কৃষিতে পরিবর্তন: উচ্চমূল্যের ফসলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

 

দেশের ফসলে বৈচিত্র্য আনতে এবং কৃষিকে উৎসাহিত করার অংশ হিসেবে নতুন ও উচ্চমূল্যের ফসলের চাষাবাদ প্রচারের জন্য অঞ্চল ভিত্তিক প্রকল্প গ্রহণ এবং চর ও হাওর অঞ্চলের পতিত জমিও আবাদের আওতায় আনছে সরকার।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ইতোমধ্যে এ পরিকল্পনার আওতায় ‘বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে।

প্রকল্পের আওতায় এ অঞ্চলের ছয় জেলার ৬০ উপজেলায় নতুন ও উচ্চমূল্যের ফসলের আবাদ এবং চর ও হাওর অঞ্চলের পতিত জমিতে আবাদ বাড়ানো হবে।

জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটি (একনেক) গত জুলাইয়ে প্রকল্পটি অনুমোদন করে। একনেক সভায় অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটির প্রশংসা করেন।

এমনকি গত ২৫ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারিজনিত কারণে বিশ্বজুড়ে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে বলে সরকার খাদ্য উৎপাদনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।

সরকার যথাসম্ভব খাদ্য উৎপাদনের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখাতে জনগণের প্রতি বেশ কয়েকবার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

ফলন বাড়াতে (একটি নির্দিষ্ট জমি যতবার চাষাবাদে ব্যবহার করা যায়) এবং খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ফসলে বৈচিত্র্য আনার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুল মুইদ।

তিনি আজকের বাজারকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য ফলন বাড়াতে প্রকল্প নিচ্ছি। কারণ এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে জমির প্রকৃতি আলাদা হয়।’

ময়মনসিংহ প্রকল্পের আওতায় সরকার স্থায়ী ও মৌসুমি পতিত জমিগুলোকে আবাদের আওতায় আনার মাধ্যমে এ অঞ্চলের গড় ফসলের ঘনত্ব ২১০ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। বৈচিত্র্যময় ফসলের আবাদের ক্ষেত্র বাড়িয়ে প্রায় ১৩ লাখ হেক্টর করা হয়েছে।

জমিতে ফসলের বিন্যাস বা ফসল চাষের ক্রমকে আধুনিকীকরণের মাধ্যমে কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে উত্পাদনশীলতা (উচ্চমূল্যের ফসল এবং যেগুলোতে কম সেচের প্রয়োজন হয়) ৮২ শতাংশ বাড়ানো হবে।

খাদ্যশস্যের পাশাপাশি বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ছয়টি জেলা- ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, নেত্রকোনা এবং শেরপুরে সবজি, ফলমূল ও মশলার চাষকে উৎসাহিত করা হবে।

২০২৫ সালের মধ্যে ১২৩.৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

প্রকল্পের আওতায় কমপক্ষে ৩২ শতাংশ নারীকে বিভিন্ন আয়-উপার্জনমূলক কার্যকলাপে নিযুক্ত করা মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যও রয়েছে।

কার্যক্রমগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে ১৮ হাজার ৬৯০ জন কৃষক, ১১ হাজার ৩১০ জন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কৃষক, এক হাজার ৮০০ উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এবং এক হাজার ৫০০ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ প্রদান; ১২০টি কৃষি মেলার আয়োজন, দেড় হাজার কৃষককে পুরস্কার প্রদান এবং নিরাপদ ও উচ্চমূল্যের সবজি, ফল এবং ফুল চাষের জন্য ১২০টি পলি-নেট ঘর নির্মাণ।

প্রকল্পটি বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের পার্বত্য জমি, চর, হাওর এবং সমতলে বিদ্যমান ফসলের চাষে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

এছাড়া, এ প্রকল্প নতুন ফসলের সমন্বয়, পতিত জমি আবাদের আওতায় আনা, উৎপাদন বৃদ্ধি, উপযুক্ত প্রযুক্তি ব্যবহার করে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত ঝুঁকি কমানো এবং উচ্চমূল্যের ফসল চাষ করতে ভূমিকা রাখবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।