তৃণমূল উদ্যোক্তা উন্নয়নে কাজ করতে চাই

হেলেনা জাহাঙ্গীর দীর্ঘদিন  থেকে ব্যবসা করছেন। একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হেলেনা জাহাঙ্গীর গার্মেন্টস ব্যবসার পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের ব্যবসায় সুপরিচিত ব্যাক্তিত্ব।  এফবিসিসিআই নির্বাচনে ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ  থেকে পরিচালক পদের প্রার্থী। ব্যবসা-বাণিজ্যের সার্বিক পরিস্থিতি, ভ্যাট আইন, গার্মেন্টস ব্যবসা ইত্যাদি নানা বিষয়ে আজকের কাগজের রিপোর্টার  শেখ রিয়ালের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন। তাঁর সঙ্গে কথপোকথনের অনুলিখন তাঁরই ভাষায় ছাপা হলো।    

ব্যবসা-বাণিজ্যের বর্তমান অবস্থা
বিশ্বায়নের এই সময়ে ব্যাবসার বাজার এখন উন্মুক্ত। আর সে দিক দিয়ে বিবেচনা করলে বর্তমান সময়ে গার্মেন্টস শিল্পের ব্যবসা আগের মত নেই। এ পরিস্থিতিতে গার্মেন্টস সেক্টরটা প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমি তো এই সেক্টরে অনেক দিন আছি, আমি জানি ভেতরের খবর। আমাদের বিদেশি বায়ার আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। এখন যে পরিমাণ পণ্য তারা নিচ্ছেন তা আগের চেয়ে কম। ডিজাইনের বৈচিত্র আগের চেয়ে বেড়েছে কিন্ত অর্ডারের পরিমাণ কমে গেছে। তাই  সার্বিক অর্থে  সেক্টরে মন্দাভাব বিরাজ করছে বলা যায়।

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সঙ্গে এই সেক্টর প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো হলে ব্যবসা ভালো যায়, আর অস্থিরতা থাকলে তো কথাই নেই। চারিদিকে হ য ব র ল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তখন। কিচ্ছু করার উপায় থাকে না। বর্তমানে যেহেতু রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো যাচ্ছে সেহেতু আমরা ও অনেকটা ভালো আছি।

অনেক প্রতিবন্ধকতা থাকার পরও সরকারের সহযোগিতায় আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আর যেসব অর্ডার আমরা পাচ্ছি সেগুলো যদি সঠিক সময়ে সাপ্লাই দিতে পারি তাহলেই হলো। তা ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের মতো কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে স্বল্প সুদে অর্থাৎ শতকরা ৪.৫ হারে ঋণ সুবিধা দিয়েছে। এটা যদি সব ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে দিত তা হলে আরো আমাদের এই গার্মেন্টস সেক্টরের জন্য অনেক ভালো হতো। ফলে এসময়ে যারা নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে তারা আমাদের চাইতে একটু পিছিয়ে আছে।

আমি মূলত এসেছি না সি ব থেকে। এটা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংগঠন, সারা দেশে জেলা, উপজেলার তৃণমূল পর্যায়ে এই সংগঠনের শাখা প্রশাখা রয়েছে। আমাদের সদস্য সংখ্যা প্রায় ১০ হাজারের মতো। এই প্ল্যাটফর্মে যেহেতু আমি একজন নারী শিল্প উদ্যোক্তা। আমি এই ব্যবসায় এখন প্রতিষ্ঠিত। আসছে এফবিসিসিআই নির্বাচনে আমি একজন প্রার্থী হয়েছি। আমার মনে হয় এ সংগঠনের একজন সদস্য হলে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের জন্য আরো বেশি করে কাজ করতে পারব, নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করাসহ তাদেরকে বিভিন্নভাবে সগযোগিতা করতে পারব। আর এ জন্যই নির্বাচনে আসা।

