ওষুধশিল্পের কাচামালের ট্যাক্স-ভ্যাট কমানো দরকার

২০২০ সালে যখন বৈশ্বিক মহামারী শুরু হয়, সারাবিশ্বে তখনই অর্থনৈতিক মন্দা অবস্থা শুরু। গত দুই বছরে করোনার ফার্স্ট, সেকেন্ড এবং থার্ড ওয়েভের পর করোনা যখন সেটেল ডাউন হয়েছে, ঠিক তখন এর রেশ কাটতে না কাটতেই ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। এর ফলে সারাবিশ্বে তেল, গ্যাসের দাম বেড়েছে। ইদানিং বাংলাদেশে ডলারের মূল্য টাকার বিপরীতে অনেক বেড়েছে। এরকম টালমাটাল পরিস্থিতির কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ছে। বাংলাদেশ বিশ্ব অর্থনীতির বাইরে না। বিশ্বে যখন জ্বালানির দাম বাড়ে, ডলারের বাজার মূল্যে তখনই অস্থিরতা শুরু হয়।

উৎপাদন খরচ বেড়েছে: ফার্মাসিউটিক্যালে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমাদের ৯৮% ঔষধ দেশেই তৈরি হয়। কিন্তু ঔষধ তৈরির কাঁচামাল ৯৫% বিদেশ থেকে আনতে হয়। বিশ্বে যখন জ্বালানি ও ডলারের মূল্য বাড়ে, ঔষধ তৈরীর কাঁচামালগুলোর আমদানি খরচ তখন বেড়ে যায়। ফলে উৎপাদন খরচ বাড়ে। গত কয়েক মাসে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়লেও আমরা ওষুধের দাম বাড়াতে পারি না। ওষুধের দাম কন্ট্রোল হয় ডিজি (কন্ট্রোলিং অথরিটি) দিয়ে। ওষুধের দাম বাড়ছে না কিন্তু ওষুধের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। যার ফলে ফার্মাসিউটিক্যাল মার্কেট চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে। ডলার মূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্যই গত কয়দিনে আমাদের উৎপাদন খরচ ১০-১৫ শতাংশ বেড়ে গেছে।

বাজেটে প্রত্যাশা: আপনারা জানেন ফার্মাসিউটিক্যালসের কাঁচামাল ট্যাক্স-ভ্যাট দিয়েই বিদেশ থেকে আনতে হয়। যে সকল ওষুধ নিত্যপ্রয়োজনীয় এবং দীর্ঘমেয়াদী খেতে হয় যেমন ডায়াবেটিস, হাইপার টেনশন, এই ওষুধগুলো দীর্ঘমেয়াদি খেতে হয়। একটা সময় ছিল ডায়াবেটিস, হাইপার টেনশন, কার্ডিয়াক এগুলোকে ধনীদের অসুখ বলা হত। লাইফ স্টাইল চেঞ্জ হওয়ার কারণে এখন এই অসুখগুলো ধনী-গরীব সবারই হচ্ছে। গ্রামের লোকজন আগে ডায়াবেটিস, হাইপার টেনশনে কম ভুগতো। কিন্তু লাইফইস্টাল চেঞ্জের কারণে এখন এই অসুখগুলো গ্রামে-গঞ্জেও ছড়িয়ে গিয়েছে। এই অসুখগুলোর ট্রিটমেন্ট দীর্ঘদিন করতে হয়। বাজেটে এই দীর্ঘমেয়াদী ওষুধগুলোর কাঁচামালের ট্যাক্স ভ্যাট যদি কমানো যায়, উৎপাদন খরচ যদি কমানো যায়, ওষুধের দাম আমাদের বাড়ানোর প্রয়োজন হয় না। ফলে রোগীদের ট্রিটমেন্ট এনশিউর হয়। অনেক সময় দেখা যায়, যদি ট্রিটমেন্ট খরচ বেড়ে যায়, যাদের দীর্ঘমেয়াদী ট্রিটমেন্ট দরকার হয় তারা স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। এই দীর্ঘমেয়াদী রোগের চিকিৎসার রোগীরা চিকিৎসা করাতে পারে না।

খাদ্যে ভেজাল: খাদ্যে যখন ভেজাল হবে তখনই স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে। যেমন চিনির মধ্যে কেমিক্যাল দিয়ে যখন সাদা করা হয়। এটা ছোট বাচ্চাদের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ। চিনিতে ভেজাল মিশ্রণ এর কারণে বাচ্চাদের কিডনি ও লিভার ইফেক্ট করে। গুড়ো দুধে যদি ভেজাল থাকে তাহলে বাচ্চাদের গ্রোথ হবে না। খাদ্যে যখন বিষাক্ত কেমিক্যাল ও প্রিজারভেটিভ দেয়া হয়, তখন মানুষের অল্প বয়সেই নানা ধরনের কিডনি ও লিভারের সমস্যাজনিত অসুখে ভোগে।

ডেলটা ফার্মার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: ডেলটা ফার্মা নন লিস্টেড পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি। প্রায় ১৩০০ শেয়ারহোল্ডার আছে আমাদের। ডেলটা ফার্মার শুরু হয়েছে একটি লক্ষ্য নিয়ে। কোয়ালিটি প্রডাক্ট অ্যাট এন এফোর্টেবল প্রাইস। আমরা কোয়ালিটি প্রডাক্ট দিব। আমাদের ঔষধের দামটা থাকতে হবে মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে। আপনি যদি আমাদের প্রোডাক্ট এনালাইসিস করেন, দেখবেন আমাদের অধিকাংশ প্রোডাক্টের দাম অন্যান্য কোম্পানির চেয়ে কম। আমরা চেষ্টা করি দীর্ঘমেয়াদি অসুখ যেমন ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, কার্ডিয়াক, হাইপার কোলেস্টরেল এই জাতীয় রোগের ওষুধগুলো সাশ্রয়ী মূল্যে যাতে মানুষ কিনতে পারে। আমাদের কোম্পানির একটি ওষুধ হাইপার কোলেস্টোরেলের জন্য প্রতিদিন একটি করে খেতে হয়। যার মূল্য ৫ টাকা অন্যান্য কোম্পানির একই ওষুধ দাম ১০ টাকা। প্রতিদিন যদি ৫ টাকা সেভ করা যায়, এই পাঁচ টাকা দিয়ে রোগীরা অন্য ওষুধ কিনতে পারবে।

আপনারা জানেন বাংলাদেশ সরকার ইপিআই মেনুফেকচারিং পার্ক করেছে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায়। এখানে ওষুধের কাঁচামাল তৈরি করা হয়। এই মেনুফেকচারিং পার্কে আমাদেরও একটি প্লট আছে। আমরা চেষ্টা করছি, এখানে ঔষধের কাঁচামাল তৈরি করতে। তখন আমাদের ব্যবসা ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজে এক্সপান্ড করা যাবে। ওষুধের কাঁচামাল বাংলাদেশেই তৈরি হলে বিদেশের উপর ডিপেন্ডেন্সি কিছুটা কমবে। আমরা ওষুধ শিল্পে আরো বেশি এগিয়ে যেতে পারবো ইনশাআল্লাহ।

জিয়াউর রহমান
জেনারেল ম্যানেজার, মার্কেটিং
ডেল্টা ফার্মা লিমিটেড