি আস্ত মহাসাগর। তাছাড়াও প্লুটোর আছে নিজস্ব দুটি উপগ্রহ বা চাঁদ, এবং তার বায়ুমণ্ডলে রয়েছে জটিল জৈব পদার্থ, যার ফলে অনেকেই তাকে সাধারণ গ্রহ বলে মনে করে থাকেন।

তবে পুরোদস্তুর গ্রহের মর্যাদা পেতে গেলে যা সর্বোপরি প্রয়োজন, তা সোজা বাংলায় বললে দাঁড়ায়, নিজের কক্ষপথের পরিপার্শ্বে তার মাধ্যাকর্ষণের আধিপত্য বিস্তার করতে পারে, এমন কোনও মহাজাগতিক জ্যোতিষ্ককেই গ্রহ বলা যাবে। এই ক্ষেত্রে প্লুটো ব্যর্থ, কারণ তার কক্ষপথের পারিপার্শ্বিকে রয়েছে একাধিক গ্রহাণু (asteroid) এবং অন্যান্য মহাজাগতিক বস্তু।

এ নিয়ে দ্বিমতও রয়েছে অবশ্য। বর্ষীয়ান জ্যোতির্বিজ্ঞানী ডাঃ অ্যালান স্টার্নের মতে, এমন অনেক গ্রহ রয়েছে, যেমন মঙ্গল (Mars), বৃহস্পতি (Jupiter), নেপচুন, এমনকি আমাদের পৃথিবীও, যারা নিজেদের কক্ষপথে পূর্ণ আধিপত্য বিস্তার করতে পারে না। ২০০৬ সালে বিবিসি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “নেপচুন যদি নিজের কক্ষপথ থেকে সবাইকে সরিয়ে দিত, তবে প্লুটোও থাকতে পারত না ওই অঞ্চলে।”

আজকের বাজার/লুৎফর রহমান