ঐতিহাসিক স্থান সংরক্ষণে সরছে জিয়া শিশু পার্ক : মোজাম্মেল

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থানসহ ঐতিহাসিক স্থান সংরক্ষণে শহীদ জিয়া শিশু পার্ক সরানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

মুজিবনগর দিবস পালন উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে শনিবার (১৫ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা জানান।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের স্থান, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের স্থানে শিশু পার্ক করেছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সাংবাদিক আতাউস সামাদ এবং আরও একজন (নাম মনে করতে পারেননি মন্ত্রী) মিলে একটি আর্টিকেল লিখেছেন, সেখানে লিখেছেন তারা জিয়াউর রহমানকে প্রশ্ন করেছেন, ঐতিহাসিক জায়গায় আপনারা শিশু পার্ক করলেন? তাদের লেখায় আছে জিয়াউর রহমান সাহেব বলেছিলেন, মুসলমানদের পরাজয়ের কোনো চিহ্ন রাখতে নেই। ইসলামের পরাজয়ের কোনো চিহ্ন রাখতে নেই। এই ছিল তাদের দৃষ্টিভঙ্গি।’

তিনি বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে মুক্তিযুদ্ধের সুতিকাগার হিসেবে, আন্তর্জাতিক মানের স্থাপনা হিসেবে গড়ে তোলা হবে। ওইটুকু ঘুরলেই মুক্তিযুদ্ধের ২৩ বছরের ঘটনাবলী দেখতে পাবেন। সেভাবেই আমার করব।’

‘এ জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে কেপিআই (গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা) ঘোষণা করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা কাজ খুব দ্রুতই শুরু করব। আশা করছি এ সরকারের মেয়াদেই আগামী দেড় বছরের মধ্যে এগুলো সম্পন্ন করে মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করব।’

শিশু পার্কের মধ্যে থাকা ঐতিহাসিক স্থান শীঘ্রই উদ্ধার করে কোনো স্থাপনা করার পরিকল্পনা আছে কি না-এ বিষয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘জি, আমি বলেছি। আমাদের সরকারের দেড় বছর মেয়াদের মধ্যেই এটার পূর্ণতা দেখতে পাবেন। সেখানে বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্য থাকবে। বিভিন্ন দেশ স্বাধীনতার মূল জায়গাগুলো যেভাবে মর্যাদাপূর্ণভাবে সংরক্ষণ করে, আমরাও সেভাবে করব।’

সে ক্ষেত্রে কি শিশুপার্ক স্থানান্তর করা হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নিঃসন্দেহে, শিশু পার্ক পেছনে চলে আসবে, এটা আমরা বন্ধ করব না। এটা যাতে বুমেরাং হয়, ওনারা চেয়েছিল শিশুদের ভুলিয়ে দিতে, শিশুরা যাতে এখানে এসে শিখে তেমন সমৃদ্ধভাবে আমরা এটা রাখব।’

‘আত্মসমর্পণের স্থানসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থারগুলো আমার চিহ্নিত করে ফেলেছি, এখন আমার কাজ শুরু করব’ বলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী।

মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের ঘৃণা জানাতে ঘৃণা স্তম্ভ নির্মাণের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমার অবশ্যই ঘৃণা স্তম্ভ করব। আমরা তৃতীয় পর্যায়ের প্রকল্প শুরু করতে যাচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে অনুমোদন দিয়েছেন। এটা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হবে।’

মুজিবনগর দিবস ১৭ এপ্রিল

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসে ১৭ এপ্রিল এক গৌরবোজ্জ্বল ও অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথ তলায় আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম সরকার শপথ গ্রহণ করে। এ ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে।’

তিনি বলেন, ‘বিজয় অর্জনের এত বছর পরও স্বাধীনতাবিরোধীরা ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টায় লিপ্ত। স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের এ অপচেষ্টা প্রতিহত করে নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তোলা এবং স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস জাতির সামনে তুলে ধরতে মুজিবনগর দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হবে।’

এ সময় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সচিব মোহাম্মদ মাহমুদ রেজা খান উপস্থিত ছিলেন।