হোঁচট খেল এয়ারপোর্ট সড়কের শ্রী বর্ধন

হোঁচট খেল নানা সমালোচনার পরেও এগিয়ে চলা বনানী-এয়ারপোর্ট সড়কের নিরাপত্তা ও শ্রী বর্ধনের কাজ। বিদেশি কোম্পানির অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটিকে নতুনভাবে প্রস্তাবনা দিতে বলেছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় বনানী-টঙ্গী-জয়দেবপুর মহাসড়কের বনানী রেল ক্রসিং হতে এয়ারপোর্ট মোড় পর্যন্ত উভয় পাশে ৬ কিলোমিটার সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ সম্পাদনের জন্য পাঠায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।

প্রস্তাবনায় বলা হয়- বনানী-টঙ্গী-জয়দেবপুর মহাসড়কের বনানী রেল ক্রসিং হতে এয়ারপোর্ট মোড় পর্যন্ত মহাসড়কাংশটি এয়ারপোর্ট সড়ক নামে পরিচিতি। এ সড়কে প্রতিদিন বিদেশি-ভিভিআইপি, ভিআইপিসহ সাধারণ মানুষ যাতায়াত করেন। কিন্তু সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ক্ষুদ্র আরববিকালচার ইউনিট দ্বারা সড়কটির সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ সঠিকভাবে করা সম্ভব হচ্ছিল না। ৯০ দশকের করা কাজের সঙ্গে আধুনিক সুবিধা যোগ করে যুগোপযোগী করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এ প্রেক্ষিতে মহাসড়কটির রক্ষণাবেক্ষণ ও সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য স্পন্সর নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, গত বছর দরপত্রের মাধ্যমে বনানী-এয়ারপোর্ট মোড় পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার মহাসড়কাংশটি রক্ষণাবেক্ষণ ও সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ১০ বছর মেয়াদে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপকে নিয়োগ দেওয়া হয় । সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রতিষ্ঠানটি ব্যয় করবে ৯০ কোটি ২২ লাখ ৪২ হাজার টাকা। আর এলইডি ডিসপ্লে বোর্ড, ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড, ডিজিটাল বিলবোর্ড ইত্যাদি স্থাপনের মাধ্যমে ৯৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকার আর্থিক সুবিধা নেবে প্রতিষ্ঠানটি।

মন্ত্রিসভা কমিটি প্রস্তাবনাটি পর্যালোচনা করে পুনরায় পাঠানোর জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ নির্দেশনা দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মন্ত্রিসভা কমিটির আজকের সভায় বনানী-এয়ারপোর্ট মোড় পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার মহাসড়কাংশটি রক্ষণাবেক্ষণ ও সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ১০ বছর মেয়াদে স্পন্সর প্রতিষ্ঠান দ্বারা সম্পাদনের প্রস্তাবটি অনুমোদন দেয়নি। নতুন করে প্রস্তাবণা তৈরি করতে বলা হয়েছে।

এদিকে, স্পন্সর প্রতিষ্ঠান ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপ মহাসড়কাংশটি রক্ষণাবেক্ষন ও সৌন্দর্য বর্ধনের এগিয়ে এনেছে। অধিকাংশ স্থানে উঠে গেছে নিরাপত্তা দেওয়ালের মূল কাঠামো। বাকি অংশের দেয়ালও নির্মাণাধীণ। গত ফেব্রুয়ারি মাসে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রকল্পের সূচনা করেন। এরইমধ্যে বেশ এগিয়েছে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ।

যদিও প্রকল্পটির শুরুতেই বনসাই গাছ লাগানো নিয়ে তোপের মুখে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। অভিযোগ উঠে- আসল’ গাছ কেটে ‘নকল’ গাছ লাগানোর। সড়কের ধারের কৃষ্ণচূড়া, রাঁধাচূড়া এবং অন্যান্য নানান জাতের গাছ কেটে বিদেশ থেকে আমদানি করা বনসাই গাছ লাগানো হয়েছে। এতে রাস্তার ধারের সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্দেশ্য কতটুকু পূরণ হয়েছে সে প্রশ্ন উঠেছে। পরবর্তীতে বনসাই লাগানো বন্ধের নির্দেশনা দেয় মন্ত্রণালয়।

গত জুন মাসে মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে জানায়, আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর বিমানবন্দর সড়কে সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এ কর্মসূচীর আওতায় বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ গাছের চারা লাগানো হবে। দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ও শোভাবর্ধক গাছ লাগানোর মধ্যদিয়ে এ সড়কের দু’পাশ সবুজায়ন করা হবে।

মন্ত্রণালয় সূত্র অনুযায়ী, মহাসড়টির পাশে থাকবে দীর্ঘ ৬ কিলোমিটার পরিচ্ছন্ন হাঁটার পথ। যে পথের ওপরই রঙিন ঘাসের ওপরে মাথা তুলবে বনসাঁই-বট, ঝাউ আর রকমারি ফুলের গাছ। রাতে মাথার ওপরে স্নিগ্ধ আলো ছড়াবে ঝাড়বাতি আকৃতির ল্যাম্প পোস্ট। থাকবে নিরাপত্তা দেওয়াল। ৪ থেকে ৭ ফুট উচ্চতার এই দেওয়াল বসবে সড়কের উত্তর পাশে। সে দেওয়াল আবার মোড়ানো থাকবে সবুজ লতায়। এর ওপর দিয়ে দেখা যাবে জোড়া লাইনে ট্রেনের আসা-যাওয়া। কিন্তু দেওয়াল অতিক্রম করে বাইরে থেকে ভেতরে, বা ভেতর থেকে বাইরে যাওয়া সম্ভব হবে না। তাই দিন-দুপুর কি রাত-বিরেতে নিশ্চিত মনে হাঁটা যাবে ফুটপাতে।
সূত্র:অর্থসূচক

আজকের বাজার:এলকে/এলকে/ ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