পরিতোষ হালদারের কবিতা

ইতিচিহ্ন

কিছু উষ্ণ ছিল। পাতায় পাতায় ইতিচিহ্নের স্রোত।
এই ইঙ্গিতখসা দিন, হাওয়ায় উড়ে গেছে- কর্পুর গন্ধের মতো তোমার হিজল।
একবার ঘুরে দাঁড়াও নাচুক মল্লার।
মাংসের মায়া থেকে উঁকি দিয়ে দেখ, ওইতো মোহ। ঝিল্লি জড়ানো রূপ।
তুমি এক উপমিত খাদ- তোমার কিনারে লীলায়িত বর্ষাকাল।
আঙুলে পাখি আঁকা সন্ধ্যাবেলা, কতোটা অন্ধকার লেখ রাতের কাগজে।
ঘুম ভেঙ্গে গেলে আবার সকাল, অর্ধেক ফলের পাশে অধিক চুম্বন।
……….

স্বরচিতি

জিৎ ছিল, অসংখ্য যোগের পাশে উজ্জ্বল শীত। স্নায়ুর বিপন্নতায় ঝরে গেছে চারমাত্রা দূরে।
নতুন চিত্র তুমি- কল্পের বিশুদ্ধ কাচ।
ছায়া নেমে এলে অপরাহ্ণও পাখি। যে কেউ আসতে পারো, চাইলেই উড়াল দিও।
পিপাসার ওইধারে সন্ধ্যা, শোক ও সবুজের ইঙ্গনরেখা। ঘুর্ণির কোন রং নেই, কেবল বিভ্রাট।
প্রতিটি মীড়ে পরে থাকা আদিগান।
এই ঘুম- মৃত্যুর মতো বেহাগপাতা। স্বরচিতি তুমি, হাত বাড়ালে আনন্দ বাজে।
……….

মুহূর্ত

আড়াল থেকেও ডাকতে পার, সম-ভ্রান্ত তুমি; দীর্ঘ কর ডাহুকঋতু।
এই পাতাঝরা দিন, স্মৃতির কাছে শিখে নেও ঘুম ও স্বপ্নের জট। উৎসব শেষেও রয়ে যায় উজ্জ্বল অশোক।
যে নামে ডাকো, ইঙ্গিতে ঝরে যায় তারা। ঈর্ষার মতো রূপ- মুখোশের সয়ম্বরে নির্জন তুমি।
করতলে জমা রাখা ভ্রম, নিজস্ব রঙের সাথে দ্বৈততা তার। একবার ছায়া পাঠাও, একবার নাচ হয়ে উঠি।
প্রতারণার কাছে অমিত্রাক্ষর তুমি। অংশ খোল, খুলে যাক মুহুর্তবেলা।
……….

ঘুম

ঘুমের ভেতর ছায়া, ইহস্রোতের মতো পরিযায়ী। মোহ আসে, উড়ে যায় নির্বানরঙ।
যে পাতা হেমন্তে দোলে তার অরণ্য লেগে থাকে বাতাসের গায়।
শীতের যোগফল তাই ঘুঙুর বাজানো প্রচ্ছদ।
উপনিবেশ ভেঙ্গে এসো, ছড়াভর্তি ইস্কুলে এসো……
অন্তর্ধান পর্বে দ্বৈত ছিল, যারা নক্ষত্রের ডানায় এঁকে দিতো মাস- আঠারো শষ্যের দম্পতিদানা।
তারাও যাবে, তুমি দৃশ্য খুলে দিও ; দেখো অন্ধকার কতো সহজবেলা।
তবুও ঘুম এক বিস্ময় ঋতু,
যেখানে পাথর গড়ালে পাপও গড়াতে থাকে।
…………

স্ফটিক

সামান্য তমশা দাও, একবার প্রতিমর্ম বলে ডাকো।
স্ফটিকের কাছে দৃশ্যের ভ্রমণ- অপরাহ্নের রঙ; ঘুমের মন্দ্র খুলে উড়ে যায়।
তোমার তুকের কাছে শৈশবরেখা।
লক্ষ্যভেদের সাথে ধাবমান ভেদ; মাছের চোখে দেখে টলটলে ছায়া, যুদ্ধ আর পাঁচপাতার বাঁশি।
পাতানো খেলার মতো জাদু, পূনশ্চ বাস্তব।
পলাতক তুমি- কোলাহল শেষে একাও তুমি।
বরফকলের কাছে প্রথম তড়িৎ।
কে কারে চিনি, অথচ- লাল হলে আমাকেই রামধনু বলে ডাকো।
স্পর্শ কর, কিছু মৌন ঝুলে থাক কাচের বোতামে।
……..

