নৌপথে অস্ত্র-গোলাবারুদ’র সন্ধানে নব্য জেএমবি

নৌপথে বিদেশ থেকে দেশে অস্ত্র ও গোলাবারুদ আনার পরিকল্পনা করছিল নব্য জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সদস্যরা। এজন্য তারা জাহাজে নিজেদের লোক নিয়োগ (রিক্রুট) করার চেষ্টা করছিল। হাতিয়ায়সহ দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে নব্য জেএমবির বেশ কিছু ট্রলার রয়েছে। বৃহস্পতিবার,২৭ এপ্রিল রাতে সাভারের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা নব্য জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের তিন সদস্য প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাবকে এ তথ্য জানিয়েছে।

গ্রেফতার হওয়া তিন জন হলেন- তামিম দ্বারী ওরফে আব্দুল্লাহ আল হাসান ওরফে আজিজুর রহমান ওরফে আব্দুল্লাহ আল জাফরী ওরফে আমির হামজা ওরফে আল হুজাইফা (৩২), কামরুল হাসান ওরফে কাজল ওরফে নুরুদ্দিন (২৬) ও মোস্তফা মজুমদার ওরফে শিহাব ওরফে হামজা (৩২)।

শুক্রবার,২৮ এপ্রিল রাজধানীর কাওরান বাজা‌রে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান। তি‌নি জানান, র‌্যাবের তদন্তে এমন একজনের নাম আসে যিনি হলি আর্টিজান হামলার কয়েকবছর আগ থেকেই নিহত তামিম চৌধুরীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করতেন। তারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৈঠক করে নাশকতার পরিকল্পনাও করেছেন। পরে র‌্যাব নিশ্চিত হয় ওই ব্যক্তির নাম তামিম দ্বারী।

‌তি‌নি আরও জানান, এমন তথ্যের ভিত্তিতে তামিম দ্বারীকে গ্রেফতা‌রে তৎপরতা শুরু করে র‌্যাব-৪। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) রাতে সাভারে একটি বাসে তল্লাশি চালিয়ে তামিম দ্বারীকে তার দুই সহযোগী কামরুল হাসান ও মোস্তফা মজুমদারসহ গ্রেফতা‌র করে র‌্যাব-৪।

এ সময় তাদের কাছথেকে একটি বিদেশী পিস্তল, ৫ রাউন্ড গুলি, ২টি ম্যাগজিন, প্রায় এক কেজি প্লাস্টিক এক্সপ্লোসিভ, আইইডি তৈরির সরঞ্জামাদী, তিনটি চাকু, একটি চাপাতি, একটি ল্যাপটপ ও বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রা উদ্ধার করা হয়।

মুফতি মাহমুদ জানান, গ্রেফতা‌রকৃতরা প্রাথমিকভাবে সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সক্রিয় সদস্য বলে স্বীকার করেছে। হলি আর্টিজান হামলা পরবর্তী বেশ কিছু অভিযানে নব্য জেএমবির শীর্ষস্থানীয় নেতাসহ অনেকেই মারা যায়। নেতৃত্বশূন্য দলকে পুনরায় সংগঠিত করতে চেষ্টা করছিল তামিম দ্বারী। সে যে কোনো সময় রাজধানীতে প্রবেশ করতে পারে এমন তথ্যের ভিত্তিতে সম্ভাব্য সকল স্থানে নজরদারী বৃদ্ধি করে র‌্যাব। পরে বৃহস্প‌তিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সাভারে ঝিটকা-গাবতলীগামী ভিলেজ পরিবহনের একটি বাসে তল্লাশি চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক জানান, গত বছরের ৮ অক্টোবর র‌্যাবের অভিযানে পালানোর সময় নিহত হন সারোয়ার জাহান। পরে তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ নথিপত্র উদ্ধার করা হয়। সে সব নথিপত্র বিশ্লেষণ করে এ পর্যন্ত সারোয়ার-তামিম গ্রুপের ২৫ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যাদের মধ্যে ১৪ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানব‌ন্দি দিয়েছেন। সে সব নথিপত্রেই তামিম চৌধুরীর বিশ্বস্ত তামিম দ্বারীর নাম পাওয়া যায়। সে জঙ্গিবাদে আগ্রহী যুবকদের উদ্বুদ্ধ করাসহ তামিম চৌধুরীকে দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন নাশকতার পরামর্শ দিতো।

মুফতি ব‌লেন, তামিম দ্বারী মেরিন একাডেমিতে পড়াশোনার পর বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের বাংলার কাকলীসহ বিভিন্ন জাহাজে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। একই জাহাজে কর্মরত আবু বক্করের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন এবং তামিম চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেন। তামিম দ্বারীর বিদেশ থেকে নৌপথে অস্ত্র-গোলাবারুদ আনার জন্য ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে বিভিন্ন জাহাজে তাদের লোক রিক্রুটের চেষ্টা করে। এ বিষয়ে নিহত তামিম চৌধুরী ও তামিম দ্বারীর মধ্যে বেশ কয়েকবার বৈঠক হয়।

‌তি‌নি আরও জানান, গ্রেফতার মোস্তফা মজুমদার কুমিল্লা পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করে ২০০৭ সালে পাওয়ার গ্রিড অব কোম্পানি বাংলাদেশে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেন। কর্মজীবনে এসে একই মনোভাবাপন্নদের সংস্পর্ষে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন তি‌নি। গ্রেফতার কামরুল হাসানের পিতা বিডিআর বিদ্রোহের অভিযোগে ৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত। ২০০৬ সালে কুমিল্লার একটি মাদ্রাসায় অধ্যায়নকালে জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট হন তি‌নি। ২০১৪ সালে তামিম চৌধুরী ও তামিম দ্বারীর মাধ্যমে জিহাদে উদ্বুদ্ধ হন এবং ২০১৬ সালের নভেম্বরে সে ক‌থিত হিজরতের জন্য বাড়ি ছাড়েন।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে/২৮এপ্রিল,২০১৭