স্কুলে নিয়মিত উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ

শিশুদের শিক্ষাগত সাফল্য লাভের পথে বুনিয়াদি কাজগুলোর পাশাপাশি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল প্রতিদিন স্কুলে আসা। গবেষণায় দেখা গেছে, ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতির হার সম্ভবত তাদের শিক্ষাগত সাফল্যের পিছনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করে থাকে।নিয়মিত স্কুলে উপস্থিতির ফলে শিক্ষার্থীরা প্রতিদিনের পাঠ ও অ্যাসাইনমেন্টের সাথে সমানতালে অগ্রসর হতে পারে এবং প্রশ্নোত্তরে ও পরীক্ষায় যথাসময়ে অংশগ্রহণে সক্ষম হয়। তদুপরি তা বিরতিহীন সুষ্ঠু শিক্ষা-প্রক্রিয়া নিশ্চিত করে। এ ছাড়াও আরো যে সব উপকারিতা আছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-
সাফল্য
দেখা গেছে, যে শিক্ষার্থী নিয়মিত স্কুলে আসে সে নিয়মিত না আসা শিক্ষার্থীর তুলনায় যে কোনো মূল্যায়নে উত্তীর্ণ হয়ে যায়। অনেকেই ভাবতে পারেন যে, অনুপস্থিত থেকে পাঠ্য বই পড়ে নিয়ে পাঠ পুষিয়ে নেবে। কিন্তু মনে রাখবেন, আমরা শিক্ষার অত্যাধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকি। ফলে ক্লাসেই শিক্ষার্থীরা আলাপ-আলোচনা করে, একে অপরের কাছ থেকে শেখে এবং সক্রিয়ভাবে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। সুতরাং তারা যদি ক্লাসে না আসে তাহলে তারা এগুলো থেকে বঞ্চিত হয় এবং শুধুমাত্র পাঠ্যপুস্তক পড়ে এ সব চিন্তা-ভাবনা করার দক্ষতা অনুশীলন করা যায় না। আসলে ক্লাসের পাঠ বাদ পড়ে গেলে তা পুষিয়ে নেওয়া কোনোভাবেই সহজসাধ্য নয়।
সুযোগ-সুবিধা- একটু উপরের ক্লাসের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন স্কুলে এলে বিভিন্ন কলেজ ও স্কলারসশিপ সম্পর্কে জানার এবং স্কুলের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকা-গুলোতে অংশ গ্রহণ করার সুযোগ পেয়ে থাকে। সফল শিক্ষাজীবন গড়ে তোলার জন্য যা খুবই জরুরি।
বুদ্ধিমত্তা বাড়ানো- নিয়মিত ক্লাসে হাজির হলে শিক্ষার্থীরা দুর্বল বিষয়গুলোতে শিক্ষকের সহায়তা নিয়ে সবল হয়ে উঠতে পারে। তাছাড়া ক্লাসে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে, ব্যাখ্যা চাইতে পারে এবং সরাসরি শিক্ষকের কাছ থেকে শিখতে সক্ষম হয়। মনে রাখবেন, আমাদের শিক্ষকগণ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং আমাদের কারিকুলাম অনুযায়ী শিক্ষা দানে দক্ষ। সুতরাং শিক্ষার্থীদের উচিত ক্লাসে উপস্থিত হয়ে খুব সহজেই নিজেদের বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতা বাড়ানোর এসব সুযোগ গ্রহণ করা।
স্কুল-কমিউনিটির অংশ হওয়া- কেবল স্কুলে উপস্থিত হলেই হয়ে যায়, তারপর স্কুলের কার্যক্রমে অংশ নিয়ে, মূল্যবান সামাজিক দক্ষতা লাভ করে উদার-বিশ্ব মনোভাব গড়ে তুলতে পারে এবং শিখতে পারে কীভাবে একজন সুনাগরিক হওয়া যায়। তাছাড়া ক্যাম্পাসে সব কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার ও নির্মল আনন্দ পাওয়ার মতো অনেক অনুষ্ঠান হতে থাকে যেগুলোতে অংশ নিতে পারে।
স্কুলে উপস্থিত হওয়ার ব্যাপারে আপনি উদ্যোগী হলে তা আপনার সন্তানকে এই বার্তা দেবে যে, প্রতিদিন স্কুলে উপস্থিত হওয়া শিক্ষা-প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং স্কুলে যাওয়াসহ সব ধরণের দায়িত্ব আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।

যদিও কখনো কখনো এমন পরিস্থিতি দেখা যায় যাতে শিক্ষার্থীরা স্কুলে অনুপস্থিত থাকতে বাধ্য হয়। এ ধরণের পরিস্থিতি দেখা দিলে আপনার সন্তান যাতে সেদিনের কোনো পাঠ মিস করে পিছিয়ে না পড়ে তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য অনতিবিলম্বে স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করুন। মনে রাখবেন-কারণ ছাড়া অনুপস্থিত থাকলে তা শিক্ষার্থীর রেকর্ডভুক্ত হয়ে থাকে এবং ক্লাস কামাই দেওয়ার পরিণতিগুলোর মধ্যে রয়েছে পাঠে পিছিয়ে পড়া এবং পারফর্মেন্স খারাপ হওয়া।
কখন আপনার শিশুটি স্কুলে অনুপস্থিত থাকতে পারে?
