প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে ময়মনসিংহ পরিণত হয়েছিল উৎসবের নগরীতে

ব্রহ্মপুত্র নদ বিধৌত দেশের পুরাতন নগরীগুলোর অন্যতম ময়মনসিংহ আজ এক উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার জনসমাবেশে যোগদিতে এই অঞ্চলের উৎসুক জনতার ঢল নামে ময়মনসিংহে। জনতা সকাল থেকে রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল ও লঞ্চ ঘাট থেকে নানা রঙের ব্যানার প্লাকার্ড, ফেস্টুন নিয়ে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নামে নানা শ্লোগান দিতে দিতে মযমনসিংহ সার্কিট হাউস মাঠে জনসমাবেশ স্থলে আসেন। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল প্রাণপ্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখা এবং তার বক্তব্য শোনা। ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর শেখ হাসিনা এই একই স্থানে দলের জনসমাবেশ ভাষণ দিয়েছিলেন। দীর্ঘ পাচঁ বছর পর তিনি আবার সেই একই স্থানে জনসমাবেশে ভাষণ দিতে আসেন। ময়মনসিংহ জেলা ও নগর আওয়ামী লীগ নগরীর সাকির্ট হাউজ মাঠে এই জনসমাবেশের আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সমগ্র ময়মনসিংহ সেজেছে বণার্ঢ্য সাজে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে নগরীর সড়কে অসংখ্য তোরণ নির্মাণ করা হয়। নানা রঙের ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে যায় নগরী। সর্বস্তরের জনতা এবং আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা উৎসব মুখর পরিবেশে স্লোগান দিতে দিতে ও ড্রাম পিটিয়ে শেখ হাসিনার সমাবেশে যোগ দেন। শুধু ময়মনসিংহেরই নয় আশেপাশের সকল অঞ্চলের আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা এই সমাবেশে যোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশ উপলক্ষে আজ ভোর থেকে হাজার হাজার লোক সমাবেশ স্থলে আসতে থাকে এবং কয়েক ঘন্টার মধ্যে সমাবেশ স্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। সাকির্ট হাউজ মাঠ এবং আশপাশের সকল সড়ক ও খালি স্থান সমূহ মানুষে ভরে গিয়ে ময়মনসিংহ নগরী একটি বিশাল জনসমূদ্রে পরিনত হয়। সাকির্ট হাউজ মাঠে নৌকার আদলে মঞ্চ তৈরি করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা ২টা ৫০ মিনিটে সমাবেশ স্থলে এসে পৌঁছুলে লাখো জনতা তাকে করতালি দিয়ে স্বাগত জানান।
এর আগে সকাল থেকে নারী পুরুষসহ সাধারণ মানুষ ও দলীয় সমর্থকরা বাদ্য বাজিয়ে নানা রঙের টি শার্ট পরে মাথায় ক্যাপ লাগিয়ে দলীয় নির্বাচনী প্রতীক নৌকা এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা নিয়ে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগান দিতে দিতে মিছিল করে সমাবেশ স্থলে আসতে থাকেন। নারীরা একই রঙের শাড়ি পরে খন্ড খন্ড মিছিল করে হাস্যোজ্জল মুখে সমাবেশ স্থলের প্রবেশ করেন।
নগরীর বিভিন্ন সড়কে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে সুসজ্জিত তোরণ নির্মাণ ও ব্যানার টানানো হয়। এ সব তোরণে প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের ছবি শোভা পায়। নানা রঙের ব্যানার ফেস্টুন ও পেস্টার দিয়ে নগরী সাজানো হয়।
ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও আশপাশের এলাকা থেকে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতা-কর্মী রিজার্ভ বাস, ট্রেন, পিকআপ, মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন এবং অনেককে পায়ে হেঁটে সমাবেশে যোগ দিতে দেখা গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যোগ দিতে জনগণের সুবিধার্তে গফরগাঁও-ময়মনসিংহ, নান্দাইল-ময়মনসিংহ, দেওয়ানগঞ্জ বাজার-জামালপুর-ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ, অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান স্টেশন-ময়মনসিংহ, গৌরীপুর-ময়মনসিংহ, ঈশ্বরগঞ্জ-ময়মনসিংহ এবং জারিয়া জাঞ্জাইল-ময়মনসিংহ রুটে স্পেশাল ট্রেন চলাচল করে।
উপচে পড়া যাত্রী নিয়ে সব ট্রেনই ময়মনসিংহ স্টেশনে এসে পৌঁছায়। প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যোগ দিতে শত শত মানুষ ট্রেনের ছাদে উঠে যাতায়াত করে সমাবেশস্থলে আসতে থাকে।
নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলা থেকে আসা একদল লোক জানান, সামনের সারিতে নিজেদের জায়গা নিশ্চিত করতে ভোরের দিকে রওনা হয়ে তাড়াতাড়ি অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌঁছেছেন। তারা বলেন, তারা আশঙ্কা করেছিলেন, দেরি করলে অনুষ্ঠানস্থলে প্রচুর ভিড়ের কারণে প্রবেশ করতে পারবেন না।
জনসভার ময়দানে উপস্থিত জনতাকে উৎসাহিত করার জন্য, স্থানীয় শিল্পীরা সকাল থেকে আওয়ামী লীগ নেতারা সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার আগ পর্যন্ত মঞ্চে সংগীত পরিবেশন করেন।
আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নগরীর রামবাবু রোড এলাকায় একরঙা শাড়ী পরা নারীদের জনসভায় যোগ দিতে সমবেত হতে দেখা গেছে। তাদের একজন শামীমা সুলতানা বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে দেখার জন্য আমরা কয়েকদিন ধরে অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম। আজ সকাল থেকেই আমাদের এলাকার নারীরা জনসভায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন।
এছাড়া সকাল ১০টার দিকে স্টেশন রোড এলাকার সার্কিট হাউস মাঠের দিকে একদল যুবককে হেঁটে যেতে দেখা যায়।
সকাল সোয়া ১১টার দিকে একরঙা টি-শার্ট পরা কর্মীরা মিছিল সহকারে শহরের গাঙ্গিনার পাড় এলাকা দিয়ে সমাবেশস্থলের দিকে যেতে দেখা যায়।
সকাল থেকে পাটগুদাম, কালীবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে একই ধরণের চিত্র দেখা গেছে।
নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মী বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল সকাল ৯টার মধ্যে মিছিল নিয়ে নগরীতে সার্কিট হাউস মাঠের সমাবেশস্থলে প্রবেশ করা।