৫ দফা দাবি পূরণ না হলে মিয়ানমারে ফেরত না যাওয়ার ঘোষণা রোহিঙ্গাদের

নিজেদের পাঁচ দফা দাবি পূরণ না হলে মিয়ানমারে ফেরত না যাওয়ার ঘোষণা এসেছে বাংলাদেশে বসবাস করা রোহিঙ্গাদের সমাবেশ থেকে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা রোববার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পের এক্সটেনশন-৪ এ সমাবেশ করেন।

দুই বছর আগে আজকের এই দিনে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেন রোহিঙ্গারা। দুইবার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতি নেয়া হলেও একবারও তা আলোর মুখ দেখেনি।

রোহিঙ্গা সংকটের দুই বছর পূর্তিতে ৫ দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে নিজেদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণাও দিয়েছে রোহিঙ্গা নেতারা।

দাবি আদায়ে উত্তাল ছিল রোহিঙ্গাদের এ সমাবেশ। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় দাবি আদায়ের শ্লোগান, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন আর ব্যানারে ছেয়ে যায় সমাবেশস্থল।

সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, মিয়ানমারে সব রোহিঙ্গা ফিরে যেতে রাজি রয়েছে। তবে তাদের যথাযথ মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। শর্ত পূরণে আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপ চান তারা।

রোহিঙ্গাদের ৫ দফা দাবি হলো- নাগরিকত্ব দেয়া, নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা, নিজেদের ভিটেবাড়ি ফিরিয়ে দেয়া, ক্ষতিপূরণ দেয়া এবং রোহিঙ্গাদের হত্যা ও নির্যাতনকারীদের আন্তর্জাতিক অদালতে বিচার করা।

২০১৭ সালের এদিনে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থী আগমনের ঢল নেমেছিল। এদিন থেকে পরবর্তী প্রায় একমাস পর্যন্ত প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে থাকা এসব শরণার্থীদের মাঝে আরও প্রায় ৯২ হাজার শিশু জন্ম নিয়েছে।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন- আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটির চেয়ারম্যান মাস্টার মুহিব উল্লাহ, আব্দুর রহিম, মোহাম্মদ ইলিয়াছ প্রমুখ। কিন্তু এসব রোহিঙ্গা নেতারা ক্যাম্প এরিয়ায় প্রবেশের কোনো অনুমতি নেয়নি।

ক্যাম্পের অভ্যন্তরে পূর্ব থেকে ঘোষণা দিয়ে এরকম দাবি-দাওয়া নিয়ে সমাবেশ করায় স্থানীয় জনগণ চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এবিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম এনডিসি (অতিরিক্ত সচিব) বলেন, ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য একটা কঠিন দিন। এ দিনে তারা তো একটা সমাবেশ করতেই পারে। এজন্য কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে।’

এবিষয়ে উখিয়ার ইউএনও নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সমাবেশ করার বিষয়টি জেনেছি। তবে অনুমতির বিষয়টি আমার জানা নেই।’

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল মনসুর জানান, সমাবেশে অপ্রীতিকর কোনো কিছু ঘটেনি। তবে সমাবেশের অনুমতির বিষয় ক্যাম্প ইনচার্জ জানবেন বলে তিনি জানান।

উখিয়ার কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সমাবেশ করার অনুমতি দেয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, এ ধরনের সমাবেশের কারণে রোহিঙ্গারা আরও ভয়ংকর, মারমুখী ও হিংস্র হয়ে উঠবে। যেটা স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও প্রশাসনের জন্য পরে হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

উখিয়া নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ নামের স্থানীয় জনসাধারণের গড়া একটি সংগঠন দ্রুত রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসনের দাবিতে আগামী ৩১ আগস্ট উখিয়া স্টেশন চত্বরে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। তথ্যসূত্র-ইউএনবি

আজকের বাজার/এমএইচ