নির্বাচন বন্ধ করার ক্ষমতা বিএনপির নেই : তোফায়েল

দেশে নির্বাচন বন্ধ করার ক্ষমতা বিএনপির নেই বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে জেলে পাঠানো হলে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না বলে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের জবাবে বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বাণিজ্যমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

সচিবালয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ফখরুল ইসলাম আলমগীর পার্টির মহাসচিব। তাকে অনেক কথা বলতে হয় যা বিশ্বাস করেন না তাও বলতে হয়। যা বলেন তা নিজেও বিশ্বাস করেন না। সুতরাং বাংলাদেশে নির্বাচন স্থগিত করার ক্ষমতা, নির্বাচন বন্ধ করার ক্ষমতা যে বিএনপির নেই, এটা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি তারা প্রমাণ করেছে। নির্বাচন বন্ধ করার শক্তি বিএনপির হবে না।’

তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা আছে। দুর্নীতির মামলা, সেটা বিচারাধীন। দুর্নীতির মামলায় কারো ন্যূনতম ২ বছর সাজা হলে তিনি ৫ বছর নির্বাচন করতে পারবেন না। বেগম খালেদা জিয়ার সাজা হবে কি হবে না, এটা তো আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। ল কি বলে, বিচারে কি হয় সেটা তো ভবিষ্যতের বিষয়।’

তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘(বিএনপি নেতারা) বক্তৃতায় অনেক কথা বলবে। এই সরকারের অধীনেই, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনেই বিএনপি ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে যে কোন দিন হবে। সে নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে। এতে কোন সন্দেহ নেই।’

ক্ষমতাসীন দলই নির্বাচনকালীন সরকারে থাকবে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ তোফায়েল বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার কি হবে এর উপর নির্ভর করবে বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা। আমি মিস্টার আলমগীরকে ম্যাসেজ দিচ্ছি, নির্বাচনকালীন সরকার হবে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল। এই দলই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে দৈনন্দিন কাজ করে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে, আমরা সর্বাত্মক সহায়তা দেব। সুতরাং তিনি (বিএনপি মহাসচিব) ইচ্ছা করলে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এর বাইরে কিছুই হবে না।’

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতে যখন নির্বাচন হয় তখন ভারতের ক্ষমতাসীন দল ক্ষমতায় থাকে। ভারতের পার্লামেন্টও বলবৎ থাকে। অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর যত সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশ আছে, এমনকি রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও বারাক ওবামার অধীনেই নির্বাচন হয়েছিল। বাংলাদেশেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হবে। ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে থাকা উচিত নয়। এটা জেনেই তারা সিদান্ত নেবেন বলে আমরা আশা করি।’

এর আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় বিএনপিকে পাঁচটি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এবার এমন সম্ভাবনা আছে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘ওই সময় আর বিএনপির জীবনে আর ফিরে আসবে না। কারণ প্রধানমন্ত্রী নিজে খালেদা জিয়াকে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। পাঁচটি মন্ত্রণালয় কথা বলেছিলেন প্রত্যাখ্যান করেছেন। যেটা একবার প্রত্যাখ্যান করেছেন সেটা তো তারা আর গ্রহণ করবেন না। আর আমাদেরও প্রস্তাব দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না।’

নির্বাচনের সময় নির্বাহী ক্ষমতা হাতে থাকলে নির্বাচনকে একপেশে করার সুযোগ থাকে বলে অভিযোগ তুলেছে বিএনপি- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তোফায়েল বলেন, ‘নির্বাহী ক্ষমতা থাকা এক জিনিস তা প্রয়োগ করা আরেক জিনিস। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাহী ক্ষমতা তো প্রধানমন্ত্রীর হাতেই থাকবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কাজ হবে দৈনন্দিন। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনটা করবে। এখানে বিএনপি বিভ্রান্তিতে ভুগছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপিরও একজন নেতাকে যদি মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার করতো তাহলেও তারা বিরোধিতা করতো। বিরোধিতা করাটা এখন তাদের (বিএনপি) অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।’

নিষিদ্ধ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ বিকৃত করা পাকিস্তানি বই

পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইনটেলিজেন্স (আইএসএই) কর্মকর্তা জুনায়েদ আহমেদের বই ‘ক্রিয়েশন অব বাংলাদেশ: মিথস এক্সপ্লোডেড’ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘বইটা বাজেয়াপ্ত করা হবে। পাকিস্তানি বইটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে লিখেছে। তারা ৩০ লাখ লোককে হত্যা করেছে। তারা সেই গণহত্যার দোষ চাপাচ্ছে বাংলাদেশের উপর। তারা মা-বোনের ইজ্জত লুট করেছে, বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে- সেই দোষ চাপিয়েছে বাংলাদেশের উপর। তারা হলো দুধে ধোয়া। তারা কিছু করেনি। ৩০ লাখ লোক শহীদ হয়েছে, এটা মুক্তিযোদ্ধারা করেছে। এ ধরনের বাজে বাজে লেখা রয়েছে বইতে।

এটা বাংলাদেশে আসতে পারবে না, আমরা বাজেয়াপ্ত করব। বাংলাদেশে এই বই চলবে না।’

তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘তাদের (পাকিস্তান) কত বড় স্পর্ধা, এত বড় অসত্য একটি বই আমাদের দূতাবাসে পাঠিয়েছে। এটা আমরা গতকাল পার্লামেন্টে আলোচনা করেছি।’

বইটি পাকিস্তান সরকার পাঠিয়েছে কিনা- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আইএসআই সরকারের অংশ। আইএসআই বই পাঠিয়েছে দূতাবাসে। মানেটা কি? গভর্নমেন্ট অউন দিস বুক (বইটি নিজেদের মনে করে)। তা না হলে সরকার বলুক এই বইয়ের সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই।’

বাংলাদেশ সরকার প্রতিবছর ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বলেও জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।

সুত্র: দ্য রিপোর্ট