নির্বাচন কমিশন গঠনে ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি

প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনার নিয়োগের মাধ্যমে নতুন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ দিতে সার্চ (অনুসন্ধান) কমিটি করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপতির নির্দেশে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বুধবার (২৫ জানুয়ারি) কমিটি গঠন করে আদেশ জারি করেছে। কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ পেশ করতে হবে। ছয় সদস্য বিশিষ্ট সার্চ কমিটির আহ্বায়ক সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। গতবারের সার্চ কমিটিরও প্রধান ছিলেন তিনি।

কমিটির সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন-সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মাসুদ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য শিরিন আখতার।

নির্বাচন কমিশনে (ইসি) প্রথমবারের মতো কোনো নারী কমিশনারকে দেখা যাবে এবার। কমপক্ষে একজন নারীসহ প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে সার্চ কমিটিকে।

বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এ আদেশ জারি করা হয়। ওই সময়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুল ওয়াদুদ অপেক্ষমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মহামান্য রাষ্ট্রপতির আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য পূরণে নির্বাচন কমিশন গঠনে সুপারিশ দিতে রাষ্ট্রপতি একটি অনুসন্ধান কমিটি (সার্চ কমিটি) গঠনের নির্দেশনা দেন। এজন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।’

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সার্চ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে। তিন সদস্যের উপস্থিতিতে অনুসন্ধান কমিটির কোরাম গঠিত হবে বলে আদেশে বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, কমিটি কমপক্ষে একজন নারীসহ প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে সুপারিশ দেবে। সভায় উপস্থিত সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে প্রতিটি শূন্য পদের বিপরীতে দুইজন ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবে অনুসন্ধান। সিদ্ধান্তের সমতার ক্ষেত্রে সভার সভাপতি নির্ণায়ক সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে।

১৯৭২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১১ জন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও ২৩ জন নির্বাচন কমিশনার দায়িত্ব পালন করেন। তাদের মধ্যে কোন নারী ছিলেন না। বর্তমান কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির সদস্য সংখ্যা ছিল ৪ জন। নির্বাচন কমিশন গঠনে দ্বিতীয়বারের মতো সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই সার্চ কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ দেবে।

একজন কমিশনার (মো. শাহ নেওয়াজের মেয়াদ শেষ হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি) বাদে বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য তিন নির্বাচন কমিশনারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি।

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সার্চ কমিটি করতে গত বছর ১৮ ডিসেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেন রাষ্ট্রপতি। সংলাপ শেষ হয় চলতি বছর ১৮ জানুয়ারি। এ সময়ে রাষ্ট্রপতি আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ ৩১টি দলের সঙ্গে সংলাপ করেন। প্রায় প্রতিটি দলই নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের প্রস্তাব দেয়। তবে আইন না হওয়া পর্যন্ত সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে নতুন কমিশন গঠনের প্রস্তাবও দেয় দলগুলো।

বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠনে ২০১২ সালের ২২ জানুয়ারি চার সদস্যবিশিষ্ট সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ওই কমিটিতে সদস্য হিসেবে ছিলেন হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি, বাংলাদেশের মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান।

তখন কমিটি ১০ কর্মদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ পেশ করে।

রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব বুধবার সকালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আসে। এরপর তা প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো প্রস্তাব ফেরত আসে। প্রস্তাব ফেরত আসার পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে পরামর্শ করতে আইন মন্ত্রণালয়ে যান। পরামর্শ শেষে তিনি বিকেল ৪টায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ফেরেন।

সন্ধ্যার আগে আবারও ফাইলপত্তর নিয়ে বেরিয়ে যান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। জানা গেছে, শফিউল আলম সার্চ কমিটি গঠনের ফাইলে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নেন। অনুমোদনের পর তিনি আর না ফিরলেও অনুমোদিত ফাইল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়ে দেন। এরপেই আদেশ জারি করা হয়।

সুত্র: দ্য রিপোর্ট