পদ্মা সেতুর ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজতে তদন্ত কমিশন প্রক্রিয়াধীন

পদ্মা সেতু নির্মাণ চুক্তি এবং দুর্নীতির মিথ্যা গল্প সৃষ্টির নেপথ্যে প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।মঙ্গলবার,৯ মে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চে সরকারের দাখিল করা প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়েছে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে প্রতিবেদন দাখিল করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল টাইটাস হিল্লোল রেমা। এছাড়া এই রুলে পক্ষভুক্ত হতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় আদালতে আবেদন করেছে। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৩ জুলাই ধার্য করা হয়েছে।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির মিথ্যা গল্প সৃষ্টি এবং ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিশন গঠনে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। দুই সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, যোগাযোগ সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল। এ ছাড়া আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী এই তদন্ত কমিটি গঠনে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, ৩০ দিনের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রতিবেদন আকারে তা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।

সেই নির্ধারিত সময় শেষে ২০ মার্চ মামলাটি কার্যতালিকায় এলে রাষ্ট্রপক্ষ ৮ সপ্তাহ সময় চেয়ে আবেদন করে। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত কমিশন গঠনে অগ্রগতি জানাতে ৭ মে দিন নির্ধারণ করেন। সে অনুযায়ী রাষ্ট্রপক্ষ একটি প্রতিবেদন দাখিল করলে মঙ্গলবার তার ওপর শুনানি হয়।

‘ইউনূসের বিচার দাবি, বিশ্বব্যাংক ও টিআইবির ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান’ শিরোনামে ১৪ ফেব্রুয়ারি দৈনিক ইনকিলাবে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই রুল জারি করেন। পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থায়নের সিদ্ধান্ত থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়ার ঘটনা গোটা বিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টি করে। আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোতে ওই ঘটনা ফলাও করে প্রচার করায় বাংলাদেশ এবং বর্তমান সরকারের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়।

সাড়ে তিন বছর আগের ওই ঘটনার পর বিশ্বব্যাংকের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি কিছু ব্যক্তিত্বের দৌড়ঝাঁপ, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের ক্রিয়াকর্ম ও মিডিয়ার অতি উৎসাহ পদ্মা সেতু ইস্যুতে সরকারতে বিপাকে ফেলে দেয়। যা ছিল সরকারের জন্য চরম অবমাননাকর। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন থেকে সরে যাওয়ার কারণ পর্দার আড়ালে নোবেল বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূস কলকাঠি নাড়ছেন বলে মনে করে সরকার। কানাডার আদালত পদ্মা সেতু দুর্নীতির মামলা খারিজ করে দেওয়ার পর সবর হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের সমমনা দলগুলো।

তারা এখন মনে করছেন, ওই সময় পদ্মা সেতু ইস্যুতে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের সরকারের ভাবমর্যাদা নষ্ট করায় ড. ইউনূসকে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত। তা ছাড়া জার্মানির অর্থে পরিচালিত দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সরকার দলের নেতারা।

তাদের দাবি-দেশের যারা পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছে এবং বিশ্বব্যাংকের পক্ষ নিয়ে কথা বলেছেন তাদের সবাইকে জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণে বিলম্ব হওয়ায় যে অধিক অর্থ ব্যয় হচ্ছে সে ক্ষতিপূরণ বিশ্বব্যাংককে দিতে হবে। প্রয়োজনে বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করারও দাবি জানান তারা।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে/৯ মে,২০১৭