প্রথমবারের মতো জাতীয় গণহত্যা দিবস আজ

আজ ২৫ শে মার্চ। ১৯৭১ সালের এই তারিখটিতে মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অত্যাধুনিক অস্ত্রসশ্রে সজ্জিত হয়ে তাদের পূর্ব পরিকল্পিত ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামক অভিযানে ঢাকাসহ সারাদেশে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, চালায় ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বরোচিত ও নিকৃষ্টতম গণহত্যা। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সেই বর্বরোচিত হামলার বিয়োগান্তক ঘটনার স্মরণে এবারই প্রথমবারের মতো ২৫ শে মার্চ ‘জাতীয় গণহত্যা দিবস’ পালন করবে জাতি। বর্তমান সরকারের যুগান্তকারী এই সিদ্ধান্তের আলোকে জাতীয় এ দিবসটিতে সরকারের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ইতিহাসের বর্বরোচিত এই গণহত্যার স্মরণে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর চলতি বছর ১১ মার্চ ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের জন্য জাসদ দলীয় এমপি শিরীন আখতার জাতীয় সংসদে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব তোলেন। এ প্রস্তাবের ওপর প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেতাসহ ৫৪ জন সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী প্রায় ৭ ঘণ্টা আলোচনায় অংশ নেন। আলোচনা শেষে সেইরাতে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে পাস হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বলেন, ‘জাতিসংঘ ১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর জেনোসাইড কনভেনশন গ্রহণ করে। ২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বরকে জেনোসাইড ডে হিসেবে ঘোষণা দেয়। কাজেই আমাদের কাছে সেই সুযোগ রয়েছে, জাতিসংঘের কনভেনশন অনুযায়ী আমরা ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে গ্রহণ করতে পারি।’

পরে ২০ মার্চ অনুষ্ঠিত মন্ত্রীসভার বৈঠকে ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণা এবং জাতীয় ও আর্ন্তজাতিকভাবে দিবসটি পালনের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয় । দিবসটিকে ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত দিবস অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব মন্ত্রীসভায় অনুমোদন করা হয় ।

‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণার জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো সারসংক্ষেপে বলা হয়, বাঙালির মুক্তির আন্দোলনকে শ্বাসরোধ করতে ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ রাতে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের সেই অভিযানে ২৫ মার্চ রাতের প্রথম প্রহরে ঢাকায় চালানো হয় গণহত্যা। পৃথিবীর জঘন্যতম এ হত্যার যাতে কোনো সাক্ষী না থাকে, সে কারণে বিদেশি সাংবাদিকদের হোটেলে বন্দি করে রাখা হয়। ২৬ মার্চ তাদের বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান।

নয় মাসের যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান এবং ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। বাংলাদেশ নামের একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।

২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নানা কর্মসূচির কথা জানিয়ে ২৩ মার্চ সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক জানান, এদিন সকাল সাড়ে ১০ টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ সংলগ্ন স্থানে ‘রক্তাক্ত ২৫ শে মার্চ: গণহত্যা ইতিবৃত্ত’ শিরোনামে আলোক চিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি জেলা, উপজেলায় আলোচনা সভা ও গণহত্যা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ‘গণহত্যা দিবস’ পালন করা হবে।

দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমের এক প্রশ্নের জবাবে আ. ক. ম মোজাম্মেল হক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবে ৯ ডিসেম্বর গণহত্যা দিবস পালিত হয়ে থাকে।এদিন গণহত্যা দিবস পালনের পেছনে তেমন কোনো ইতিহাস নেই। তাই ৯ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস পালন করা উচিত। এ সংক্রান্ত প্রস্তাব নিয়ে চলতি মাসেই (মার্চ) জাতিসংঘকে চিঠি দেওয়া হবে। ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিকভাবে কেন গণহত্যা দিবস পালন করা উচিত, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ নিয়ে সমস্ত তথ্য-উপাত্ত, যুক্তি উপস্থাপনে ডকুমেন্টস তৈরি করেছে।

তবে, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের তথ্য নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের নিউইর্য়কে জাতিসংঘ সদর দফতরে এবং জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের মিশনগুলো যাতে দিবসটি বিশেষভাবে পালন করতে পারে, সেজন্য মিশনগুলোতে তথ্য-উপাত্ত পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী জানান, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস এবং একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মতোই ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস পালিত হবে। এটা জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়েছে। এবারই যেহেতু প্রথমবারের মতো পালিত হবে দিবসটি তাই এই অল্প সময়ের মধ্যে হয়তো অনেক রাজনৈতিক দলের পক্ষে কর্মসূচি হাতে নেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। তবে ভবিষ্যতে অন্যান্য জাতীয় দিবসের মতোই গণহত্যা দিবসও দলমত নির্বিশেষ সবাই পালন করবে বলে আশাবাদী তিনি।

