হিজাব পরে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসায় ছাত্রীর খাতা কেড়ে নিল শিক্ষক!

হিজাব পরে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ায় এক পরীক্ষার্থীর খাতা কেড়ে আধা ঘণ্টা আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ওই শিক্ষক গাজীপুরের কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক পলাশ কান্তি বিশ্বাস। অভিযোগের সূত্রপাতও ঘটে একই কলেজ কেন্দ্রে।

তারাগঞ্জ এইচ এন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগের ছাত্রী সামিয়া জাহান সুপ্তা মুখ খুলে পৌরনীতি ও সুশাসন দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষায় অংশ নেন। বহু নির্বাচনী পরীক্ষা শেষে লিখিত পরীক্ষার সময় পলাশ কান্তি খাতা কেড়ে নেন।

কারণে সুপ্তাকে তিনি বলেন, হিজাব পরে এ কলেজে পরীক্ষা দেওয়া যাবে না। হিজাব পরে কলেজে পড়ছ কেন? মাদ্রাসায় গিয়ে ভর্তি হও।

সুপ্তা কান্নাকাটি ও অনেক অনুরোধ করেও খাতা না পেয়ে বেরিয়ে যেতে চাইলে অপর শিক্ষক খাতা ফেরত দিতে পলাশকে অনুরোধ করেন।

তখন ওই শিক্ষককে ধমকের স্বরে পলাশ বলেন, “যখন খুশি খাতা ফেরত দেব। এ বিষয়ে কোনো কথা বলবেন না।”

পরে ওই শিক্ষকের পরামর্শে সুপ্তা বসে থাকলে প্রায় আধা ঘণ্টা পর খাতা ফেরত দেওয়া হয়। ততক্ষণে তার অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়।

পরীক্ষা শেষে সুপ্তার ভাই সাদিউল হোসেন সোহাগ তার বোনের খাতা কেড়ে নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে পলাশ কান্তি তার সঙ্গেও খারাপ আচরণ করেন।

সোহাগ জানান, বোরকার সঙ্গে হিজাব পরলেও কলেজের ২০১ নম্বর কক্ষে অন্যদিনের মতই মুখ খুলে পরীক্ষায় অংশ নেয় সুপ্তা।

পরে সুপ্তার বাবা আব্দুস সালাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং সংশ্লিষ্ট কলেজের অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ দেন।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তার মেয়ে প্রথম থেকেই মুখ খোলা হিজাব পরে পরীক্ষা দিচ্ছে। এত দিন কোনো অসুবিধা না হলেও আজ খাতা আটকে রাখা হল।

অভিযুক্ত প্রভাষক পলাশ কান্তির ভাষ্য, ওই ছাত্রীর কানে ইলেকট্রিক ডিভাইস আছে কি না, তা নিশ্চিত হতে হিজাব সরাতে পরপর তিনবার নির্দেশ দিই। কিন্তু হিজাব খুলতে অস্বীকার করায় তার খাতা আটক করি।

“কিছুক্ষণ পর কান থেকে হিজাব সরালে তাকে খাতা ফিরিয়ে দিই।”

খাতা আটকে রাখার বিধান জানতে চাইলে পলাশ কান্তি বলেন, কোনো বিধান আছে কি-না তা জানা নেই।

কলেজের অধ্যক্ষ মো. ছানাউল্লাহর ভাষ্য, ইউএনওর নিকট থেকে বিষয়টি জেনে পলাশ কান্তিকে অফিসে ডাকা হয়। সবকিছু জেনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসমত আরা বলেন, আমি শিক্ষক পলাশকে বিকেলে অফিসে ডেকে আনি। তিনি কানের ওপর থেকে হিজাব সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন।

“পরীক্ষার হলে দায়িত্বরত অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে দোষী প্রমাণিত হলে পলাশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অভিযোগ, পলাশ কান্তি তার কাছে প্রাইভেট পড়তে শিক্ষার্থীদের চাপ দেন। এ ছাড়া নিজের লেখা গাইড বইও পড়তে বাধ্য করা হয়।