পূনশ্চ

পূনশ্চ তুমি। এসো- এইদিকে ধ্যানবিন্দু, যুগপৎ স্পর্শ হই।
প্রশ্নবিদ্ধ গাছেদের মন, পাতায় পাতায় তারই মর্মর।
ডাক দাও বলে গণিতগুলো ছুটে যায়- যোগচিহ্নর মতো রাজহাঁস পাখি।
হিংস্র নয়, সিংহজুড়ে তোমার নির্জন; বিকেলের ডানায় তুমুল ছায়া।
ডালিমের সাথে যেটুকু লাল ফাটে, তার সহজিয়া ভোররাতের বাঁশি।
ভৈরবী শেষে কী রাগে বাজো তুমি!
অধিক রেখার পাশে আরও একরার দেখা হয়।
মিশ্রণে তরল ছিলে, আজ বিলম্বিত কর্পুর; নিশ্বাস ফেল আর উড়ে যাও।
যেমন- সাইরেন শেষে প্রতিটি বিমানই মূল্যহীন।
……………….

ডাকনাম

ডাকনামও একা।
কী তুমুল বোধ, পাতার অক্ষর ছুঁয়ে মিথুনরাশি।
অপেক্ষা অব্দি যেতে যেতে ফুটে থাকা জুঁইফুল, কেবল আয়ত চোখ।
যেতেই পারি, তোমার দূরত্বে এককোটি শ্লেষ, অপরাহ্ন আর জাদুঘর।
প্রতিবেশী বেতারে ছায়ার সানাই- ত্রিভুজ রঙের শৈশব।
তুমি ফেরীওয়ালা, অথচ- অজস্র নাম তোমার।
আমারও মূদ্রাদোষ আছে, অকস্মাৎ বেজে উঠি সংসারের মতো।
অরণ্যে রোদ্দুরগাছ-
ক্রমশ খুনি হওয়া, মুদ্রা ও রাক্ষস।
তোমার আয়ুরেখায়, সূর্যাস্ত কিছুটা নদ; পৌঁছাবার আগে কেবল ডুবে যায়।
…………

লাল

তুমিই লাল।
স্বরবর্ণের আড়ালে প্রাচীনরেখা; ম্লান অক্ষরে হেঁটে গেছ দূরে।
একা এক ছায়া, স্বপ্নের পেছনে দৌড়ানো পারদবেলা।
অহেতুক সাঁতার শেষে ভেসে যাওয়া সোমবার। ফুটে থাকা জ্যোৎস্নাও কিছু ঋতুর কূজন।
ক্রম ও তল হয়ে ভোর অব্দি তোমার ত্রিভূজ। প্রচণ্ড শব্দে মৃত তুমি- শব দাও বলে প্রমিত ইহকাল।
হিংসার পাখিরা উড়ে যায় অপেক্ষার দেশে, ডানায় পরিবাহী রঙ।
তাকিয়ে দেখ, পাতার বৈঠকে নুয়ে পড়া গন্ধরাজ।
অথচ তোমার লাল, বিস্ময় চিহ্নের মতো আজও অমিমাংসিত।
………….

অহম

বদলে যায় ঘুম, অজস্র ভৌত আঁকা তল।
যতোটা ফোটে তার থেকে ম্লান কোন ফুল, ঝরে পড়া বসন্তে ক্রমাগত মোহ।
নিজের অংশ কুড়াতে কুড়াতে একোন অহমবেলা।
শত্রুর অস্ত্রে ধার দেয়ার মতো আত্মঘাতী তুমি, প্রতিটি মৃত্যুর পরে কী নির্মম ভায়োলিন বাজাও-
সমুদ্র ভাসিয়ে দেও স্রোতে।
প্রচ্ছদের আঁড়ালে লুকিয়ে থাকা রঙ, প্রশ্নবোধের কাছে সেও জমা রাখে বিস্ময়।
যা কিছু গতিশীল- তোমার আঙুলের মুঠোয় তাই উড়াল।
হাত পাতলে নীল, নীল আসে- আকাশ আসে না।
…………