৫ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকার তিন ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন

জ্বালানি তেল আমদানি এবং বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা তরুণ-তরুণীদের সেবা প্রদান সংক্রান্ত দুটি প্রস্তাবসহ মোট তিনটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এ জন্য মোট ব্যয় হবে ৫ হাজার ৭৫৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।

বৃহস্পতিবার শেরে বাংলা নগরের এনইসি ভবনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে অনুমোদিত ক্রয় প্রস্তাবের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাসিমা বেগম।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে অনুদান চুক্তির শর্তানুযায়ী ‘ইমার্জেন্সি মাল্টি-সেক্টর রোহিঙ্গা ক্রাইসিস রেসপন্স’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নির্ধারিত কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য সরাসরি ক্রয় চুক্তির ভিত্তিতে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য সংস্থার নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ জন্য ব্যয় হবে ২৯৭ কোটি ১৪ লাখ ৯৯ হাজার ৯৮৬ টাকা।

জাতিসংঘের আওতাধীন বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি কর্তৃক কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় স্থাপিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ এবং ৬০ হাজার রোহিঙ্গা তরুণ-তরুণীকে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।

এ সব কাজ সম্পাদনের জন্য ডব্লিউএফপি’র কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি (টিইসি) ২৯৭ কোটি ১৪ লাখ ৯৯ হাজার ৯৮৬ টাকায় সরাসরি ক্রয় চুক্তির ভিত্তিতে ডব্লিউএফপি’কে অনুমোদন দিয়েছে।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, দেশের জ্বালানি তেলের চাহিদা মেটাতে চলতি বছর জানুয়ারি-জুন সময়ের জন্য মোট ১০ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেল আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ জন্য প্রিমিয়াম ও রেফারেন্স মূল্য বাবদ ব্যয় হবে পাঁচ হাজার ১৪২ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

যে ৬টি দেশ থেকে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত জ্বালানি তেল আমদানি করা হবে এরমধ্যে চীনের পেট্রোচায়না থেকে ৬০ হাজার টন গ্যাস ওয়েল। থাইল্যান্ডের পিআইটিটি থেকে ৩০ হাজার টন গ্যাস অয়েল। ইন্দোনেশিয়ার বিএসপি জাপিন থেকে ২১ হাজার মেট্রিক টন গ্যাস অয়েল, ৬০ হাজার টন জেট এ-১, ৪০ হাজার টন মোগ্যাস। চীনের ইউনিপ্যাক থেকে তিন লাখ ৩০ হাজার টন গ্যাস অয়েল। আরব আমিরাতের ইনক থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন গ্যাস অয়েল এবং মালয়েশিয়ার পিটিএলসিএল থেকে একলাখ ২০ হাজার মেট্রিকটন গ্যাস অয়েল আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ভারতের নুমালীগড় রিফাইনারী লিমিটেড (এনআরএল) থেকে পার্বতীপুর ডিপোতে রেল ওয়াগনের মাধ্যমে ২০২০ সালের জন্য ৬০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এ জন্য ব্যয় হবে ৩১৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

বিপিসি প্রতি বছর বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান থেকে মেয়াদী চুক্তির আওতায় জি-টু-জি ভিত্তিতে পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে থাকে। ২০২০ সালের পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব গত বছর ১৩ নভেম্বর অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয়।

উল্লেখ্য, ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান নুমালীগড় রিফাইনারী লিমিটেডের শিলিগুড়ি মার্কেটিং টার্মিনাল থেকে ইন্দোবাংলা ফ্রেন্ডশীপ পাইপ লাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশের পার্বতীপুর ডিপোতে ডিজেল আমদানির বিষয়ে গত ২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল তারিখে বিপিসি ও এনআরএল-এর মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

পাইপ লাইন স্থাপন/নির্মাণ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পাইপ লাইন স্থাপন/নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্ধারিত প্রিমিয়ামে (মার্কিন ডলার ৫দশমিক ৫০/ব্যারেল) রেল ওয়াগনের মাধ্যমে পার্বতীপুর ডিপোতে ২০১৬ সাল থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করা হচ্ছে।

এনআরএল থেকে পার্বতীপুরে ডিজেল গ্রহণ করার ক্ষেত্রে স্বল্প সময়ের মধ্যে ডিজেল প্রাপ্তি ও পরিবহন খরচ সাশ্রয় হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়াগন স্বল্পতার কারণে প্রধান স্থাপনা চট্রগ্রাম/দৌলতপুর ডিপো থেকে পার্বতীপুর ডিপো অঞ্চলের চাহিদা অনুযায়ী ডিজেল সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। ফলে এনআরএল থেকে আমদনিকৃত ডিজেল দিয়ে পার্বতীপুর ডিপো অঞ্চলের চাহিদাপূরণসহ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে ডিজেল সরবরাহ নিশ্চিত করা সহজ হচ্ছে।

আজকের বাজার/এমএইচ