স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর গণহত্যা দিবস পালনের উদ্যোগ দেরিতে হয়েছে স্বীকার করে দ্য রিপোর্টের আরেক প্রশ্নের জবাবে মোজাম্মেল হক বলেছেন, স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর জিয়াউর রহমান, এরশাদ এবং খালেদা জিয়া ক্ষমতায় ছিলেন। তারা এটার উদ্যোগ নেইনি। বলতে পারেন, আপনারা তো কয়েবার ক্ষমতায় তাহলে দেরি কেন? হ্যাঁ- আমরা আগে দুই বার এবং বর্তমানে ক্ষমতায় আছি। আগের দু’বার বঙ্গবন্ধু হত্যকাণ্ডের বিচার এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারটি আমাদের সামনে ছিল। আমরা এটা সম্পন্ন করেছি। দেরিতে হলেও আমরা ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। না হওয়ার চেয়ে তো হওয়া ভাল, তাই না?

কি ঘটেছিল সেদিন মধ্যরাতে

১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানি জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় রাজনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। সৃষ্ট এই রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের প্রক্রিয়া চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নাম দিয়ে ২৫ মার্চ মধ্যরাতে ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলসহ স্বাধীনতাকামী নিরস্ত্র, নিরীহ বাঙালি বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা চালায়। একই ঘটনা ঘটে দেশের অন্যান্য এলাকাতেও।

অস্ট্রেলিয়ার ‘সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’ পত্রিকার ভাষ্যমতে শুধুমাত্র পঁচিশে মার্চ রাতেই বাংলাদেশে প্রায় এক লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল, যা গণহত্যার ইতিহাসে এক জঘন্যতম ভয়াবহ ঘটনা। পরবর্তী নয় মাসে একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার লক্ষ্যে ৩০ লাখ নিরাপরাধ নারী-পুরুষ-শিশুকে হত্যার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা পূর্ণতা দিয়েছিল সেই বর্বর ইতিহাসকে।

এই গণহত্যার স্বীকৃতি খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেও রয়েছে। পূর্ব পাকিস্তনের সঙ্কট সম্পর্কে যে শ্বেতপত্র পাকিস্তানি সরকার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রকাশ করেছিল, তাতে বলা হয়, ‘১৯৭১ সালের পয়লা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত এক লাখেরও বেশি মানুষের জীবননাশ হয়েছিল।’

সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের আগে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং শেষ শত্রু বিদায় না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।

বঙ্গবন্ধুর এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালিরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র লড়াই শেষে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ণ বিজয় অর্জন করে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের।

বিভিন্ন সংগঠনের নানা কর্মসূচি

সারাদেশে সভা, সমাবেশ, র‌্যালি, আলোকচিত্র প্রদশর্নীসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালন করার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ সকল সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী ও দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে পৃথক দুটি জনসভা অনুষ্ঠিত হবে এদিন। বিকেল ৩টায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে রাজধানীর লালবাগ আজাদ মাঠে এবং একই সময়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মিরপুর বাংলা কলেজ মাঠে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে।

শাজাহান খানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার আন্দোলন ও শ্রমিক কর্মচারি পেশাজীবী মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদ যৌথভাবে ২৫ মার্চ বিকেল ৩টায় রাজধানীর শাহবাগস্থ জাতীয় জাদুঘরের সামনে আলোকচিত্র প্রদর্শনী এবং মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, গণসংগীত ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে।

এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে ২৫ মার্চ বেলা ১১টায় মিরপুর বধ্যভূমিতে এবং ৩০ মার্চ যশোরের চুকনগরে সমাবেশে করবে ১৪ দল। আর ২৫ মার্চ বিকেল ৩টায় দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পাটি।

৩০লাখ বৃক্ষরোপণ করবে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি

২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের দাবি জানিয়ে আসছিল একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির শুক্রবার (২৪ মার্চ) ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘৪৭ তম গণহত্যা দিবসে ৩০ লাখ শহীদের স্মৃতি চিরসবুজ করে রাখার জন্য ৩০ লক্ষ বৃক্ষরোপণ করা হবে। আগামীকাল (২৫ মার্চ) বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ২৫টি বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন।’

বৃক্ষরোপণের মতো কর্মসূচির যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘এ কর্মসূচির মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম দেশে স্বাধীনতার সংগ্রামে শহীদদের দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণে বিপন্ন পৃথিবীকে রক্ষায় অংশ নেবে।’

২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনে সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই দিবস পালনের মাধ্যমে দেশে ও দেশের বাইরে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতকারীদের অপচেষ্টা রোধ করা সম্ভব হবে। এতে যেমন নতুন প্রজম্মের আত্মপরিচয়ের সংকট মোচন হবে, তেমনি ধর্মনিরপেক্ষ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিকে যে চরম মূল্য দিতে হয়েছে তা তারা জানতে পারবে।’

সূত্র: দ্য রিপোর্ট/কেএ