দায়িত্ব পালন করুন সততা ও পেশাদারিত্বের সাথে পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি আইজিপির নির্দেশনা

জনগণের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে সততা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।

পুলিশি সেবা পেতে জনগণকে এখন পুলিশের কাছে আসতে হবে না। পুলিশই জনগণের দোরগোড়ায় পৌছে যাবে বলেও জানান আইজিপি। বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে পুলিশকে জনগণের কাছে নিয়ে যেতে ইউনিট প্রধানদেরকে নির্দেশনা দেন তিনি।

তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি ইউনিয়নকে একেকটি বিটে ভাগ করে প্রতিটি বিটের দায়িত্বে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়োজিত করা হবে। তিনি নিয়মিত ওই ইউনিয়নের মানুষের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা ইত্যাদির খোঁজখবর করবেন, প্রতিনিয়ত তাদের সাথে যোগাযোগ রাখবেন, তাদের মতামত জানবেন। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের সমস্যার সমাধান করবেন এবং কাঙ্খিত সেবা প্রদান করবেন।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা, ময়মনসিংহ এবং সিলেটে বিট পুলিশিংয়ের সাফল্য উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, এসব এলাকায় বিট পুলিশিং সফল হয়েছে। এর আলোকে সারাদেশে বিট পুলিশিং চালু করা হবে বলেও জানান তিনি।

আইজিপি রোববার সন্ধ্যায় সিএমপি, কেএমপি আরএমপি, বিএমপি, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল রেঞ্জ, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, সিআইডি, র‌্যাব পিবিআই, রেলওয়ে, টুরিস্ট, হাইওয়ে ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ এবং পুলিশ স্টাফ কলেজ, পুলিশ একাডেমী, সারদার প্রধান এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তৃতাকালে এসব নির্দেশনা প্রদান করেন। পুলিশ সদর দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ কথা জানানো হয়।

করোনাকালে পুলিশের সেবার কথা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, ‘করোনার সময় জনগণকে পুলিশের কাছে আসতে হয়নি। আমরা জনগণের কাছে গিয়েছি, তাদের পাশে থেকেছি, তাদেরকে করোনা সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখতে গিয়ে নিজেরা আক্রান্ত হয়েছি, জীবন দিয়েছি।

তাদের বাসায় খাবার পৌঁছে দিয়েছি, যাতায়াতের ব্যবস্থা করেছি, তাদের ধান কাটার ব্যবস্থা করেছি, করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির আপনজনরা যখন কাছে আসেনি তখন আমরা তার দাফন এবং সৎকারের ব্যবস্থা করেছি। এটা আমাদের দায়িত্ব ছিল না, কিন্তু আমরা মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে কাজটি করেছি’।

প্রধানমন্ত্রী এ অনবদ্য ভূমিকার জন্য আমাদেরকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। দেশবাসী অকুণ্ঠচিত্তে আমাদের প্রশংসা করছেন’। তিনি বলেন, ‘একদিন করোনা থাকবে না, তখনও মানুষের আস্থা, ভালোবাসা ধরে রাখার জন্য আমাদেরকে নিরন্তর প্রয়াস অব্যাহত রাখতে হবে। সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ ও মানুষের কল্যাণে একযোগে কাজ করতে হবে’।

দুর্নীতিমুক্ত পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলা, যে কোনো নির্মম নির্যাতন ও নিপীড়ন থেকে পুলিশ সদস্যদের দূরে থাকা, মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ায় পুলিশের জোরালো ভূমিকা রাখা, বিট পুলিশিংয়ের মধ্য দিয়ে পুলিশি সেবা জনগণের কাছে পৌঁছানো ও পুলিশের কল্যাণ নিশ্চিত করার কথা আইজিপির এই নির্দেশনায় বলা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

আইজিপি বলেন, ‘জনগণের পুলিশ হতে হলে পুলিশকে মাদকমুক্ত হতে হবে। কোনো পুলিশ সদস্য মাদক খাবে না, মাদকের ব্যবসা করবে না, মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সম্পর্ক রাখবে না। একটি মাদকমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে’।

তিনি বলেন, ‘কোন পুলিশ সদস্য অবৈধভাবে কোন অর্থ উপার্জন করতে পারবেন না। দুর্নীতির সাথে যুক্ত হয়ে কেউ যদি ধনীলোক হতে চায়, তাহলে তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা করুক, ধনী হোক, আমরা তাকে সাধুবাদ জানাবো। কিন্তু, পুলিশে থেকে কোন ভাবেই দুর্নীতির সাথে যুক্ত থাকা যাবে না’।

তিনি বলেন, ‘জনগণকে ভালবাসতে হবে, তাদের পাশে থাকতে হবে, তাদের জন্য কাজ করতে হবে। দায়িত্ব পালনকালে নিপীড়ন-নির্যাতন থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আইনি সক্ষমতাকে কাজে লাগাতে হবে। পুলিশকে সকল ধরণের নির্যাতন থেকে বেরিয়ে এসে জনগণের পুলিশ হতে হবে’।

আইজিপি বলেন, ‘মানুষকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে, তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ কর্মকর্তা ও ফোর্সেরও সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা হবে। বর্তমানে কোন পুলিশ সদস্য চাকরিরত অবস্থায় নিহত হলে অথবা কঠিন রোগে আক্রান্ত হলে তাকে ও তার পরিবারকে আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হয়।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর আধুনিক সমরাস্ত্রের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করেছে পুলিশ। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার জন্য নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্প-২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে পুলিশকেও উন্নত দেশের উপযোগী পুলিশ হিসেবে তৈরি হতে হবে। খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান