তথ্য অধিকার সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে তথ্য কমিশন উপজেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে

তথ্য পাওয়ার অধিকার সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে তথ্য কমিশন (আইসি) দেশের বিভিন্ন স্তরে কর্মরত দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে এর কার্যক্রমে গতিশীলতা এনেছে।

প্রধান তথ্য কমিশনার (সিআইসি) মরতুজা আহমদ বাসস’কে বলেন, ‘২০০৯ সালে তথ্য অধিকার (আরটিআই) আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকে, তথ্য কমিশন এই আইন সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ইতিমধ্যে এই বিষয়ে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে।’

দায়িত্বের অংশ হিসাবে, তথ্য কমিশন ইতোমধ্যে সকল বিভাগ ও জেলায় জনসচেতনতামূলক সভার আয়োজন করেছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, উপজেলা পর্যায়েও এ ধরনের কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।

মরতুজা আহমদ বলেন, আমরা এ বিষয়ে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রচারণার আয়োজন করতে যাচ্ছি। তিনি বলেন, নারীদের তথ্য জানার অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আরটিআই বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সরকারের কর্মকা- সম্পর্কে জনগণের জানার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আরটিআই আইনকে একটি অত্যন্ত সময়োপযোগী আইন হিসেবে অভিহিত করে মরতুজা আহমদ বলেন, এক সময় অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের অধীনে সবকিছুই গোপন রাখা হতো। কিন্তু তথ্য এখন জনসাধারণের জন্য প্রায় উন্মুক্ত, যা শেষ পর্যন্ত সরকারের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেছে।

তিনি আরো বলেন, ‘এখন জনগণ কিছু রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা ছাড়া সবকিছু জানার অধিকার উপভোগ করছে।’ তিনি বলেন, তথ্য জানতে আগ্রহীদেরকে প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে সহায়তা করার জন্য বর্তমানে সারা দেশে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী মোট ৪২ হাজার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রয়েছেন।

তথ্য কমিশনার ড. আবদুল মালেক বাসস-এর সঙ্গে আলাপকালে বলেন, তথ্য কমিশন সম্প্রতি আরটিআই অনলাইন ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু করেছে, যাতে মানুষ আরটিআই আইন অনুযায়ী ডিজিটাল ব্যবস্থায় সহজে তথ্য পেতে পারে।

ড. মালেক বলেন, ‘এখন জনগণ তাদের ঘরে বসে বা নিকটস্থ ডিজিটাল সেন্টার থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা অফিস থেকে তথ্য চাইতে পারে। কারণ, সারা দেশে গ্রামীণ ও পৌর এলাকায় প্রায় ৮ হাজার ডিজিটাল সেন্টার রয়েছে। তাই, একজন আবেদনকারীকে তথ্য পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট অফিসে সময় ও অর্থ খরচ করে বারবার যেতে হবে না।’

তিনি বলেন, আরটিআই আইন জনগণের ক্ষমতায়নের একটি বাস্তব হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। তাই, এই আইনের প্রয়োগ সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আরটিআই আইন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে গণতন্ত্রের ভিত আরও মজবুত হবে।

আরটিআই অনলাইন ট্র্যাকিং সিস্টেম সম্পর্কে ড. আবদুল মালেক বলেন, যখনই একজন আবেদনকারী একটি আবেদন করবেন, তিনি মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে একটি ট্র্যাকিং নম্বর পাবেন। এখান থেকে আবেদনকারী তার আবেদনের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারবেন, আর এগুলোই হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা।

বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২০ অনুযায়ী, তথ্য কমিশন সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনের অধীনে ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৬৪টি জেলার প্রায় ৪৮১টি উপজেলায় জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্য সভা করা হয়েছে। প্রতিটি সচেতনতামূলক সভায় প্রায় ৪০০ জন অংশগ্রহণ করেন।

এছাড়া দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সাংবাদিক, পুলিশ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, আরটিআই প্রশিক্ষক এবং অন্যান্য কর্মকর্তাসহ মোট ৪৭ হাজার ১৩৭ জনকে এ পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া, সংশ্লিষ্ট প্রায় ৪৫ হাজার সরকারি কর্মকর্তা অনলাইনে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তথ্য কমিশন বর্তমানে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদেরকে অনলাইনে প্রশিক্ষণ দেয়ার ওপর জোর দিয়েছে। ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত মোট ৫৯ হাজার ৩৬৭ জন কর্মকর্তা অনলাইন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং প্রধান তথ্য কমিশনার (সিআইসি) স্বাক্ষরিত সনদপত্র পেয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালে টাঙ্গাইল জেলার ১২টি উপজেলায় এবং ২০১৬ সালে ১৬টি জেলার ১০২টি উপজেলায় আরটিআই বিষয়ে জনসচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

২০১৭ সালে ২০টি জেলার ১৫৪টি উপজেলায়, ২০১৮ সালে ৮টি জেলার ৭৩টি উপজেলায়, ২০১৯ সালে ১৭টি জেলার ১৩১টি উপজেলায় এবং ২০২০ সালে ২টি জেলার ৯টি উপজেলায় এ ধরনের সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এছাড়াও, ২০২০ সালে ময়মনসিংহ বিভাগের ৬০ জন সাংবাদিকসহ বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থার তথ্য অধিকার বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রায় ৪২ জন কর্মকর্তা এবং বিকল্প দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান