দেশের উন্নয়ন করতে হলে দেশপ্রেম অবশ্যই থাকতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বলেছেন, দেশের উন্নয়নে দেশপ্রেম, নিষ্ঠা ও আনুগত্য আবশ্যক।
তিনি বলেন, ‘দেশের উন্নয়ন করতে হলে নিষ্ঠাবান হতে হবে। দেশপ্রেম থাকতে হবে। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সততা নিয়ে কাজ করলেই উন্নয়ন হতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী আজ টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনের টানা চারবারের সংসদ সদস্য, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. একাব্বর হোসেনের মৃত্যুতে সংসদে আনিত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় একথা বলেন।
এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন।
মো. একাব্বর হোসেন গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
সততা ছাড়া যে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়, সেটা ’৭৫ এর পর ২১টি বছর জাতি প্রত্যক্ষ করেছে বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে তাঁর সরকারের টানা ১২ বছরের শাসনে দেশের যে উন্নতি সেটা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ না করলে কোনভাবেই সম্ভব ছিলনা।
নিজের দেশের অর্থ অন্যের হাতে তুলে দিয়ে সেই অর্থ থেকে আবার কমিশন গ্রহণের নজীরও অতীতে দেশে ছিল। কাজেই সেই ধরণের নিষ্ঠাবান নেতৃত্ব যে দেশের জন্য কতটা প্রয়োজন সেটা তিনি মর্মে মর্মে উপলদ্ধি করেন বলেও উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশের জন্য এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য অনেক বড় একটা ক্ষতি। কেননা একাব্বরের মত একজন নিষ্ঠাবান ও সৎ রাজনীতিবিদকে আমরা হারালাম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে এবং সড়ক ও সেতু নির্মানে যে সাফল্য অর্জন করতে পেরেছি সেখানেও একাব্বর হোসেনের একটা সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। অসুস্থ অবস্থায় সংসদের এই সেশনেও তাঁর কমিটির একটি বিল সংসদে উত্থাপন এবং পাশ হয়।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে দলকে যেমন নেতৃত্ব দেওয়া এবং দেশের উন্নযনে যারা অবদান রাখবেন এমন একজন সংসদ সদস্যকেই আমরা হারালাম। সেটাই সবচেয়ে দুঃখজনক। আর এরকম একের পর একজনকে আমরা হারাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার কভিড-১৯ এর মত বিশ^ব্যাপী চলমান দুর্যোগ মোকাবেলা করে দেশের মানুষের জীবনযাত্রা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে। যেটা বিশ^ব্যাপী সকলে মনে করে এবং বলে। যদিও বিশে^র অনেক উন্নত দেশে এখন খাদ্যাভাব রয়েছে। সম্প্রতি তিনি লন্ডন সফরকালেও দেখেছেন সুপার মার্কেটে অনেক জিনিষ পাওয়া যাচ্ছেনা, সাপ্লাই নেই। অথচ ছোট্ট ভুখন্ডের এবং অধিক জনসংখ্যার এই দেশের গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত খাদ্যের হাহাকার নেই।
অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সরকারি দলের সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, আবদুস সোবহান মিয়া, বেনজির আহমেদ, আনোয়রুল আবেদীন খান ও বিরোধী দলের চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা।
সরকার প্রধান বলেন, ২০০১ সালে যে নির্বাচন হলো বাংলাদেশে সেই নির্বাচনে জয় লাভের পর বিএনপি অত্যাচার, নির্যাতন, মানুষ হত্যা, মেয়েদের ওপর পাশবিক অত্যাচার করেছিল। তারা সে সময় অপারেশন ক্লিনহার্টের নামে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছে । আজকে ক্রসফায়ার নিয়ে তারা কথা বলে। এই ক্রসফায়ার শুরুই করলো বিএনপি। তারা র‌্যাব সৃষ্টির মাধ্যমে ক্রসফায়ারে মানুষকে হত্যা করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে প্রথম আঘাত করলো জাতীয় পার্টির ওপর। আর জাতীয় পার্টির ওপর যখন আঘাত করেছে সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগও কিন্তু রেহাই পায়নি। বিএনপি’র চরিত্রটাই ছিল এরকম।
তিনি বলেন, আবার জেনারেল এরশাদ যখন ক্ষমতায় তখনও তাদের আক্রমণ ছিল আওয়ামী লীগের ওপর। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, অত্যাচার, নির্যাতন করেছে। আমি তো কতবার গ্রেফতার হয়েছি। এ ধরনের যত আঘাত এসেছে প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখেছি একাব্বর হোসেন সক্রিয় ছিলেন। তিনি সব সময় প্রতিবাদ করেছেন এবং যে কোনো সংগ্রামে বলিষ্ঠ ভুমিকা রেখেছেন।
তিনি উদাহারণ টেনে বলেন, ‘ঢাকায় আমরা মিটিং করবো একাব্বর হাজির থেকেছেন। কাজেই তার যে অবদানটা আমাদের দলের জন্য, দেশের জন্য এটা সত্যিই ভুলবার নয়।’
সংসদ নেতা বলেন, এবার আমরা একটানা ক্ষমতায়। একাব্বর হোসেনের নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নে বিরাট অবদান রেখেছেন। সড়ক ও সেতু বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে প্রত্যেকটা প্রকল্পে তার বিশেষ অবদান রয়েছে। অত্যন্ত দুঃখজনক এই সংসদের ২০ জন সদস্যকে আমরা হারিয়েছি। আমি সবারই আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
পরে মরহুমের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করে তার আত্মার মাগফেরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন সরকারি দলের সদস্য এনামুল হক।
এরপরই সংসদের রেওয়াজ অনুযায়ী দিনের সব কার্যসূচি স্থগিত করে বৈঠক মুলতবি করা হয়।