গার্মেন্টস শিল্পের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে ইয়ার্নের মূল্য না বাড়ানোর অঙ্গীকার

স্থানীয় ইয়ার্ন প্রস্তুতকারকগণ রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের বিদ্যমান প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার লক্ষ্যে দেশীয় বাজারে ইয়ার্নের অযৌক্তিক হারে মূল্যবৃদ্ধি রোধ ও গতকাল ইস্যুকৃত সর্বশেষ পি-আইতে ইয়ার্নের যে মূল্য উল্লেখ করা হয়েছে, তা আর না বাড়ানোর অঙ্গীকার করেছেন।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সাথে পোশাক খাতের ৩ সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নীটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ) এবং বাংলাদেশ টেরিটাওয়েল ও লিনেন প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিটিটিএলএমইএ) আলোচনা বৈঠক চলাকালে এ ঘোষনা আসে।

আজ বিজিএমইএ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ওই আলোচনায় বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান, বিকেএমইএ সভাপতি এ.কে.এম. সেলিম ওসমান ও প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিটিটিএলএমইএর চেয়ারম্যান এম শাহাদাৎ হোসেন এবং বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন অংশগ্রহন করেন।বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি কুতুবউদ্দিন আহমেদ, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ. কে. আজাদ এবং বিটিএমএর সাবেক সভাপতি তপন চৌধুরী ও এ. মতিন চৌধুরী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সভায় বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন পোশাক শিল্পের নেতৃবৃন্দকে আশ্বস্ত করেন যে, বিটিএমইএর সদস্যভূক্ত মিলগুলো এলসি ওপেনসহ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের জন্য নূন্যতম ১৫ দিনের মেয়াদ উল্লেখ করে পি-আই ইস্যু করবে, যা কিনা সাম্প্রতিক সময়ে খুব স্বল্প সময়ের মেয়াদ দিয়ে ইস্যু করা হচ্ছিলো। পিআই হচ্ছে জাহাজীকরনের পূর্বে সরবরাহকারি কর্তৃক ক্রেতার কাছে পাঠানো আনুমানিক চালানপত্র। ইয়ার্নের মূল্য কমানোর জন্য পরবর্তী সোমবারে আরও একটি বৈঠকে বসবেন বলে সভায় উপস্থিত নেতৃবৃন্দ একমত হন।

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান পোশাক শিল্প রক্ষায় ও ব্যবসা-বানিজ্যের বর্তমান ক্রান্তিকালে শিল্পের প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখার জন্য ৩০এস ইয়ার্নের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারনের দাবি জানান। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, পি-আই সংক্রান্ত ইস্যুসহ অন্যান্য ইস্যুগুলো সমাধান করার লক্ষ্যে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিটিএলএমইএ ও বিটিএমএ প্রতিনিধি সমন্বয়ে একটি আরবিট্রেশন সেল গঠন করা হবে এবং এই সেল পাক্ষিক বা ১৪ দিন পর পর বৈঠকে বসবে।

এর আগে পোশাক রপ্তানিকারকগন স্থানীয় বাজারে ইয়ার্নের অব্যাহত মূল্য বৃদ্ধিতে তাদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিলো। তাদের দাবি ছিল, ইয়ার্নের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি পোশাক শিল্পের প্রতিযোগি সক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। শিল্প এমনিতে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি ও পণ্যের দরপতনের কারনে একটি কঠিন সময় অতিক্রম করছে।

পোশাক রপ্তানিকারকরা বলছে, ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গনহারে টিকাদান কর্মসূচির কারনে ঐসব দেশে দোকাপাট খুলছে, সেইসাথে দেশগুলোতে খুচরা বিক্রি দ্রুত হারে বাড়ছে।

ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশে প্রচুর অর্ডার আসছে। কিন্তু স্থানীয় বাজারে ইয়ানের্র অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে রপ্তানিকারকগণ সকল অর্ডার নিতে পাছেন না। আর বাংলাদেশের রপ্তানিকারকগণ যদি অর্ডারগুলো নিতে না পারেন, তাহলে সেগুলো নিশ্চিতভাবেই অন্যান্য প্রতিযোগি দেশগুলোতে চলে যাবে।

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হচ্ছে তুলা। মোট রপ্তানিকৃত পোশাক পণ্যের ৭৫ শতাংশই তুলা দ্বারা প্রস্ততকৃত। বাংলাদেশ বিশ্বে তুলা আমদানিতে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। আর কোনো কারনে যদি এই শিল্পের কাঁচামাল অর্থাৎ তুলা বা ইয়ার্নের সরবরাহ বা মুল্য প্রভাবিত হয়, তবে সেটি ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে শিল্প মালিকরা দাবি করছে।

করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা পরিচালনায় খরচ বাড়ছে বলে মনে করে বিজিএমইএ । যেখানে পণ্যের দরপতন হয়েছে ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। পরিবহন খরচ বেড়েছে দ্বিগুন। মজুরি, বিদ্যুৎ, ব্যাংক চার্জ সব মিলিয়ে গত ৮ বছরে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ৩০ দশমিক ১১ শতাংশ। এমতাবস্থায় পোশাক শিল্পের প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখা ও শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য ইয়ার্নের মূল্য না বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি পোশাক শিল্পের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক ও তাৎপর্যপূর্ণ। তথ‌্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান