তুরস্ক ও গ্রিসে বড় ধরনের ভূমিকম্পে ২২ জনের প্রাণহানি

তুরস্ক ও গ্রিসে বড় ধরণের ভূমিকম্পে অন্তত ২২ জনের প্রাণহানি হয়েছে। হতাহতদের উদ্ধারে জোর তৎপরতা চলছে।
শুক্রবার গ্রিনিচ মান সময় ১১টা ৫০ মিনিটে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ৭ ছিল বলে উল্লেখ করলেও তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থা (এএফএডি) বলেছে, ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৬।
এটি গ্রিসের সামোস দ্বীপের কার্লোভাসি থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে আঘাত হানে।
এদিকে ধসে পড়া ভবনগুলোর ধ্বংসস্তূপে জোর উদ্ধারকাজ চালানো হচ্ছে। ভূমিকম্পের কারণে সামোস দ্বীপ তীরবর্তী অ্যাজিয়ান সাগরে ছোট আকারের সুনামি সৃষ্টি হয়েছে। সাগরে জলোচ্ছ্বাসের কারণে তুরস্কের পশ্চিম উপকূলের একটি শহরের রাস্তাগুলো নদীতে পরিণত হয়েছে।
ইস্তাম্বুল ও এথেন্সে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ফলে ভূমিকম্পের পর চিরশত্রু দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোতাকিস তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের প্রতি সমর্থন ও সমবেদনা জানিয়েছেন।
তুরস্কের অ্যাজিয়ান সাগর তীরবর্তী পর্যটন এলাকা ইজমিরে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখানে অনেক সুউচ্চ ভবন রয়েছে। প্রায় ৩০ লাখ লোকের বাস এখানে। ভূমিকম্পে অনেক ভবন ধসে গেছে। ইজমিরের রাস্তায় ভবনের ধ্বংসাবশেষ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে শিশুদের খেলনা, বালিশ।
ভূমিকম্পের প্রত্যক্ষদর্শী গোখান কান (৩২) বলেন, ‘ভাবছিলাম সব কি শেষ হয়ে যাচ্ছে? প্রায় ১০ মিনিট ধরে ভূকম্পন অনুভূত হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল ভূমিকম্প আর শেষ হবে না। তখন নিজের জন্য নয়, বেশি ভয় পেয়েছিলাম আমার স্ত্রী আর চার বছরের ছেলের জন্য।’
ইজমিরের মেয়র তুনস সয়ার জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে ২০টি ভবন ধসে গেছে। ধসে পড়া ১৭টি ভবনে উদ্ধারকাজ চলছে।
তুরস্কের দুর্যোগ ত্রাণ সংস্থা বলছে, ভূমিকম্পে ২০ জন নিহত হয়েছে এবং প্রায় ৮শ’ জন আহত হয়েছে। গ্রিসের সামোস দ্বীপে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে দুই কিশোর দেয়াল চাপায় নিহত হয়েছে।
এদিকে তুরস্কের ধর্ম বিষয়ক দপ্তর গৃহহীনদের আশ্রয়ের জন্য মসজিদগুলো খুলে দিয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা গেছে, ইজমিরের রাস্তাগুলো নদীতে পরিণত হয়েছে। সেখানকার বেশির ভাগ এলাকা সাদা ধোঁয়ায় ভরে গেছে। বড় বড় ভবনগুলো ধসে পড়েছে।
উদ্ধারকর্মীদের কাজে সাহায্য করছে স্থানীয় লোকজন ও শিকারি কুকুর।
অন্য একটি জায়গায় কৃষিমন্ত্রী বেকির পাকডিমিরলিকে দেখা গেছে ফোনে কথা বলতে। তিনি ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া এক মেয়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করছিলেন।
ওই এলাকার গভর্ণর জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ৭০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। তবে ঠিক কতজন নিখোঁজ তা জানা যায়নি।
এদিকে ন্যাটোর সামরিক জোটের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও প্রতিবেশী দুই দেশ তুরস্ক ও গ্রিস চিরশত্রু হিসেবে বিবেচিত। দেশ দ’ুটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্প প্রবণ এলাকায় অবস্থিত। কিন্তু এই দুর্যোগ উভয়ের মাঝে বন্ধুত্ব তৈরির সুযোগ তৈরি করেছে।
গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘আমাদের মধ্যে যত মতবিরোধই থাক এটাই একসঙ্গে থাকার সময়।’
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান প্রতি উত্তরে গ্রিসের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে তুরস্কের উত্তর পশ্চিমে ৭.৪ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে ১৭ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারায়। এর মধ্যে ইস্তাম্বুলে মারা গেছে এক হাজার মানুষ। এছাড়া গ্রিসে সামোসের নিকটবর্তী কস দ্বীপে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে।