প্রধানমন্ত্রীর সফর

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভারতের সহযোগিতা চাইবে বাংলাদেশ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিল্লি সফরকালে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ভারতের সহযোগিতা চাইবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন।

তিনি প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

বাংলাদেশে বর্তমানে ১১ লাখের অধিক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়ে আছে এবং তাদের প্রত্যাবাসন শুরুতে সাহায্য করতে ইতিমধ্যে চীন যুক্ত হয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩-৬ অক্টোবর ভারতে সরকারি সফর করবেন। তিনি ৩-৪ অক্টোবর বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের আয়োজনে নয়াদিল্লিতে ইন্ডিয়ান ইকোনমিক সামিটে অংশগ্রহণ এবং ৫ তারিখে প্রধানমন্ত্রী মোদির সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। পরদিন শেখ হাসিনার সাথে ভারতীয় কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধির সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হবে।

প্রধানমন্ত্রী ইন্ডিয়ান ইকোনমিক সামিটের প্রথম দিনে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস কাউন্সিলের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সাথে কান্ট্রি স্ট্রাটেজি ডায়ালগে অংশ নেবেন। শেষ দিনে তিনি সামিটের সমাপ্তি অধিবেশনে দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা অধিকতর বৃদ্ধির বিষয়ে নিজের মতামত বিনিময় করবেন। অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া সিঙ্গাপুরের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী হেং সুই কিইট প্রধানমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

৫ অক্টোবর বেলা সাড়ে ১১টায় বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে উভয় দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক শুরু হবে। এতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

বৈঠকে যেসব বিষয়ে আলোচনা হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে- সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সীমান্তে সব ধরনের চোরাচালান বন্ধে বহুমুখী কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ, উভয় দেশের মধ্যে জনযোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্নমুখী উদ্যোগ, যেমন বাংলাদেশের নাগরিকদের ভারতীয় ভিসা থাকা সাপেক্ষে আরও অবাধে যাতায়াতের ব্যবস্থা গ্রহণ, সন্ত্রাসবাদ রোধ এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং সার্বিক বাণিজ্যিক ও আর্থিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষর।

এছাড়া, বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর আরোপিত অ্যান্টি-ডাম্পিং এবং অ্যান্টি সারকামভেশন ডিউটি প্রত্যাহারের পাশাপাশি বিএসটিআই অনুমোদিত পণ্য ভারতের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ এবং উভয় দেশের স্থলবন্দরগুলোর মধ্যে আমদানি-রপ্তানিযোগ্য পণ্যের তালিকা বৃদ্ধির উদ্যোগ বিষয়ে আলোচনা হবে।

আলোচনায় উভয় দেশের মধ্যে নৌ ও সমুদ্রপথে যোগাযোগ বৃদ্ধির উদ্যোগ স্থান পাবে। এর ভিত্তিতে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারত হতে পণ্য আমদানি-রপ্তানির বিষয়ে এসওপি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সাথে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ‘বিবিআইএন এমভিও’ চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে উদ্যোগ এবং রেল, বিমান ও সড়ক পথে যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হবে।

গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উভয় দেশের যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ, তিস্তাসহ অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টনে ‘কাঠামোগত চুক্তি’ স্বাক্ষর এবং উন্নয়ন ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়গুলোও আলোচনায় স্থান পাবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর ও বাংলাদেশ-ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০ বছর পূর্তি যৌথভাবে উদযাপনের বিষয়ে উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা হবে।

আলোচনা শেষে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে যুব ও ক্রীড়া, সংস্কৃতি, নৌ-পরিবহন, অর্থনীতি, সমুদ্র গবেষণা, পণ্যের মান নির্ধারণ, বাণিজ্য, শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি খাতে একাধিক সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট ৩ অক্টোবর সকাল ৮টায় নয়াদিল্লীর উদ্দেশে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবে। আর ভারত সফরের সমাপ্তি টেনে প্রধানমন্ত্রী ৬ অক্টোবর রাত ১১টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভিভিআইপি ফ্লাইটে করে শাহজালালে এসে পৌঁছাবেন। তথ্য-ইউএনবি

আজকের বাজার/এমএইচ