২ মাসের মধ্যে ব্যাংক ঋণে সুদের হার কমানোর সুপারিশ

দীর্ঘদিন ধরেই সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাংক ঋণে সুদের হার একক সংখ্যায় নামিয়ে আনতে বলা হচ্ছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন।

এ নির্দেশনা কিছু সরকারি ব্যাংক বাস্তবায়ন করলেও বেসরকারি ব্যাংকগুলো তা মানছে না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক আগামী দুই মাসের মধ্যে সব ব্যাংককে সুদের হার একক ঘরে (নয় শতাংশ) নামিয়ে আনার নির্দেশনা দিয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

১৫ এপ্রিল, সোমবার সংসদ সচিবালয়ের সভাকক্ষে সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়। কমিটির সভাপতি আ. স. ম. ফিরোজের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটি সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, নারায়ণ চন্দ চন্দ্র, মো. মাহবুবউল-আলম হানিফ, মির্জা আজম এবং মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম অংশ নেন।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আ. স. ম. ফিরোজ বার্তা২৪.কমকে বলেন, বেসরকারি ব্যাংকগুলো বলেছিল, সরকারি টাকার ৫০ ভাগ আমানত জমা পেলে তারা একক ডিজিটে সুদ হার বাস্তবায়ন করতে পারবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, তারা সেই সুবিধা নিলেও এখনও সুদের হার একক সংখ্যায় আনতে পারেনি। এজন্য আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে বলে দিয়েছি, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী দুই মাসের মধ্যে ব্যাংক ঋণের সুদের হার একক সংখ্যায় আনতে হবে।

তিনি বলেন, ব্যাংক ঋণে উচ্চ হারে সুদের কারণে ঋণ খেলাপি হয়। ব্যাংকগুলো চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ নিয়ে থাকে। ব্যবসায়ীদের পক্ষে সেই সুদের হার মেটানো অসম্ভব হয়ে যায়। কাজেই আমরা নির্দেশনা দিয়েছি, আগামী এক বা দুই মাসের মধ্যে সব ব্যাংককে নয় শতাংশ হারে সুদ নির্ধারণ করতে হবে।

বৈঠকে বেসরকারি ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদের ডাকা হলেও তাদের কেউ বৈঠকে অংশ নেননি। বৈঠকে আসবেন বলে জানালেও শেষ পর্যন্ত আসেননি তারা। এনিয়ে কমিটিতে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

কমিটি বাংলাদেশ ব্যাংক এবং তফসিলি ব্যাংকের মাধ্যমে একক সংখ্যায় ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ারও সুপারিশ করেছে।
বৈঠকে উল্লেখ করা হয়, রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে সরকারের নীতিমালা জারি করা হয়েছে। নীতিমালার ফলে অনেক রুগ্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান, বন্ধ ও অচল মিল কারখানা সুদ মওকুফ সুবিধা পেয়েছে। ফলে ওই সব প্রতিষ্ঠানের অবশিষ্ট অনাদায়ী/শ্রেণিকৃত ঋণ আদায় সহজ হয়েছে।

বৈঠকে আরো উল্লেখ করা হয়, ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর খেলাপি গ্রাহকের তথ্য নিজেদের মধ্যে আদান প্রদান করতে পারছে। ফলে এক ব্যাংকের খেলাপি গ্রাহক অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ পাচ্ছেন না।

এছাড়াও বৈঠকে জানানো হয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত পোশাক শিল্পের ২৭৯টি এবং নন টেক্সটাইল শিল্প খাতের দু’দফায় মোট ৪১১টি (১৪৭+২৬৪) প্রতিষ্ঠানকে রুগ্ন শিল্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় এ পর্যন্ত মোট ৪২৬টি রুগ্ন শিল্পের (নন-টেক্সটাইল) জন্য সুদ ভর্তুকিসহ নমনীয় পরিশোধ সূচিতে ঋণ হিসাব অবসায়নে (খরয়ঁরফধঃরড়হ) বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে এবং এ প্যাকেজের আওতায় অধিকাংশ ঋণ হিসাব নিস্পত্তি করা হয়েছে।

বৈঠকে বাংলাদেশ বাংকের ডেপুটি গভর্নর, রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।