ফ্লোর প্রাইস থেকে পুঁজিবাজারকে বের হতে হবে

পুঁজিবাজার: বর্তমান পুঁজিবাজারের অবস্থা দুঃখজনক। একটা রেগুলেশন দিয়ে রাখা হয়েছে ফ্লোর প্রাইস। এই ফ্লোর প্রাইস থাকা মানে পুঁজিবাজার অসুস্থ। সুস্থ হলে কেন আপনি ফ্লোর প্রাইস দিবেন। আপনি যখন অসুস্থ হবেন ট্রিটমেন্ট করেন। অসুস্থ মার্কেটে বিনিয়োগকারী আসবে না।

আপনার সর্দি হয়েছে, তিন দিনের ওষুধ খাবেন। এই ওষুধ যদি আপনি ছয় মাস ব্যবহার করেন, তখন মানুষ মনে করবে আপনার ক্যান্সার হয়ে গেছে। এই ফ্লোর প্রাইস এতদিন কন্টিনিউ করাতে লোকাল এবং ইন্টারন্যাশনাল সবার মনের মধ্যে একটা ভয় ঢুকে গেছে। বাংলাদেশের পুঁজিবাজার অসুস্থ। আমি মনে করি এখান থেকে বের হয়ে আসা উচিৎ।

এমন রেগুলেশন দেওয়া উচিৎ না যেটাতে মানুষের মধ্যে ভয় কাজ করবে। শেয়ার মার্কেট টা কি? যেখানে দাম বাড়বে-কমবে। এটাকে মেনে নিতে হবে। যে বিনিয়োগ করছে তাকে এটা মেনেই বিনিয়োগ করতে হবে। শেয়ারের দাম বাড়বে কমবে। আপনি স্পেসিফিক দুই একটা আইটেমে ফ্লোর প্রাইস দিতে পারেন। পুরা মার্কেটের মধ্যে ৭৮% প্রোডাক্ট এর উপরে ফ্লোর প্রাইস। তাহলে আর মার্কেটে ট্রেড হবে না।

মনে করেন আপনি একজন বিনিয়োগকারী। আপনি যে শেয়ার কিনেছেন, সেগুলো ফ্লোর প্রাইসে পড়ে আছে। আমি সেটা কিনতে চাই। আমি এই দামে শেয়ার কিনবো না। এর চেয়ে পাঁচ টাকা কমে কিনবো। আপনি এর নিচে বিক্রি করতে পারছেন না। কারণ ফ্লোর প্রাইস দেওয়া আছে। তাহলে আপনি শেয়ার বেচতে পারছেন না। আপনার টাকার খুব দরকার। আপনি অসুস্থ, আপনার মা অসুস্থ তার ট্রিটমেন্ট করাবেন। আপনি টাকাটা পাচ্ছেন না। আপনার এখন টাকার দরকার লস লাভের দিকে আপনি তাকাচ্ছেন না। কারণ আপনার দরকার টাকা। শেয়ার বিক্রি করে ট্রিটমেন্ট করাবেন। যে ক্রেতা তার সাথে আপনার শেয়ার প্রাইস ম্যাচ হচ্ছে না। কারণ আপনি ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছেন। আপনি ৬০ টাকার নিচে বিক্রি করতে পারছেন না। বলাই আছে ৬০ টাকার নিচে শেয়ার এর দাম কমতে দিবে না। বিএসইসি বলছে ফ্লোর প্রাইস ৬০ টাকা। ৫৫ টাকা হলে বিক্রি হয়ে যেত। আপনি শেয়ারটি বিক্রি করতে পারছেন না। আপনি যে প্রয়োজনে শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করছেন, যখন চাইবেন তখন টাকাটা রিলিজ করতে পারবেন। সেটা আপনি করতে পারছেন না। টাকাটা আটকে আছে। এটা একটা সতর্কবানী। আমি বারবার বলছি আমাদের যারা নীতি নির্ধারকরা আছেন। আপনারা অবশ্যই প্রয়োজনে ফ্লোর প্রাইস দিবেন। কিন্তু এটা দির্ঘ সময়ের জন্য না। রেগুলেশন এতদিন কন্টিনিউ করা ঠিক না। ৭ /১০/ ১৫ দিন ঠিক আছে এর থেকে বেশি হলে, তখন মনে হয় রোগটা অনেক বড়। তখন ভয় চলে আসে, এ রোগ এত বেশি যে এর সাথে আমি চলবো কিনা?

