খুলে দেয়ার প্রথম দিনেই সুন্দরবনে পর্যটকদের ভিড়

করোনা সংকটের কারণে দীর্ঘ সাত মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর বিশ্ব ঐতিহ্য ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে।

রবিবার প্রবেশ উন্মুক্ত হওয়ার পর প্রথম দিনে ১৬-১৭টি জাহাজে করে সাত শতাধিক পর্যটক সুন্দরবনের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে প্রবেশ করেছে বলে ট্যুর অপারেটর সূত্র জানিয়েছে।

সুন্দরবন বন বিভাগ সূত্র জানায়, গত ১৯ অক্টোবর বন ও পরিবেশবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনকে পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়ার ব্যাপারে আলোচনা হয়। সভায় আসন্ন পর্যটন মৌসুমকে সামনে রেখে সুন্দরবনকে উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই সভায় ১ নভেম্বর থেকে পর্যটকদের জন্য সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার খুলে দেয়ার জন্য সুন্দরবন রেঞ্জ ও বিভাগীয় পর্যায়ে নির্দেশনা দেয়া হয়।

বন বিভাগের সূত্র মতে, করোনাভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধে গত ১৯ মার্চ পুরো সুন্দরবনে পর্যটকদের যাতায়াত ও নৌযান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত পূর্ব ও পশ্চিম সুন্দরবন জুড়ে এ নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা হয়। পর্যটন মৌসুমে (নভেম্বর থেকে মার্চ) সুন্দরবনের ৯টি পর্যটন এলাকায় কোনো কোনো দিন ৪৫ হাজারেরও বেশি পর্যটক অবস্থান করে থাকে। ফলে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় তখন চরম দুর্ভোগে পড়েন বনের অভ্যন্তরের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে থাকা দর্শনার্থীরা।

সুন্দরবনে ভ্রমণে যাওয়া পর্যটক মাসুম বাবু বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর সুন্দরবনে ভ্রমণে যেতে পেরে খুব ভালো লাগছে। গত সাত মাসে কোনো পর্যটক সুন্দরবনে না যাওয়ায় বনের প্রকৃতিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে।’

রূপান্তর ইকো ট্যুরিজম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল আযম ডেভিড বলেন, ‘গত সাত মাসে সুন্দরবনের পর্যটন সেক্টরে প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।’

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের সভাপতি মো. মঈনুল ইসলাম জমাদ্দার বলেন, ‘রবিবার প্রথমদিনে পূর্ব ও পশ্চিম সুন্দরবন মিলিয়ে ১৭-১৮টি জাহাজে অন্তত ৭০০-৮০০ পর্যটক সুন্দরবনে প্রবেশ করেছে। এ সব পর্যটকদের জন্য সরকারের ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে নজরদারি করা হচ্ছে।’

তিনি জানান, প্রত্যেক জাহাজে পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান ও মাস্কসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সরঞ্জাম রাখা হয়েছে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘সুন্দরবনে প্রবেশে পর্যটকদের জন্য বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। বনে প্রবেশের আগে অবশ্যই পর্যটকদের মাস্ক পরিধান করতে হবে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্যও বন বিভাগের পক্ষ থেকে কঠোর অবস্থান নেয়া হয়েছে।’

তবে, প্রথমদিন কতজন পর্যটক সুন্দরবনে প্রবেশ করেছে তা বলতে না পারলেও সুন্দরবন (পশ্চিম) বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. আবু নাসের মোহসীন হোসেন বলেন, ‘রবিবার থেকে পর্যটকদের জন্য সুন্দরবন খুলে দেয়া হয়েছে। তবে, একটি জাহাজে ৫০ জনের বেশি একজন পর্যটক নেয়ার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। বনে প্রবেশের জন্য পর্যটকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সুন্দরবন বন বিভাগ) মো. মঈনুদ্দীন খান বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটকদের সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। কোনো ট্যুর অপারেটর বা পর্যটক স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’