নিক্সন চৌধুরীকে শর্তসাপেক্ষে ৮ সপ্তাহের আগাম জামিন

ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরীকে মঙ্গলবার শর্তসাপেক্ষে আট সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট।

নিক্সন চৌধুরী স্বশরীরে হাজির হয়ে আবেদন জানালে বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই জামিন দেন।

তার আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তাকে ৮ সপ্তাহের আগাম জামিন দেওয়া হয়েছে। তবে মামলার তদন্ত কাজে সহযোগিতা করতে এবং সাক্ষীদের ভয়ভীতি না দেখানোর শর্ত দেওয়া হয়েছে।

এর আগে আজ সকাল ১০টার দিকে নিক্সন চৌধুরী জামিন নিতে হাইকোর্টে এসে পৌঁছান।

এ সময় নিক্সন চৌধুরী বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে করা মামলা আমি আইনিভাবে মোকাবিলা করব। আমার বক্তব্যের যে অডিও রেকর্ডিংটি প্রকাশ হয়েছে, সেটি সুপার এডিটেড। এটা অসত্য জিনিস, এটাকে এডিটিং করে বানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসক কীভাবে এই ভিডিও প্রকাশ করেছেন, তাও খতিয়ে দেখা দরকার। আমার বক্তব্যের রেকর্ডিংটা, যতটুকু কথাই আছে, জেলা প্রশাসকের কাছেই আছে। উনার মাধ্যমে এইটা কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় এলো, সেটারও বিচার হওয়া উচিত। আইসিটি অ্যাক্টে এটাও তো অপরাধ।’

গত রবিবার নিক্সন চৌধুরীর পক্ষে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় তার আইনজীবী জামিন আবেদন করেন। পরে এ বিষয়ে শুনানির জন্য ২০ অক্টোবর দিন ধার্য করা হয়। আদালতে এদিন নিক্সন চৌধুরীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এম মনজুর আলম।

ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন এবং সরকারি কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, গালাগাল ও হুমকির অভিযোগে গত ১৫ অক্টোবর নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করে ইসি। জেলা জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা নোয়াবুল ইসলাম চরভদ্রাসন থানায় এ মামলা করেন।

গত ১০ অক্টোবর চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) হুমকি এবং নির্বাচন কর্মকর্তাদের গালাগাল করেন নিক্সন চৌধুরী। এ ঘটনায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে অশোভন আচরণের বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে নির্বাচন কমিশনেও চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠি পর্যালোচনা করে কমিশন সচিবালয় উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা অনুযায়ী মামলার সিদ্ধান্ত নেয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরী ৯ অক্টোবর সকালে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকারকে ফোন করে নির্বাচনে অধিকসংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অধিকসংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের কারণে তার সমর্থিত প্রার্থী পরাজিত হলে মহাসড়ক অবরোধ করাসহ নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখান ও অশোভন মন্তব্য করেন।

এছাড়া নির্বাচনের দিন আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় ভাঙ্গার সহকারী কমিশনার (ভূমি) এক ব্যক্তিকে আটক করেন। এ ঘটনায় ইউএনওর মুঠোফোনে তাকে ও সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটকে অত্যন্ত অশালীন ভাষায় গালিগালাজ ও ভয়ভীতি দেখান নিক্সন। তাছাড়া নিক্সন চৌধুরী নির্বাচনী এলাকায় উপস্থিত হয়ে নির্বাচনী কার্যকলাপে অংশ নিয়ে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন।

চরভদ্রাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজনীন খানম জানান, মামলাটি তদন্তের জন্য থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জিয়ারুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দ্রুততম সময়ে মামলার তদন্ত শেষ করা হবে।