কাজে অবহেলার জন্য দায়ী কাউকে ছাড় দেয়া হবে না : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মান বজায় রেখে যথাসময়ে সকল উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, কাজে অবহেলার জন্য দায়ীদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

এখানে রোববার বিকেলে ‘শেখ হাসিনা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট’ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত যিনিই হোন মান বজায় রেখে নির্ধারিত সময় অবশ্যই কাজ শেষ করতে হবে… এ ক্ষেত্রে কোন ধরনের অবহেলা সহ্য করা হবে না।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি কেউ অন্যায় করেন, তিনি যেই হোন না কেন, অপরাধের জন্য তাকে ছাড় দেয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দুর্নীতি, কমিশন নেয়া অথবা ব্যবসা করার জন্য ক্ষমতায় আসিনি… আমরা দেশের জন্য কাজ করতে এবং জনগণের সেবা করতে ক্ষমতায় এসেছি।’

চট্টগ্রাম নগরীর রাস্তাগুলোর দুরাবস্থায় অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি মেয়র এবং সংশ্লিষ্ট অন্যদের এর কারণ খুঁজে বের করতে বলেন এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম নৌ-ঘাঁটি থেকে বোট ক্লাব পর্যন্ত রাস্তার খারাপ অবস্থার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৫ সালে যখন তিনি বন্দর নগরী সফর করেন তখনও তিনি একই অবস্থা প্রত্যক্ষ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘সেতু নির্মাণের জন্য রাস্তাটি খনন করা হয়েছিল, কিন্তু সেতুর কাজ এখনও শেষ হয়নি… আমি জানতে চাই, কেন এই অবস্থা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর আগে তিনি তাঁর সামরিক সচিবকে, যিনি নিজে চট্টগ্রামের সন্তান, এ বিষয়টি দেখতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং সে অনুযায়ী তিনি (সামরিক সচিব) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর সাথে কথা বলেছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘কর্তৃপক্ষগুলো সামরিক সচিবকে জানিয়েছিলো সেতুর কাজ শেষ হবে, কিন্তু এখনও তা শেষ হয়নি।’ তিনি বলেন, জাইকার সহযোগিতায় এলজিইডি এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাজটি সম্পন্ন করার কথা ছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাপানি সংস্থাটি কোন কাজে দেরি করে- আমার কাছে এ ধরনের কোন তথ্য নেই… এ বিলম্বের কারণ অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি জানতে চাই, কার অবহেলায় রাস্তাগুলোর এ খারাপ অবস্থা। যদি সমস্যা থাকে তাহলে সমাধান করতে হবে।’ এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি পরবর্তীতে যখন এ নগরীতে আসবো তখন এ পরিস্থিতি আর দেখতে চাই না।’ এরআগে শেখ হাসিনা ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে দৈনিক নয় কোটি লিটার পানি সরবরাহে সক্ষমতা সম্পন্ন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টটির উদ্বোধন করেন।

চট্টগ্রাম ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড সুয়ারেজ অথরিটির (সিডব্লিউএএসএ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম ফজলুল্লাহ বাসস’কে বলেন, ১৯৮৮ সালের পরে চট্টগ্রামে কোন প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে এটিই এ ধরনের কোন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের উদ্বোধন।
চট্টগ্রাম ওয়াসা নগরবাসীর চাহিদা পূরণে ২০০৬ সালে এই প্রকল্প গ্রহণ করে। জাপান ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি (জাইকা) অর্থায়নে ২০১০ সালে প্রকল্প কাজ শুরু হয় এবং গত নভেম্বরে দৈনিক নয় কোটি ত্রিশ লাখ লিটার পানি সরবরাহে সক্ষম এই প্লান্টটির উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়।

শেখ হাসিনা কর্ণফুলী নদীর বর্তমান অবস্থায় অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আমি চাই না কর্ণফুলী নদীর অবস্থা ঢাকার বুড়িগঙ্গার মতো হোক। দূষণ থেকে কর্ণফুলী নদীকে মুক্ত রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, এখানে বর্জ্য ফেলা কিছুতেই মেনে নেয়া হবে না।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সেন্ট্রাল সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের জন্য চট্টগ্রাম ওয়াসাকে নির্দেশ দেন, যাতে দূষিত পানি নদীতে যেতে না পারে। তিনি নদী দূষণের জন্য দায়ী শিল্প ইউনিটগুলো চিহ্নিত করতে এবং সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়নই তাঁর কাছে বড় বিষয়। তিনি বলেন, কে কাজ পাচ্ছে আর কে পাচ্ছে না- এটা আমার কাছে বিবেচ্য বিষয় না। বরং দেশের উন্নয়নই আমার কাছে বড় বিষয়।

শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাংক সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল। আমরা বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে গ্রহণ করি এবং এ চ্যালেঞ্জে আমরা বিজয় লাভ করি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংকের অভিযোগে তিনি এবং তাঁর পরিবার খুবই কষ্ট পেয়েছেন। মন্ত্রী, উপদেষ্টা এবং সচিবের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক তদন্ত হয়। কিন্তু কোন ত্রুটিই তারা খুঁজে পায়নি। শেখ হাসিনা পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবহারে কৃচ্ছ্রতা সাধনের জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি পানির অপব্যবহার থেকে বিরত থাকারও আহ্বান জানান। বন্দরনগরীর জন্য নতুন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টে ৮ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, নতুন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নগরবাসীর পানি সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

তিনি বলেন, অতীতে চট্টগ্রামে বহু সমস্যা ছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এক এক করে এসব সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমান বন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে উন্নীতকরণ, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন করা এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল যোগাযোগ প্রকল্প গ্রহণসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করেন। দেশের উন্নয়নে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কেউই দেশের জন্য কিছু করেনি।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেকের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সিটি মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দিন এবং চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহও বক্তৃতা করেন। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট উদ্বোধন করেন। এই প্লান্টের মাধ্যমে প্রতিদিন ৯ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসা নগরীর অধিবাসীদের ক্রমবর্ধমান পানির চাহিদা মেটাতে এই প্রকল্প গ্রহণ করে। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে ২০১০ সালে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। গত নভেম্বরে দৈনিক ৯ কোটি ৩০ লাখ লিটার পানি সরবরাহের মাধ্যমে প্রকল্পটি যাত্রা শুরু করে।