এসএমই-তে বেশি ফোকাস দিচ্ছে আইআইডিএফসি

মো. গোলাম সারওয়ার ভুঁইয়া : বর্তমান মানি মার্কেটে আমরা তারল্য সংকট দেখতে পাচ্ছি। একটু পেছনে যেতে হবে আমাদেরকে। আমরা যদি ২০১৭ সাল বা ২০১৬ সালের দিকে যাই, ২০১৭ সালে যখন ব্যাংকের ফিক্সড ডিপোজিট রেটটা কমতে কমতে অলমোস্ট ৪ বা সাড়ে ৪ পারসেন্টে চলে আসে, লোকজন তখন আর ব্যাংকমুখী হচ্ছিল না।

ওই সময়ে ব্যাংকে প্রচুর লিকুডিটি থাকার কারণে অনেক বেশি এক্সপোজারে চলে গেল। যেটা পরে দেখা গেল অনেকগুলো ব্যাংক তাদের এডি রেশিউ যেটা ৮৫ পারসেন্ট হওয়ার কথা সেটা ৯০ ছাড়িয়ে যায়। এমন হওয়ার কারণ হচ্ছে, ব্যাংকে হিউজ লিকুডিটি ছিল তারা তখন অন্য লোন বের করেছে।

একটা লোন ছিল একটা ব্যাংকে ১০ পারসেন্টে সে হয়তো আরেক লোন ৫ পারসেন্টে অফার করে বের করে ফেলে। যখন এই কাজগুলো হচ্ছে তখন ব্যাংকের ডিপোজিট রেটটা অনেক কমে গেছে। সাড়ে ৪ বা ৫ পারসেন্ট এমন। তাতে ফ্রেস ডিপোজিট আর যাচ্ছে না। আমানতকারীরা ব্যাকমুখী হচ্ছিল না। ঠিক ওই সময় একটা ঘোষণা আসল সরকারিভাবে সঞ্চয়পত্রে সুদের হারটা কমানো হবে। ১ বা ২ পারসেন্টের মতো কমানো হবে।

তখন মানুষ ব্যাংকমুখী না হয়ে সঞ্চয়পত্র কেনা শুরু করল। জুনের বাজেটে যদি কমে যায় তাহলে তার আগেই কিনতে হবে। তখন দেখা গেল সঞ্চয়পত্রে মোর দেন ডাবল বিনিয়োগ হয়ে গেল।ব্যাংকের ডিপোজিট কমে গেল।

এদিকে ব্যাংক তার ফিউচার চিন্তা না করে তার লোন বাড়াচ্ছে। তারা যখন লোন বাড়াচ্ছে তখন কিন্তু ডিপোজিটের ফ্লোটা অলরেডি কমে গেছে। তখন নভেম্বরের ও ডিসেম্বরের দিকে একটু একটু বোঝা যাচ্ছিল যে, এটা একটা সমস্যা। তখন ব্যাংকে লিকুডিটির একটা প্রবলেম দেখা গেল। ডিসেম্বরের শেষে বাংলাদেশে ব্যাংক বলল যে, আপনাদের এডি রেশিওটা আগে যেটা ৮৫ ছিল বেড়ে যেটা ৯০ আপ হয়েছে, সেটাকে কমিয়ে ৮২ বা ৮৩তে নিয়ে আসতে হবে এবং বাই দ্যা জুন।

এটা যদি করতে হয়, তাহলে আপনাকে হয়তো লোন কমাতে হবে অথবা ডিপোজিট বাড়াতে হবে। এখন লোন যেটা আপনি দিয়ে ফেলেছেন সেটা তো আর কেউ ম্যাচির্উড হওয়ার আগে ফেরত দেবে না। তাহলে কী করতে হবে? আমাদের ডিপোজিট বাড়াতে হবে।

তখন কমার্সিয়াল ব্যাংকগুলো একেবারে ঝাপিয়ে পড়লো ডিপোজিটের ওপর। তারা ডিপোজিট কালেকশন শুরু করল। রেট বাড়তে বাড়তে যেখানে ৫ ছিল সেখানে বাড়তে বাড়তে ১০, ১১, ১২তেও চলে গেল। হঠাৎ করে ডিপোজিটের ওপর খুব প্রেসার পড়ল। অন্য দিকে কী হল? তখন রেটটা বেড়ে গেল। ডিমান্ড হাই সাপ্লাই কম। ডিপোজিট রেট বেড়ে গেল। এটা হচ্ছে এক দিকে। অন্য দিকে দুই একটা ব্যাংক ক্রাইসিসে পড়ে গেল। ফারর্মারস ব্যাংকসহ আরও দুই একটা ব্যাংক। যারা ডিপোজিট ফেরত দিতে পারছে না। দুই একটা আর্থিক প্রতিষ্ঠানও একই সম্যাসায় পড়ল।

এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটা ভীতি তৈরি হল প্রাইভেট ও কমার্সিয়াল ব্যাংক সম্পর্কে। তাহলে একদিকে হাই ডিমান্ড ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে ডিপোজিট বাড়ানোর জন্য, অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদের ভীতি। আরেক দিকে সরকারের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমার ঘোষণা এসব মিলে ডিপোজিট রেটটা বাড়তে থাকল। জানুয়ারিতে , ফেব্রুয়ারিতে দেখা গেল যে সিরিয়াস ক্রাইসিস হয়ে গেল। তবে পরে সরকারি ব্যাংকগুলো থেকে ফান্ড বেসরকারি ব্যাংকে কিছু এসেছে। এটা কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে।

সিআরআরটা কমার কারণে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ফান্ড ফ্রি হয়েছে। এতে কিছুটা স্বস্তি এসেছে। যেটা আমরা এখন লক্ষ্য করছি, ডিপোজিট রেটটা যেখানে ১২ পেরিয়ে গিয়েছিল সেটা হয়তো এখন আবার ১০ বা সাড়ে ১০ এর মধ্যে নেমে এসেছে এবং অলমোস্ট মোর দেন ১ পারসেন্ট ডিপোজিট রেট কমে গেছে। লেন্ডিং রেটও কমেছে। এটা হয়েছে লাস্ট ওয়ান মান্থের মধ্যে। আর এই ধারাবাহিকতা যদি বজায় থাকে তবে আবার সেটা নরমাল পর্যায়ে চলে আসবে। এটলিস্ট ডিপোজিট রেটটা সিঙ্গেল ডিজিটে চলে আসবে। ল্যান্ডিং রেটটাও আস্তে আস্তে কমে আসবে।

আমাদের এনবিএফআই সেক্টরটাতে কিন্তু ডিপোজিট প্রাইওরিটি বা ইমপোরটেন্স সব সময় পাই না। এখন যখন ঘোষণা আসে, সরকারি ব্যাংকিং খাত পাবে ৫০ আর বেসরকারি ব্যাংকিং খাত পাবে ৫০। কিন্তু বেসরকারি ব্যাংকিং খাতে যে এনবিএফআই আছে তার জন্য তো আর স্পেসিফিকলি কিছু বলা থাকে না। তার জন্য আমাদেরকে বলতে হচ্ছে। আমাদেরকে লবিং করতে হচ্ছে। আমাদেরটাও আসতে হবে। আর অন্য দিকে হচ্ছে যে ব্যাংকে মানুষ একটু সিকিউর ফিল করে। যদিও ব্যাংক ও এনবিএফআই’এ ডিপোজিট রাখাটা একই রকম সিকিউর। আমাদের দেশে কিছু ব্যাংক যারা ফেইল করেছে। যেমন, বিসিসিআই ব্যাংক, ফার্মারস ব্যাংক। এনবিএফআই কিন্তু এভাবে কখনো দেউলিয়া হয়নি যে কারো টাকা দিতে পারেনি। তারপরও একটা জেনারেল পারসেপশন আছে, এনবিএফআই’এ রিস্ক আছে কিনা।

এটা মানুষ চিন্তা করে। সেই ক্ষেত্রে আমাদেরকে একটু হাই রেটে ডিপোজিট বা সরকারি ফান্ড নিতে হয়। কল মানিতে দেখেন, ব্যাংকগুলোতে হয়তো ৩ বা সাড়ে ৩ পারসেন্টে পাচ্ছে আর আমাদেরকে সাড়ে ৪ বা ৫ পারসেন্টে নিতে হচ্ছে। সেখানে কিন্তু আমরা কিছুটা বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। সরকারের পলিসির ক্ষেত্রেও আমরা প্রাইয়রিটিতে আমরা অনেক সময় থাকি না।