ভ্যাট সিঙ্গেল ডিজিটে আনতে কাজ করবো
আমি যদি নির্বাচিত হই তাহলে চেষ্টা করবো এই সেক্টরের ভ্যাট সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার এবং অনলাইন সিস্টেমে নিয়ে আসার। এতে করে ব্যাবসায়ী জনগন উপকৃত হবে। আপনারা জানেন যে প্রায় সারে তিন কোটি ব্যাবসায়ী জড়িত এফবিসিসিআইতে। এতো বিশাল সংগঠনের মধ্যে থেকে সহজেই কাজ করা যাবে। বলতে হয় যে পুরো দেশটাকেই অর্থনৈতিকভাবে চাঙা রেখে চালাচ্ছে এফবিসিসিআই। এজন্য ভ্যাটের পরিমাণ যদি সিঙ্গেল ডিজিটে আনা যায় তাহলে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা উপকৃত হবেন। বর্তমান ভ্যাট- এর হার তাদের কাছে একটা বোঝার মতো, কারণ যা আয় হয় তা যদি ভ্যাটই দিয়ে দিতে হয় তাহলে লাভের কিছুই আর থাকে না। আর সুদের হার পাঁচ থেকে সাত শতাংশের মধ্যে নিয়ে আসলে তাদের জন্য বড় ধরনের একটা সুবিধা হবে। আমি নির্বাচিত হলে এ ব্যাপারটা গুরুত্ব দিয়ে কাজ করবো।

এফবিসিসিআই নির্বাচন
আসলে এফবিসিসিআই এর নির্বাচনে মূলত নির্বাচিত হবেন মোট ১৮ জন। যেহেতু প্রার্থীর সংখ্যা অনেক তাই দুইটি প্যানেলে নির্বাচন হচ্ছে। আমাদের সবার দল এক, সভাপতিও এক। কাজের উদ্দ্যেশ্যও এক । আমরা যারাই নির্বাচিত হই না কেন ব্যবসা ও ব্যাবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা হয় এবং ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ যাতে সব ক্ষেত্রে বিরাজ করে তারই প্রষ্টা থাকবে সবার মাঝে। তাছারা গার্মেন্টস শিল্পের বিভিন্ন সেক্টরের সকল সমস্যা সম্ভাবনা সহ যাবতীয় সব সুযোগ সুবিধা সরকারের কাছ থেকে অনুমোদিত করে নিয়ে আসাই এ সংগঠনের মূল কাজ ।

নির্বাচিত হলে যা করতে চাই
আমি হেনা জাহাঙ্গীর যদি নির্বাচিত হই তাহলে এই সেক্টরের বিশাল পরিসরে কাজ করতে চাই। আমি গার্মেন্টস সেক্টর থেকে আসেছি, ব্যাবসায়ী প্লাটফর্ম থেকে এসেছি। আমি জানি কিভাবে ব্যবসা করতে হয়, কত কষ্ট করে এই পথ পারি দিতে হয়। ওদিকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তারা অনেক কষ্ট করে, অনেক সংগ্রাম করে টিকে আছে। তাদের সুবিধাগুলো যদি বাড়ানো যায়, চার লক্ষ টাকা লোনের পরিমাণ দশ লক্ষ করা যায়, পাশাপাশি সুদের হারটা কমিয়ে আনা যায় তাহলে তারা অনেক সাচ্ছন্দে কাজ করার সুযোগ পাবে। আমি নির্বাচিত হলে তাদের জন্য এই কাজটুকু সবার আগে করতে চাই। নির্বাচিত না হলেও আমার কাজ থেমে থাকবে না।

আমি বসে থাকতে আসি ন, কাজের লোক কাজ করতে চাই। আর সবাই তো বড় একটা প্লাটফর্মে কাজ করতে চায়, আমিও এর ব্যাতিক্রম নই। যেহেতু এ সেক্টরটা বিশাল তাই আমার এখানে আসা। মূলত এ জন্য আমি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি। তাই বলবো আপনারা যারা ভোট দিবেন অবশ্যই যোগ্য, অভিজ্ঞ, কাজ জানে কাজ করতে পারে এমন প্রার্থীকেই আপনার মূল্যবান ভোট প্রদান করবেন।

নতুনদের জন্য বলা
নতুন যারা এ সেক্টরে কাজ করতে চায় তাদের বলতে চাই, কষ্ট এবং পরিশ্রম কখনো বৃথা যায় না। আপনারা চেষ্টা করে যান, চেষ্টা করলে সফলতা আসতে বাধ্য।  সবার কাছে আমার অনুরোধ নিজের জায়গা থেকে নিষ্ঠার মাধ্যমে পরিশ্রম করে যান, সফলতা আসবেই।

আজকের বাজার : আরআর/ ০৪ মে ২০১৭