২ মাসের মধ্যে ভোক্তা-অধিকারকে হটলাইন চালুর নির্দেশ

ভোক্তাদের অভিযোগ শুনতে দুই মাসের মধ্যে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে হটলাইন চালুর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

রোববার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালত বলেছেন, ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে ০১৭৭৭৭৫৩৬৬৮ নম্বরে যোগাযোগ করে অভিযোগ জানাতে পারবেন ভোক্তারা। পাশাপাশি ৯৯৯ এবং ৩৩৩ তে কল করেও অভিযোগ জানানো যায়। এই তিনটি নম্বরে ছুটির দিনসহ ২৪ ঘণ্টা হটলাইন হিসেবে চালু করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যাতে করে ভোক্তারা সবসময় তাদের অভিযোগ জানাতে পারেন।

একইসঙ্গে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনকে (বিএসটিআই) সারা বছরই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়া মানহানীন ৫২ পণ্যের মধ্যে পুনঃপরীক্ষায় উত্তীর্ণ পণ্যগুলোসহ বাজারের সকল পণ্যের মান সব সময় পরীক্ষার (র‌্যান্ডম টেস্টিং) নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

এর আগে রোববার সকালে বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় নিম্নমানের পণ্য বাজার থেকে সরিয়ে নেওয়ার আদেশ বাস্তবায়ন না করায় তলবের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টে উপস্থিত হন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হক।

তিনি আদালতের আদেশ প্রতিপালন না করায় নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে আবেদন করেন। পরে শর্ত হিসেবে মোহাম্মদ মাহফুজুল হক আদালতকে বলেন, ‘বিশেষ কোন মাস বা উপলক্ষকে কেন্দ্র করে নয়, সারাবছরই ভেজাল ও মানহীন পণ্যের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে, ভবিষ্যতে আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে সতর্ক থাকতে হবে এবং জনবল কম থাকলে তা বৃদ্ধি করে অভিযান চালাতে হবে।’

এরপর এসব শর্তের ভিত্তিতে মোহাম্মদ মাহফুজুল হককে আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে ক্ষমা করে অব্যাহতি দেন হাইকোর্ট।

এর আগে গত ২৩ মে হাইকোর্টের ওই বেঞ্চ তাকে তলব করে আদেশ দেন।

এদিকে সম্প্রতি ৪০৬টি খাদ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে বিএসটিআই। এর মধ্যে ৩১৩টি পণ্যের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ৩১৩টির মধ্যে ৫২ পণ্য মানহীন বলে প্রতিবেদন দেয় মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা। বাকি ৯৩ পণ্যের পরীক্ষার ফলাফল প্রতিবেদন রোববার প্রতিবেদন আকারে জমা দেওয়া হয়।

বিএসটিআইয়ের দাখিলকৃত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর আগে বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় যে ৫২ পণ্য মানহীন ছিল তার মধ্যে ৪২টি পণ্য পুনরায় মান পরীক্ষার জন্য আবেদন করেছিল। এর মধ্যে ২৬টি পুনঃপরীক্ষায় মান উত্তীর্ণ হয়েছে। তবে ১৬টি পণ্য নিম্নমানের হওয়ায় সেগুলোর লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। বাকি ১০টি পণ্য এখনো নমুনা দেয়নি। একইসঙ্গে মান পরীক্ষায় বাকি ৯৩টি পণ্যের মধ্যে ২২টিকে মানহীন বলে প্রতিবেদন দাখিল করেছে বিএসটিআই। আদালত এই ২২টি পণ্য বাজার থেকে অবিলম্বে প্রত্যাহারেরও আদেশ দিয়েছেন।

আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খান। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফরিদুল ইসলাম ও বিএসটিআই এর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এম আর হাসান মামুন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান।

এর আগে গত ১২ মে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) এর পরীক্ষায় প্রমাণিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৫২টি ভেজাল ও নিম্নমাণের পণ্য বাজার থেকে যত দ্রুত সম্ভব প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

একইসঙ্গে, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে এ নির্দেশ পালন করে ১০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন আদালত। পাশাপাশি পণ্যগুলোর বিষয়ে যথাযথ আইন অনুসারে তা নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেয়া হয়।

এছাড়াও সংশ্লিষ্ট ভেজাল পণ্যের মানোন্নয়ন না হওয়া পর্যন্ত তা উৎপাদন ও বাজারজাত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন আদালত। কিন্তু আদালতের সে আদেশ প্রতিপালন না করায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে তলব করেন হাইকোর্ট।

আজকের বাজার/এমএইচ