যখন সে অসুস্থ থাকে।
এড়ানো যায় না এমন একটি চিকিৎসাগত বা দাঁত সংক্রান্ত এপয়েন্টমেন্ট।
একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছে।
একটি বিশেষ পারিবারিক ঘটনা, উদাহরণস্বরূপ বিবাহ বা একটি মৃত্যু
অনুপস্থিতির জন্য কিছু অসম্মত কারণসমূহ।
জন্মদিন।
আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া।
কেনাকাটা।
চুল কাটার ব্যবস্থা।
পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের দেখাশোনা করা।
স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা যদি আপনার শিশুটিকে স্কুল কামাই করতে হয় তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার তা স্কুলে জানানো উচিত, তা অনুপস্থিতির প্রথম দিনে করলেই ভাল হয়।
আপনি যদি অনুপস্থিতির বিষয়টি আগে থেকেই জানেন তাহলে যতগুলি সম্ভব নোটিশ এবং পূর্ণ বিবরণ দিয়ে স্কুলের থেকে অনুমতি চাওয়া উচিত।
স্কুল চলাকালীন কি শিশুকে ছুটিতে নিয়ে যেতে পারি?
যেক্ষেত্রে সম্ভব সেক্ষেত্রে স্কুলে অনুপস্থিতি এড়িয়ে চলা উচিত।
এর ফলে আপনার শিশুর শিক্ষায় বাধা পড়ে এবং স্কুলের মধ্যে তাদের সম্পর্কগুলিকে প্রভাবিত করে।
আপনি যদি স্কুল চলাকালীন ছুটির পরিকল্পনা করেন তাহলে আপনার শিশুর পড়াশোনার ক্ষতি হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা দিতে না পারতে পারে।
আপনি উচিত আপনার শিশুটির স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করা যেহেতু এরকম একটি অনুপস্থিতির স্বীকৃতি কেবলমাত্র স্কুলই দিতে পারে।
আপনার শিশুটির স্কুলটি যে অনুপস্থিতির স্বীকৃতি দেবে তা আশা করবেন না যেহেতু তাদের নীতি অনুযায়ী স্কুল চলাকালীন সকল ছুটিই অনুপস্থিতি হিসাবে গণ্য করা হতে পারে।
আগেভাগে প্লান করে নিলে সন্তানের স্কুলে অনুপস্থিতি কমানো সম্ভব। তাই অভিভাবক হিসাবে আপনি আপনার সন্তানের স্কুলে উপস্থিতিকে অগ্রাধিকার দিন এবং আপনার সন্তান যাতে পিছিয়ে না পড়ে সে ব্যাপারে তাকে সহায়তা করুন। এ ব্যাপারে এখানে কিছু পরামর্শ রয়েছে-

প্রতিদিন যথাসময়ে স্কুলে আসতে আপনার সন্তানকে সহায়তা করুন।কারণ যদি দেরি করে আসে তাহলে প্রতিদিন সকালে এসেম্বলির সময় অথবা হোমরুমে যেসব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা হয় সেগুলো শিক্ষার্থীর জানা হয়ে ওঠে না। তাই কীভাবে অ্যালার্ম ঘড়ি ব্যবহার করতে এবং সকালে টেলিভিশন বন্ধ রাখতে হয় তা আপনি আপনার সন্তানকে শিখিয়ে দিতে পারেন।
আগের রাতেই পরের দিনের প্লান করে ফেলা-আগের দিন রাতেই জামা-কাপড় গুছিয়ে এবং ব্যাগ সাজিয়ে রেখে পরের দিনের স্কুলের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখার ব্যাপারে আপনার সন্তানকে উৎসাহিত করতে পারেন।
অস্থিরতার সম্ভাব্য কারণ সন্ধান-আপনার সন্তানকে যদি প্রায়শ হতাশ মনে হয় বা স্কুলে যেতে না চায় এবং এসবের কারণ না বলে তাহলে তার অস্থিরতার সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে কথা বলার জন্য ক্লাস টিচার/অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার/স্কুল কাউন্সিলারের সাথে দেখা করুন।
চিকিৎসকের সাথে সাক্ষাৎ কিংবা অসুস্থতার কারণে আপনার সন্তানের স্কুল কামাই দেওয়ার হার কমিয়ে আনার চেষ্টা করুন-সম্ভব হলে যে সব দিন স্কুল খোলা থাকে সে সব দিনে চিকিৎসকের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করার সময় নির্ধারণ করা থেকে বিরত থাকুন। ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত হলে কিংবা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে কেবলমাত্র স্কুলে অনুপস্থিত হতে পারে।
সন্তানের স্কুলের সময়সূচিকে মাথায় রেখে পরিবারিক অনুষ্ঠানের সময়সূচি নির্ধারণ করুন-স্কুলের সাপ্তাহিক কিংবা লম্বা ছুটির সময়ে ছুটি উদযাপনের কিংবা পারিবারিক সফরের প্লান তৈরি করুন। জরুরি পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠান হলে কিংবা অপ্রত্যাশিত সফরের দরকার পড়লে যতোটা সম্ভব আগাম আপনার সন্তানের ক্লাস-শিক্ষকের সাথে কথা বলুন এবং এমন উপায় অবলম্বন করুন যাতে আপনার সন্তান আগেভাগে ক্লাসের কাজগুলো করে ফেলতে কিংবা সফরের সময় সাথে নিয়ে যেতে পারে।
সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে উৎসাহিত করুন-আপনার সন্তান যাতে বিপুল পরিমাণ ফল-ফলাদি ও শাকসবজিসহ সুষম খাবার খায় এবং প্রতিদিন ব্যায়াম করার সুযোগ পায় তা নিশ্চিত করুন।
মনোরম পরিবেশ তৈরি করুন-আপনার সন্তান ঘুমাতে যাওয়ার আগে টিভি দেখার মতো উদ্দীপনামূলক কিছুর চেয়ে বরং গল্প-উপন্যাস পাঠের মতো শান্ত একটা কিছু যাতে ক’রে তা নিশ্চিত করুন। আপনার সন্তান যাতে ঘুমানোর জন্য যথেষ্ট সময় পায় তার প্রতি খেয়াল রাখুন। গড়ে ৮ থেকে ১২ ঘন্টা ঘুমানো আদর্শ সময় । যথেষ্ট ঘুমাতে পারলে তারা যথা সময়ে ঘুম থেকে উঠে সকালে ভালো মতো রিফ্রেশ হতে পারবে এবং সামনের পুরো দিনজুড়ে পড়াশোনার জন্য স্বাচ্চন্দ্য বোধ করবে।
আপনার সন্তানের স্কুলে উপস্থিতিকে অগ্রাধিকার দিলে তা হবে আপনার সন্তানের স্কুলে সাফল্য লাভের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ এবং তা হবে একটি শুভ দৃষ্টান্ত স্থাপন ।
আজকের বাজার : সালি / ০৫ নভেম্বর ২০১৭