১২ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব

আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ১২ লাখ ৪০ হাজার ৯০ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা পেশ করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।

সমিতির প্রস্তাবিত বাজেটের আকার চলতি অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় ২ দশমিক ৬৭ গুন বেশি। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ১০ লাখ ২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা। যার মধ্যে ৬৯ শতাংশ হবে প্রত্যক্ষ কর এবং ৩১ শতাংশ পরোক্ষ কর। অর্থ্যৎ মোট বাজেট বরাদ্দের প্রায় ৮১ শতাংশের যোগান দেবে সরকার। বাকী ১৯ শতাংশ যোগান দেবে সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারিত্ব,বন্ড বাজার,সঞ্চয়পত্র এবং দেশীয় ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ।

শনিবার রাজধানীর সিরডাপ সম্মেলনকক্ষে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে মুক্তিযদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ বিনির্মাণ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সভাপতি ড. আবুল বারকাত বিকল্প বাজেট উপস্থাপন করেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের উৎস হিসেবে ২০টি নতুন উৎস নির্দিষ্ট করা হয়েছে, যা আগে ছিল না।এর মধ্যে অর্থপাচার রোধ,কালো টাকা উদ্ধার ও সম্পদ কর এই তিনটি উৎস থেকেই সরকার মোট ৯৫ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় করতে পারে। আর এ টাকা দিয়ে প্রতিবছর তিনটি পদ্মা সেতু করা সম্ভব।’

আবুল বারকাত বলেন,আসন্ন বাজেটে সামনে বছরের জন্য মোট দেশজ উৎপাদনের প্রাক্কলিত প্রবৃদ্ধি ধরা হবে হয়ত ৮ থেকে ৮.৫ শতাংশ। স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশে এ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। তবে প্রবৃদ্ধির সাথে আয় বৈষম্য হ্রাস-এই নির্দেশনা বাজেটে স্পষ্ট থাকতে হবে।

অর্থনীতি সমিতি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খাতওয়ারি সর্বোচ্চ বরাদ্দ প্রস্তাব করেছে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট ২ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।এরপর পর্যায়ক্রমে রয়েছে জনপ্রশাসন,পরিবহন ও যোগাযোগ,বিদ্যুৎ ও জ্বালানী, স্বাস্থ্যখাত,সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাত।

কৃষকের ধানের ন্যাষ্যা মূল্য নিশ্চিত করতে চাল আমদানির ওপর ২০০ শতাংশ শুল্ক কর বসানোর প্রস্তাব করা হয়।

খেলাপী ঋণ প্রসঙ্গে আবুল বারকাত প্রস্তাব করেন,‘অভ্যাসগত ঋণখেলাপীদের মোকাবেলার জন্য সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী।তবে তাদের পূর্ণউদ্যমে চালু শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা ঠিক হবে না। সমস্যাটি জটিল তবে সমাধান সম্ভব বলে মনে করি।’

আগামী ৩ বছরের মধ্যে কমপক্ষে ৫ লাখ ভ্যাট লাইসেন্সধারীকে ভ্যাটের আওতায় আনার প্রস্তাব করেছে অর্থনীতি সমিতি। এ প্রসঙ্গে সমিতির সভাপতি বলেন,জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে বাংলাদেশের ভ্যাট লাইসেন্সধারীর সংখ্যা প্রায় ৯ লাখ। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে বড়জোর ১ লাখ লাইসেন্সধারীর কাছ থেকে (মোট ভ্যাট লাইসেন্সধারীর ১০ শতাংশ) বর্তমানে ভ্যাট আদায় হয়।
অর্থনীতি সমিতির অন্যান্য প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে-ব্যক্তি পর্যায়ে কর হার কমিয়ে ৩ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ রাখা, বছরে কমপক্ষে ১ কোটি টাকা বা তার বেশি ব্যক্তিগত আয়কর দেবার যোগ্য করদাতার সংখ্যা ৫০ হাজারে উন্নীত করা,৩০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ কালো টাকা উদ্ধার অর্থপাচার রোধ থেকে আগামী অর্থবছরে ৩৫ হাজার কোটি টাকা আদায়,ভূমিহীন ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য সুদবিহীন ঋণ ও বীমা, রেমিটেন্স প্রবাহকে ফলপ্রদ উৎপাদনশীল বিনিয়োগে ব্যবহার,সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু,প্রবীণ মানুষদের জন্য ‘প্রবীণ নীড়’ গড়ে তোলা, পেনশনভোগীদের পেনশনের অর্থ বিনিয়োগের আয় থেকে সব ধরণের আয়কর,কর, শুল্ক সম্পূর্ণ রহিত করা।

আবুল বারকাত বলেন,আমাদের এ বছরের বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনার এক ভিন্ন মাত্রার ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে, আর তা হলো আগামী বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ। এ বাজেট মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালের বাজেট। আসন্ন অর্থবছরের বাজেট হতে হবে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক দর্শনের প্রতিফলন আমাদের ‘স্বাধীনতার ঘোষণার’ সঙ্গে সম্পূর্ণ সাযুজ্যপূর্ণ,বাজেট হতে হবে ১৯৭২ এর মূল সংবিধানের সঙ্গে পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ।

আজকের বাজার/এমএইচ