যেমন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটা লিস্ট করেছে যে ১৩টা বা ১৪টা আর্থিক প্রতিষ্ঠান সরকারি ফান্ড পাবে। সেখানেও কিন্তু আমরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। এসবক্ষেত্রে সরকারকে বস্তুনিষ্ট হতে হবে। এসেস্টমেন্টটা হবে অবজেকটিভ এসেস্টমেন্ট। আমি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেখবো না। আমি দেখবো যে স্ট্রেংথ কার কেমন আছে। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান না বলে প্রতিষ্ঠান বলা। দুইটাই হচ্ছে আর্থিক প্র্রতিষ্ঠান। ব্যাংকও কিন্তু আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আমরাও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এসেস্টমেন্টটা সেভাবে হোক।

আইআইডিএফসি’র কিন্তু অনেকগুলো স্পেশালিটি আছে। আমাদের একটা স্পেশাল ডিপার্টমেন্ট আছে। এটা হচ্ছে স্ট্রাকচার ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্ট। বড় বড় ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল প্রজেক্টে ফান্ড যোগান দেওয়ার জন্য যে সিন্ডিকেশনটা হয় সেখানে আমরা হলাম লীড অ্যারেঞ্জার। অনেকগুলো কমার্সিয়াল ব্যাংক সেখানে হয়তো মেম্বার হিসেবে থাকছে। আমাদের সাথে থাকছে। আপনারা জানেন যে ক্লাইমেটে কার্বন ইমিশন রিডাকশনে আমাদের প্রজেক্ট আছে। বিশ্ব ব্যাংকের সাথে আমাদের এই বিষয়ে একটি এগ্রিমেন্ট আছে। আর এটার মালিকানার ক্ষেত্রেও কিন্তু একটা বিশেষত্ব আছে।

এটা হচ্ছে স্পন্সরড বাই টেন ব্যাংকস। যেখানে আছে দুইটা সরকারি ব্যাংক। সোনালী ব্যাংক ও জনতা ব্যাংক। আর বাকি আটটা হচ্ছে বেসরকারি লীডিং ব্যাংক। সেই সাথে আইসিবি ও তিনটা লীডিং ইন্সুরেন্স কোম্পানিসহ মোট ১৪টা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে এর স্পন্সর। যেখানে একটা ইউনিকনেস আছে। কোনো প্রাইভেট গ্রুফ কিন্তু এখানে স্পন্সর না। এটা সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের যৌথ মালিকানাধীন একটা প্রতিষ্ঠান। এটার জন্য আমাদের তো নরমারলি এসএমই ফিন্যান্সিং আমাদের আছে। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের যে এসএমই ফিন্যান্সিং এডিপি আছে সেখানে আমরা কিন্তু রেগুলার রেফারেন্স দিচ্ছি।

আমরা ঢাকার বাইরে এসএমই ব্রাঞ্চ করছি এবং আমাদের টার্গেট হচ্ছে যে ৫ বছরের মধ্যে ২০২২ সালের মধ্যে আমরা আমাদের প্রজেক্টগুলো ৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। যার মধ্যে ৬০ পারসেন্ট হবে এসএমই খাতে। এটার বিশেষত্ব হচ্ছে অন্যরা যেখানে ২০ বা ৩০ পারসেন্ট চিন্তা করছে আমরা সেখানে করছি ৬০ পারসেন্ট অর মোর দেন ৬০ পারসেন্ট এসএমই খাতে। সে লক্ষ্যে কিন্তু আমরা এগোচ্ছি। আমরা খুব সম্প্রতি কয়েকটা ব্রাঞ্চ করেছি। আমরা নারায়ণগঞ্জে ব্রাঞ্চ করেছি, সাভারে করেছি, কেরানীগঞ্জ, গাজীপুর, উত্তরাতে এগুলো সবই এসএমই ব্রাঞ্চ। এসএমই’কে টার্গেট করে করেছি।

এরপর আমরা আরও চারটা ব্রাঞ্চ করতে যাচ্ছি। আমরা হয়তো সিলেটে যাব, কুমিল্লাতে যাব, মিরেরসরাই যাব। এই সমস্ত জায়গায় আমরা ব্রাঞ্চ করতে যাচ্ছি সামনে। আমাদের ২০২২ সালের মধ্যে ব্রাঞ্চ হবে ৩০টা। এই ৩০টা ব্রাঞ্চ মূলত এসএমই’তে কাজ করবে।

মো. গোলাম সারওয়ার ভুঁইয়া
ব্যবস্থাপনা পরিচালক
আইআইডিএফসি ফাইন্যান্স লি.

রাসেল/