পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ও বড় ঋণে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ গবেষকদের

ক্রেডিট ডিপোজিট রেশিও, শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ সীমা এবং বড় ঋণের বিষয়ে বেশি সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে ঋণের গুণগত মান উন্নয়নের বিষয়ে বিশেষ নজর রাখতে হবে।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউশন অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের(বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদন ‘ক্রেডিট অপারেশনস অব ব্যাংকস’ শীর্ষক বার্ষিক পর্যালোচনা কর্মশালায় মূল প্রবন্ধে ড. প্রশান্ত এসব কথা বলেন।

গবেষক দলের প্রধান বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন এবং পরামর্শ) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জ্জী বলেন, দেশের বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো গত কয়েক বছর ধরে বড় ঋণের দিকে বেশি ঝুঁকছে।যা ব্যাংকিং ব্যবসায় তারল্য সংকট বাড়ারও আশংকা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন।

সবশেষ হিসাব তুলে ধরে তিনি বলেন, মোট ঋণের প্রায় সাড়ে ৫৭ শতাংশই বড় ঋণ। এরমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ৪০ শতাংশ, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৬৫ শতাংশ, বিশেষায়িত ব্যাংকের ৪৭ শতাংশ এবং বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৭৩ শতাংশ।
বড় ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকে পড়ার কারণে তুলনামূলক কম অঙ্কের ঋণ নিতে আগ্রহীদের সুযোগ নষ্ট করছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

কর্মশালায় বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন,গ্রামের মানুষ ঋণ কম পাচ্ছে। এতে অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিং কম হচ্ছে। সুতরাং বিষয়টি নিয়ে নীতি নির্ধারকদের চিন্তা করতে হবে। কীভাবে সবাইকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনা যায় সে বিষয়ে নজর দিতে হবে।

বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, “নির্দিষ্ট এলাকায় ঋণ দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। আবার একইভাবে নির্দিষ্ট লোককে ঋণ দিচ্ছে। এভাবে বাছ-বিচারহীন ঋণের কারণে একটি বড় অংশ ঋণ পাচ্ছে।”

বিআইবিএমের সুপারনিউমারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলী বলেন, “কিছু লোক তার একই সম্পত্তি বার বার দেখিয়ে ঋণ নেয়। এ সংক্রান্ত বিষয়ে বার বার আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি এখন নজর দেওয়ার সময় এসেছে।”

বেসরকারি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী বলেন, ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে ব্যাংক কর্মকর্তাদের।

“ঋণ নিয়ে গ্রাহকরা কারখানা বানালো না দামি পাজেরো জিপ কিনে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তা ব্যাংককে নজরদারি করতে হবে।”

ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান খেলাপি ঋণ কমানোর উপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, “খেলাপি ঋণসহ বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করে যাচ্ছে।”

অধ্যাপক হেলাল বলেন, “গ্রাহকদের মানসিকতার পরিবর্তন হলে কোনো ঋণ খেলাপি হবে না।”

কর্মশালার সভাপতি বিআইবিএমের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্বে) ড. শাহ মো. আহসান হাবীব ঋণ আদায়ে আরও শক্তিশালী আইন প্রণয়ন এবং তা প্রয়োগের উপর জোর দেন।

মিরপুরে বিআইবিএম মিলনায়তনের এই কর্মশালায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজশাহী কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।

জাকির/আজকের বাজার