ঈদে নতুন পোশাক কিনতে যাচ্ছেন কী?

করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে এ বছর বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে ভূতপূর্ব উদ্বেগ ও নিরানন্দের মধ্যদিয়ে। এদিকে, ১০ মে থেকে সরকার সীমিত আকারে শপিংমলসহ ব্যবসা-বাণিজ্য পুনরায় চালু করার অনুমতি দিলেও শপিংমলে সামাজিক ও শারীরিক দূরত্বসহ স্বাস্থ্য নির্দেশনা বজায় রাখার বিষয়ে অনেকে তাদের সন্দেহ প্রকাশ করছেন। মিসবাহুল হক নামের একজন ইউএনবিকে ঈদ নিয়ে তার পরিকল্পনার কথা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘এ বছর ঈদের শপিং করা কী কোনো দরকার আছে? আমি মনে করি তার দরকার নেই। আমাদের সকলেরই কিছু আত্মীয় রয়েছেন যারা কিছুটা আর্থিক সহায়তা পেলে খুশি হবেন। আমাদের পরিবার থেকে আমরা তাই করব। এবারের ঈদ উদযাপনের পরিকল্পনা এটাই।’ সাত সদস্যের পরিবারের সবার ছোট মিসবাহুল হক বলেন, ‘ঈদ আনন্দ নিয়ে আসে ঠিকই, তবে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যে এবার আনন্দের কোনো অনুভূতি থাকার কথা না। আমার মনে হয় না ঈদ আসছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কীভাবে আমি শপিংয়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করতে পারি?’ শপিংমল, সব ধরনের দোকান-পাট এবং অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। সরকার বলছে, এবারের ঈদের ছুটিতে শহরের মানুষদের তাদের বর্তমান স্থানেই থাকতে হবে এবং এসময় অন্যান্য জেলা ও উপজেলায় তাদের গ্রামের বাড়িতে যাওয়া ঠিক হবে না।

রমজান ও ঈদুল ফিতরের কথা বিবেচনা করে সরকার সাধারণ ছুটির দিনেও শপিংমল, দোকান এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য নির্দেশনা বজায় রেখে খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সবার আগে চাই নিরাপত্তা মেডিকেল শিক্ষার্থী তাহমিদ বিনতে জসিম ইউএনবিকে বলেন, ‘আমরা খুব কঠিন সময় পার করছি, দরিদ্র ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষরা আরও বেশি কঠিন সময় পার করছে। তাদের সহায়তা করার জন্য আমাদের সকলকেই এগিয়ে আসা উচিত।’ সরকার শপিংমলগুলোকে পুনরায় চালু করে দেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর অনেককেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজেদের মতামত শেয়ার করতে দেখা গেছে। নীলুফার ইয়াসমিন নামের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘আমরা কী শপিং না করে এবার ঈদ উদযাপন করতে পারি না? আমরা ঈদের শপিং চাই না। আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে চাই।’ প্রতি বছরেই বাবা ও দুই ছোট ভাইকে সাথে নিয়ে শপিং করতে যেতেন তাহমিদ। এবার বিভিন্ন শপিংমলে ঘুরে ঘুরে পছন্দসই পোশাক কিনতে যাওয়াকে তারা মিস করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যেখানে মানুষ সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব অনুসরণের নির্দেশনাই মানছে না, সেখানে শপিংমলগুলো খোলা রাখা বুদ্ধিমানের কাজ বলে আমি মনে করি না।’ তিনি বলেন, ‘দেশে ইতোমধ্যে অনেক কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। যাদের কোনো লক্ষণই দেখা যায়নি।’ ‘এর মানে হলো আমাদের দেশে অনেক রোগী রয়েছে যাদের মধ্যে করোনাভাইরাসের কোনো লক্ষণ দেখা দেয় না। সুতরাং, যদি এধরনের কোনো লক্ষণহীন কোনো রোগী বা যার মধ্যে এ ভাইরাসটি আছে সে যদি শপিংমলে ঘুরে বেড়ায় বা শপিংমলের কোনো বিক্রয়কর্মীদের কেউ ভাইরাসটি বয়ে বেড়ায় তবে অবস্থাটা কেমন হবে?,’ প্রশ্ন এ মেডিকেল শিক্ষার্থীর।

প্রতিদিন ১১০০ কোটি টাকার লোকসান সরকারি শর্ত মেনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুনরায় খোলা রাখার জন্য ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করেছেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমরা নির্দেশনা অনুসরণ করব এবং ১০ মে পুনরায় দোকান খোলার আগে আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে আরও আলোচনা করব।’ কোভিড-১৯ এর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে সারদেশজুড়েই শপিংমল পরিচালক এবং খুচরা বিক্রেতারা লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন। হেলাল উদ্দিন ইউএনবিকে বলেন, ‘বন্ধের কারণে বর্তমানে দেশে আমাদেরকে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার ১০০ কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা একটি নতুন বিশ্বে প্রবেশ করতে যাচ্ছি এবং বেঁচে থাকার জন্য প্রত্যেকেই তাদের নিজ নিজ উপায় বেছে নিচ্ছে। যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা সবাইকে নিরাপদ রাখার চেষ্টা করছি। কর্মসংস্থানের কথাও আমাদের ভাবতে হবে।’

হেলাল বলেন, পর্যাপ্ত সতর্কতা ও নির্দেশনাগুলো মেনে কারা ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন এবং কারা করতে পারবেন না তা নির্ধারণের জন্য সারাদেশের ব্যবসায়ীদের সাথে আমাদের আলোচনা চলছে। ক্রেতারা এবং দোকান মালিক উভয়ই বিরাজমান ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন, বলেন তিনি। তবে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে কেনা-বেচা চলবে। গত মঙ্গলবার দেশে আরও রেকর্ড ৭৮৬ জন রোগীর করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১০৯২৯ জনে উন্নীত হয়েছে। এ সময়ে আরও একজন মারা যাওয়ায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮৩ জনে। অন্যদিকে, এখনও পর্যন্ত এক হাজার ৪০৩ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা শেষে সেরে উঠেছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সূত্র-ইউএনবি

আজকের বাজার/আখনূর রহমান