স্বাধীনতা স্তম্ভ হতে পারে ঢাকার ‘আইকন’

একটি শহরের প্রতিছব্বি ভেসে ওঠে একটি স্থাপনায়। পৃথিবীর বিখ্যাত শহরগুলোর বিখ্যাত স্থাপনার ক্ষেত্রে এ-কথা বলাই যায়। স্থাপনাগুলো নির্মাণশৈলী, দৃষ্টিনন্দনতা, বিশালতা দিয়ে এতটাই বিখ্যাত হয়ে উঠেছে যে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্থাপনার সূত্র ধরে শহরের পরিচিতি ঘটে।

প্যারিসের আইফেল টাওয়ার, নিউইয়র্কের স্ট্যাচু অব লিবার্টি, সিডনির অপেরা হাউজ, লন্ডনের বিগবেন, কুয়ালালামপুরের টুইন টাওইয়ার এমন অসংখ্য চোখধাঁধানো অনন্য নির্মাণশৈলীর স্থাপনাগুলো নিজেদের পরিচয়ে শহরকে পরিচিত করেছে।

স্থপতি রবিউল হুসাইন মনে করেন, আমাদের প্রিয় নগরী ঢাকার জন্য এমন একটি স্থাপনা নির্মাণ প্রয়োজন। যা স্থাপনার পরিচয় অতিক্রম করে হয়ে উঠবে নগরীর আইকন। যেখানে থাকবে বিশালত্ব এবং নির্মাণশৈলীতে দৃষ্টিনন্দনতার ছাপ।

তিনি বলেন,হাতিরঝিলে এমন স্থাপনা তৈরি করা যেতে পারে। ঢাকার ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য আরও একটি উদ্যোগে নেয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন এই স্থপতি। তিনি বলেন, বিশ্বের বিখ্যাত নগরীগুলোতে শহরের একটা মডেল থাকে। চীন ও ইসলামাবাদের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, নগরভবনেই এই উদ্যোগ থাকতে পারে। এসব দেশে এমনভাবে মডেলগুলো তৈরি করা হয়েছে, মনে হয় সত্যিকার-অর্থেই শহরটা এক নজরে দেখে নেয়া গেল। ঢাকার এমন একটি মডেল তৈরির উদ্যোগ নিতে কতৃপক্ষকে পরামর্শ দেন তিনি।

ঢাকার আইকন প্রসঙ্গে নগরবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলামের ভাবনাটা অন্যরকম। তিনি বলেন, ‘বিশ্বখ্যাত স্থাপনা যেভাবে অনেক বিখ্যাত শহরের আইকন হয়ে উঠেছে, আমাদের নগরী ঢাকার বেলায় সেরকম একটি স্থাপনার কথা চিন্তা করা কিছুটা কঠিন। মোগল আমলের লালবাগ, ব্রিটিশ আমলের কার্জন হল, পাকিস্তান আমলের বায়তুল মোকাররমের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন,আইকন হয়ে উঠতে হলে যতগুলো বৈশিষ্ট্য প্রয়োজন, এগুলোর কোথাও কোথাও ঘাটতি রয়েছে। লালবাগ কেল্লা যেমন অনন্য স্থাপনা কিন্তু ফটোগ্রাফিক উপস্থাপনায় কিছুটা দুর্বল। বিশালতার তুলনায় দুর্বল কার্জন হল।

আর এসব কারণে এগুলোকে আইকন-স্থাপনা ভাবতে তিনি সহমত পোষণ করেন না। জাতীয় শহীদ মিনারের স্থাপনা হিসেব মানসিক উদ্দীপনা তৈরি করার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে। নির্মাণে রয়েছে একটি ইতিহাসের উপস্থাপনও, তবে নির্মাণশৈলীতে খানিকটা দুর্বল বলে মনে করেন নজরুল ইসলাম। জাতীয় স্মৃতিসৌধ অনন্য কিন্তু ঢাকার বাইরে। জাতীয় স্মৃতিসৌধকে বরং বাংলাদেশের আইকন বলছেন তিনি। সেক্ষেত্রে জাতীয় সংসদ ভবনের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। তবে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, এই স্থাপনাটি গুরুত্বপূর্ণ সন্দেহ নেই, দৃষ্টিনন্দন নিয়েও দ্বিমত নেই কিন্তু এর নির্মাণের উদ্যোক্তা স্বৈরশাসক আইয়ুব খান এবং স্থপতিও বিদেশি। ফলে এটা আমাদের গর্বের জায়গাটি নিতে পারেনি। তাই সংসদ ভবন পৃথিবীর বিখ্যাত সংসদ-স্থাপনাগুলোর অন্যতম হলেও আইকন হিসেবে উপস্থাপনে পক্ষপাতী নন তিনি।

অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, সাম্প্রতিক স্থাপনাগুলোর মধ্যে যে স্থাপনাটি ঢাকার প্রতীক বা আইকন হতে পারে, সেটি হলো স্বাধীনতা স্তম্ভ। সোহরাওর্য়ার্দী উদ্যানে তরুণ স্থপতিদের নির্মিত এই স্থাপনাটি ইতিহাসের উপস্থাপনা। এর বিশালত্ব আছে। সবুজের মাঝে এর স্থাপন। বাংলাদেশি চেতনার প্রতিচ্ছবি যেন এই স্থাপনাটি। এটি গর্বের স্থাপনা। আবার নির্মাণশৈলীও অনন্য। এই স্থাপনা ঘিরে আরও পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। পুরোটা বাস্তয়াবিত হলে এটা হয়তো আরও অনন্য হয়ে উঠবে। তবে আমার মনে হয়, এই স্থাপনাটিকেই ঢাকার আইকন বা প্রতীক হিসেবে পরিচিত করা যেতে পারে।

আজকের বাজার: সালি / ৩০ জানুয়ারি ২০১৮