আক্কেলপুরের দোলযাত্রা মেলা দর্শনার্থীদের পদভারে মুখোরিত

প্রায় সাড়ে চারশত বছরের ইতিহাস ঐতিহ্য বহন করা জেলার আক্কেলপুরের গোপিনাথপুর দোলযাত্রা মেলা দর্শনার্থীদের পদভারে এখন মুখোরিত।
আক্কেলপুর উপজেলার শ্রী শ্রী গোপিনাথ ঠাকুরের স্মরণে গোপিনাথপুর মন্দিরকে ঘিরে প্রতি বছর দোল পূর্ণিমাতে এ মেলা শুরু হয়। এ মেলার বিশেষ বৈশিষ্ট হচ্ছে এখানে ঘোড়া কেনাবেচা হয়ে থাকে। আক্কেলপুর উপজেলা শহর থেকে ৬/৭ কিলোমিটার দূরত্বে  গোপিনাথপুর এলাকায় প্রায় ১০০ একর জমির উপর এ মন্দির প্রতিষ্ঠিত  এবং বসে ১৩ দিন ব্যাপী নান্দনিক ওই মেলা। মেলায় আসা সুন্দরী, বিজলী, মহারাজা, বারুদ, রাজ, বাদশা, কদমরানী, কিরণমালা এসব হচ্ছে ঘোড়ার নাম। নামের সার্থকতায় রয়েছে  রং, ঢং, চালচলনে ক্ষিপ্রতা। সাদা, লাল, কালোসহ বাহারী রংয়ের এসব ঘোড়া  ওঠে ঐতিহাসিক এ মেলায়। প্রায় ৫০ বছর ধরে চলে আসা এ মেলায় ঘোড়া কেনা বেচা করা দেশের মধ্যে একমাত্র মেলা এটি। সে কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে  ঘোড়া ব্যবসায়ীরা  এখানে আসেন ঘোড়া বিক্রি করতে আবার কেউবা কিনতে। এ মেলার প্রধান আকর্ষণ ঘোড়া হলেও  এখানে গরু, মহিষ ও কাঠের সামগ্রীও  বেচাবিক্রি হয়। বিভিন্ন ডিজাইনের মিষ্টি, বড় বড় মাছ ও শিশুদের খেলনা এ মেলায় ওঠে। এ মেলাকে ঘিরে  হিন্দু, মুসলিমসহ সব ধর্মের লোকজনের বাড়িতে চলে জামাই-মেয়ে, আত্মীয়স্বজনদের নিমন্ত্রণ ও দাওয়াত দেওয়ার পালা। মেলাকে ঘিরে আশপাশের কয়েক গ্রামে চলে উৎসবের আমেজ, পরিণত হয় পারিবারিক মিলন মেলায়। মেলার একপাশে ফাঁকা জায়গায় চলে ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা।  এখানে দৌড়ের ক্ষিপ্রতা দেখে চলে  ঘোড়ার দরদাম ও বেচাকেনা। মেলায় গোপিনাথ ঠাকুরের পুজা অর্চনায় বিভিন্ন এলাকা থেকে যেমন সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের আগমন ঘটে। তেমনি  অন্যান্য ধর্মের লোকজনের আগমনে  কানায় কানায় ভরে ওঠে মেলা প্রাঙ্গন। এ মেলায় ওঠা কাঠের আসবাবপত্র জামাই মেয়েকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয়ে থাকে। চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঘোড়া নিয়ে আসা আব্দুল বারিক বলেন, মেলায় এবার ছোট-বড় মিলে তিনটি ঘোড়া নিয়ে এসেছি। তাজি ইন্ডিয়ান ঘোড়ার দাম ৬ লাখ টাকা হাকা হলেও ক্রেতারা ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম করেছেন বলে জানান তিনি।  গোপিনাথপুর মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি হচ্ছেন গোপিনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, প্রায় সাড়ে ৪শত বছরের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে চলে আসা এ মেলায় হিন্দু, মুসলিমসহ সকল ধর্মের লোকের আগমন ঘটে। এটি একটা অসাম্প্রদায়িক মেলা। মেলাকে কেন্দ্র করে এ এলাকার গ্রামে গ্রামে এখন চলছে উৎসবের আমেজ। জামাই-মেয়েকে দাওয়া দেওয়াসহ  এখানের বড় বড় মাছ, মিষ্টান্ন কিনে শ্বশুর বাড়িতে আবার অনেকেই জামাইয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে থাকেন। এ মেলায় ঘোড়ার পাশাপাশি গরু, মহিষ ও কাঠের আসবাবপত্র কেনাবেচা হয়ে থাকে। আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের মেলা গোপিনাথপুরে মানুষ যাতে নিশ্চিন্তে  যাতায়াত করতে পারে সেজন্য সার্বিক নিরাপত্তা  ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

সূত্র – বাসস