আবার ইলেকশনের আগে কিছু লোক টাকা ক্যাশ করে। ইলেকশনের আগে মার্কেটের প্রাইস ড্রপ করতে পারে। আমরা ধারণা করছি, আইটেম ওয়াইজ কিছু প্রোডাক্টের অবস্থা ভালো। ওভারঅল মার্কেটের অবস্থা বেশি ভালো বলে আমার মনে হচ্ছে না। যদি মার্কেটের ফ্লোর প্রাইস উঠে যায়, আমার ধারনা মার্কেটে সূচক পড়ে যাবে। ধরেন আপনি ফ্লোর প্রাইসে পড়ে আছেন, আজীবন কি শেয়ার এখানে বসে থাকবে? কোন লেনদেন হবে না? আমার ধারণা সূচক পড়ে যাবে তাই বলে দীর্ঘদিন আটকে রাখা ঠিক না। শেয়ার মার্কেটে ফেয়ার প্লে হবে, আপনি বিক্রি করবেন আমি কিনব। ধরেন একটা মোবাইল, আমি বললাম এটা ১০০ টাকার নিচে বিক্রি করা যাবে না। আপনি ক্রেতা, বললেন ৮০ টাকার উপরে কিনব না। সরকার বলল যে ১০০ টাকার নিচে বিক্রি করা যাবে না । তাহলে কি কেনাবেচা হবে না? বেচাকেনা না হলে মার্কেটে ক্রেতা বিক্রেতার সাথে কোন কাজ নেই। দাম পড়লেও আমি মনে করি এটা নিয়ে চিন্তা করা দরকার। এই জায়গায় আসলো কেন? সেটা নিয়ে ভাবা দরকার। আজ ফ্লোর প্রাইস দিতে হলো কেন? এই জায়গায় আসলো কারণটা কি? এটা নিয়ে চিন্তা করা দরকার। প্রাইস অতিরিক্ত আপ হয়ে গেছে। শেয়ারের দাম ৫০ টাকা থাকা দরকার। সেটা অযথা ১০০ টাকা হয়ে গেছে। তাহলে ১০০ টাকা হল কিভাবে? এটার দাম ৫০ টাকা থাকার কথা। এখন যদি বলেন মামুন সাহেব বোকা, ১০০ টাকায় শেয়ার কিনেছে। তাহলে মামুন সাহেব সাফার করুক। ফ্লোর প্রাইস তুলে দেন। আমি তো বোকা আমি সাফার করি। আমি যদি না বুঝে ১০০ টাকা দিয়ে শেয়ার কিনি সেটা তো আমার ফল্ট। এখন আমার শেয়ার বিক্রিতেও বাধা দেয়া হচ্ছে। আমি এখন লস করে ৮০ টাকায় বিক্রি করে দিবো। সেই সুযোগ আপনি আমাকে দিচ্ছেন না। এটা কেন করছেন? তা আমি জানিনা। এটা রেগুলেটর ভালো বুঝবেন। দীর্ঘদিন ধরে ফ্লোর প্রাইসে আটকে রাখা আমি মনে করি ঠিক হচ্ছে না।

প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স: এখন এলসি করা যাচ্ছে না। একটা এলসি বিজনেস হলেই ইন্সুরেন্স বাড়ে। এলসি নাই বিজনেস একটু খারাপ। অন্যান্য ইন্সুরেন্স কোম্পানির তুলনায় আমাদের কোম্পানি আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো। আমাদের রেভিনিউ গত বছর কমেনি। আমরা যে গ্রোথ আশা করেছিলাম ওই গ্রোথটা হয়নি। আমি বলবো না যে রেভিনিউ কমে গেছে। রেভিনিউ গত বছরের মতই আছে। কারণ যেহেতু এলসি কমে গেছে। এলসি না হলে ইন্স্যুরেন্স হবে না। ইন্স্যুরেন্স না হলে প্রিমিয়াম পাব না। নতুন ফ্যাক্টরি না হলে ইন্স্যুরেন্স হবে না। দিনশেষে সব মিলে অবস্থা ভালো। গ্রোথ ওই ভাবে হয়নি। আশা করি ইনশাআল্লাহ ভালো ডেভিডেন্ট দিবো।

শাখাওয়াত হোসেন মামুন
ভাইস চেয়ারম্যান
ভাইয়া গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজ