স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে কাল এ্যাথলেটিকোর মুখোমুখি রিয়াল মাদ্রিদ

সৌদি আরবের ফুটবল সমর্থকরা যখন এল ক্লাসিকোর স্বাদ ঘরের মাঠে উপভোগের ক্ষণ গুনছিল ঠিক সেই সময়ে তাদেরকে হতাশ করেছে বার্সেলোনা। লিওনেল মেসিই হতে পারতেন স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে সৌদি সমর্থকদের সবচেয়ে বড় তারকা। কিন্তু বার্সা নয় প্রথমবারের মত স্পেনের বাইরে অনুষ্ঠিতব্য ঘরোয়া সুপার কাপের ফাইনালে কাল রিয়াল মাদ্রিদের মুখোমুখি হচ্ছে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী এ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ। সেমিফাইনালে এ্যাথলেটিকোর কাছে হেরে সমর্থকদের হতাশ করেছে বার্সেলোনা।

বৃহস্পতিবার জেদ্দার কিং আব্দুল্লাহ স্পোর্টস সিটি স্টেডিয়ামে শেষ ৯ মিনিটের দুই গোলে বার্সাকে নাটকীয় ভাবে ৩-২ গোলে পরাজিত করে ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেছে এ্যাথলেটিকো। অথচ ম্যাচের আগে অনুশীলন শুরুর সাথে সাথেই মেসিকে দেখে সমর্থকরা উল্লাস করতে থাকে। ফাইনালেও তারা রিয়ালের প্রতিপক্ষ হিসেবে বার্সাকেই দেখতে চেয়েছিল।

তিন বছরের চুক্তিতে টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য ১২০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে সৌদি আরবের কাছে যখন স্প্যানিশ সুপার কাপের স্বত্ত ছেড়ে দিয়েছিল স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন তখন থেকেই তাদের মাথায় রিয়াল ও বার্সার দ্বৈরথই ছিল। এমনকি স্পেনের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি দল যাতে টুর্নামেন্টে খেলতে পারে সে কারণে ফর্মেটেও পরিবর্তন এনে চার দলের সমন্বয়ে চূড়ান্ত পর্ব আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ঐতিহ্যগত এই আসরের ভেন্যু ও ফর্মেট পরিবর্তনে দারুনভাবে সমালোচনাম মুখে পড়তে হয়েছে স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনকে। প্রথাগত ভাবে লিগ চ্যাম্পিয়ন ও কোপা ডেল রে’র বিজয়ীর সুপার কাপের ফাইনালে খেলার কথা।

নতুন ফর্মেট অনুযায়ী লা লিগায় শীর্ষ আরো দুটি দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করায় একটি বিষয় চূড়ান্ত হয়ে গেছে যে প্রতি বছরই বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদকে এই টুর্নামেন্টে দেখা যাবেই।

জেদ্দায় অল মাদ্রিদ ফাইনালে একটি বিষয় অন্তত নিশ্চিত হয়েছে রিয়াল কিংবা এ্যাথলেটিকোর মধ্যে যেকোন একটি দল মৌসুমের প্রথম শিরোপা হাতে নিতে যাচ্ছে। অন্যদিকে বার্সেলোনা ও ভ্যালেন্সিয়াকে আবারো লা লিগায় মনোযোগী হতে হচ্ছে।

টানা সাত ম্যাচে অপরাজিত থাকার পর ভ্যালেন্সিয়া রিয়ালের বিপক্ষে প্রথম সেমিফাইনালে ৩-১ গোলে পরাজিত হয়। অন্যদিকে শেষ মুহূর্তের দুই গোলে এগিয়ে থেকে বার্সেলোনাকে এ্যাথলেটিকোর কাছে পরাজয় বরণ করতে হয়। এই পরাজয়ে কোচ আর্নেস্টো ভালভার্দের উপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি হলো। ইতোমধ্যেই স্প্যানিশ বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে ক্লাবের সাবেক মিডফিল্ডার জাভি হার্নান্দেজের সাথে কাতালান জায়ান্টরা আলোচনা শুরু করেছে। বর্তমানে কাতারী ক্লাব আল সাদের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জাভি।

ভালভার্দে নিজের বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, ‘পরাজিত হলে সবসময়ই একটি অনিশ্চয়তা দেখা দেয়া।’
ফাইনালে জয়ী হতে পারলে রিয়াল কিংবা এ্যাথলেটিকো দুই দলের সামনেই দারুণ এক আত্মবিশ্বাসের পথ খুলে যাবে। লা লিগা শিরোপা দৌড়ে বার্সার সাথে সমান তালে লড়াই করে চলা রিয়াল নিজেদের আরো এগিয়ে নিয়ে যাবার সাহস পাবে। অন্যদিকে তৃতীয় স্থানে থাকা এ্যাথলেটিকো পাঁচ পয়েন্টের ব্যবধান কমানোর আত্মবিশ্বাস যোগাবে।

ইতোমধ্যেই বার্সেলোনাকে পরাজিত করে দারুণ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে দিয়েগো সিমিওনের দল। এখন রিয়ালকে হারাতে পারলে মৌসুমের দ্বিতীয় ভাগে অন্য এক এ্যাথলেটিকোকে দেখা যাবে বলেই অনেকে মত দিয়েছেন। আগামী মাসে ইউরোপের বর্তমান সময়ের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দল লিভারপুলের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ১৬’তে মুখোমুখি হবার আগে লা লিগায় ক্যাম্প ন্যু ও সান্তিয়াগো বার্নাব্যু সফরে যাবে এ্যাথলেটিকো। এ্যাথলেটিকো বস সিমিওনে বলেছেন, ‘একটি ক্লাবের জন্য এটাই গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা বিশ্বের সবচেয়ে আক্রমনাত্মক দলটিকে পরাজিত করেছি। এখানেই আমাদের আত্মবিশ্বাস, আমাদের লক্ষ্য প্রমাণিত হয়। এ্যাথলেটিকো ক্লাবটি এমনই।’

অন্যদিকে ভ্যালেন্সিয়াকে হারিয়ে টানা ১৫ ম্যাচ অপরাজিত রয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। এমনকি সেমিফাইনালের ঐ ম্যাচে ইনজুরি ও অসুস্থতার জন্য দলে ছিলেন না সর্বোচ্চ গোলদাতা করিম বেনজেমা ও গ্যারেথ বেল। যদিও শ্বাসনালীর প্রদাহে ভুগতে থাকা বেলকে এখনো রোববারের ফাইনাল থেকে একেবারে বাদ দিয়ে দেননি কোচ জিনেদিন জিদান। সেমিফাইনালে এ্যাথলেটিকোর পারফরমেন্স বিচারে ১১বারের মত স্প্যানিশ সুপার কাপ জয়ে রিয়ালকে সে কারনে সুস্পষ্ট ফেবারিট হিসেবে কেউই দেখছেন না।

আজকের বাজার/লুৎফর রহমান