নির্ধারণ করা হলো লবণ-মাখানো গরুর চামড়া ঢাকায় প্রতিবর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা এবং বাইরে ২৮ থেকে ৩২ টাকা

পবিত্র ঈদুল আজহা’কে সামনে রেখে কোরবানিকৃত পশুর চামড়ার মূল্য এখনই নির্ধারন করে দেয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত মূল্য-অনুযায়ি,এ বছর রাজধানী ঢাকায় গরুর কাঁচা চামড়া (লবণযুক্ত) প্রতি-বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরের মধ্যে এবং ঢাকার-বাইরে ২৮ থেকে ৩২ টাকা দরে বেচাকেনা করতে হবে। এছাড়া,ঢাকাসহ সারাদেশে খাসীর কাঁচা-চামড়া বর্গফুট-প্রতি ১৩ থেকে ১৫ টাকা এবং বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১০-১২ টাকা দর নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী আজ রোববার সচিবালয়ে তাঁর কার্যালয়ে ‘আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে কোরবানীর পশুর কাঁচা চামড়ার মূল্য নির্ধারণ, কাঁচা চামড়া সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, মিডিয়ায় প্রচার এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গীক বিষয়ে পর্যালোচনা সংক্রান্ত’ জুম প্লাটফর্ম সভায় সভাপতির বক্তৃতায় পশু-ভেদে কাঁচা-চামড়ার দর-সম্পর্কিত তথ্য তুলে ধরেন। তিনি এ সময় উল্লেখ করেন, ট্যানারীর মালিকরা উল্লিখিত মূল্যে কাঁচা চামড়া ক্রয় করার ঘোষণাও দিয়েছেন।

বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীনের সঞ্চালনায় জুম প্লাটফর্ম সভায়, তথ্য সচিব কামরুন নাহার, এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান, বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ, বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস এন্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন, লেদার গুডস এন্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনে প্রেসিডেন্ট মো. সাইফুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ হাইড এন্ড মার্চেন্ট সোসিয়েশনের সভাপতি আফতাব খান বক্তৃতা করেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন,স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচা চামড়ার মূল্য এবং সামগ্রীক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য-সংগঠন ও ট্যানারী এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দের সাথে পরামর্শ করে এবং চামড়ার আন্তর্জাতিক বাজার দর, আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা, বৈশ্বিক করোনা (কোভিড-১৯) পরিস্থিতিতে চামড়ার চাহিদা, বাংলাদেশের চামড়ার গুণগত মান,স্থানীয় চাহিদা, মজুত পরিস্থিতি-সবকিছু বিবেচনা করে এ মূল্য নির্ধারণ করা হয়।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, চামড়ার নির্ধারিত মূল্য নিশ্চিতের পাশাপাশি যথাযথ প্রক্রিয়ায় চামড়া সংগ্রহ ও কাঁচা চামড়ায় যথাসময়ে লবণ-লাগানোর বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। টিপু মুনশী বলেন,‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত মনিটরিং টিম ঈদের দিন থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে কঠোরভাবে এ সব বিষয় মনিটরিং করবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রয়োজনে এবার কাঁচা চামড়া ও ওয়েষ্ট ব্লু চামড়া রপ্তানি করা হবে।’

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এ বছর যাতে জবাইকৃত কোরবানির পশুর চামড়া কোনভাবেই নষ্ট না হয় এবং চামড়ার নির্ধারিত মূল্য নিশ্চিত করা যায়, সেজন্য সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি কঠোর-মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

তিনি এসময় উল্লেখ করেন,চামড়া সংগ্রহের ৫ থেকে ৬ ঘন্টার মধ্যে কাঁচা চামড়ায় অবশ্যই প্রয়াজন-মাফিক লবণ মিশাতে হবে। মন্ত্রী বলেন,দেশে পর্যাপ্ত লবণ রয়েছে এবং তা সরবরাহে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে।

টিপু মুনশী জানান, চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, নির্ধারিত মুল্যে ক্রয়-বিক্রয়সহ সার্বিক ব্যবস্থাপনা তদারকির জন্য সকল বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর জেলা পর্যায়ে মনিটরিং করবে।

তিনি বলেন, জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল, বেতার, কমিউনিটি রেডিওতে প্রচারণা চালানোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া, ফেসবুক-ইউটিউবে ১০ লাখ মানুষের কাছে ভিডিও বার্তা প্রেরণ এবং পর্যাপ্ত হ্যান্ডবিল বিতরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

টিপু মুনশি বলেন, দেশের মোট চাহিদার সিংহ ভাগ কাঁচামড়া সংগৃহীত হয় পবিত্র উদুল আজহার সময়ে এবং প্রাপ্ত কাঁচা চামড়ার সাথে একদিকে যেমন দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষ করে এতিমখানা, মসজিদ ও মাদ্রাসা জড়িত, তেমনি এ কাঁচা চামড়া রপ্তানিমূখী শিল্পেরও কাঁচামাল। এজন্যই সরকারের পক্ষ থেকে এর উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করা হয়। খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান